শাহাদাত হোসেন
তবু তোমায় ভুলে যাইনি
শেষ কবে যেনো কথা হয়েছিল মনে নেই
তবে তোমায় নিয়ে আজ অবধি ঘুমের দেশে যাওয়া হয়নি,
স্বপ্নকে আলিঙ্গন করে ছোঁয়া হয়নি!
অথচ নিষ্ঠুরতার বেড়াজালে জীবনের সন্ধিবিচ্ছেদ এ-কালে
তোমার কথা মনে করে এখনো বোধ হয় একশো রজনী-গন্ধা ফুল-শয্যায় নেতিয়ে পড়ে!
আজ-কাল আমিও হুট করে নেতিয়ে পড়ি
মেঘেদের কাছে যে উড়ন্ত চিঠি ভেসে গিয়েছিল
সেটা বোধ হয় অন্য কেউ পেয়ে গেছে !
তোমার সামনে দাঁড়িয়ে সম্মুখ দরজায় বার-বার নিয়ম করে মাথা ঝুঁকেছি,
অথচ তুমি এই নেতিয়ে পড়া মস্তিষ্কের আত্মহনন বুঝতে সক্ষম হওনি!
তোমার কথা ভেবে চাঁদনী প্রসর রাতে
ঘুমগুলো পালিয়ে ছিল
অথচ তুমি ঘুমেদের কাছে চলে গেলে
একটাবার খবর নাওনি আমি কোথায় আছি!
তুমি ভালো থেকো প্রিয়
এ শহরে অশনী সংকেত আমারি থাক,
তবু তোমার নাম করে রোজ একশো রজনী-গন্ধা ফুল-শয্যায় নেতিয়ে পড়ুক !
................................................................................................
হয়তো ভুলে যাবে
হয়তো ভুলে যাবে আমাকেও একদিন,
গভীর লালনে অন্যপথে হেঁটে যাবে হঠাৎ করে মুষ্টিবদ্ধ আলিঙ্গনে ধ্বংস এনে!
হয়তো ভুলে যাবে একদিন আমার লেখা শেষ পঙক্তি,
ভুলে যাবে রেল-লাইনের কার্নিশ ধরে হাঁটা শেষ বিকালের প্রতিশ্রুতি
কিংবা কবিতার কথায় প্রেম নিবেদন করা সবগুলো স্মৃতি !
হয়তো মুছে যাবে আমার নামে লেখা দেয়াল জুড়ে প্রেমের যতো চিহ্ন,
সম্মুখে এসে মুখ লুকিয়ে-
হয়ে যাবে একদিন তুমি ভিন্ন!
হয়তো জৌৎস্নার আলোয় মাখামাখি করে তোমার জীবন হবে ধন্য,
অন্ধকার রাতে ঘোর অমাবস্যায় জড়িয়ে- আমার মন করে দিবে ক্ষুণ্ণ !
................................................................................................
খুঁজছি বুকের স্বপ্নধরায়
খুঁজছি তোমার গভীর জল
কোথায় গেলে পাবো অতল,
কোথায় তোমার প্রবল হাসি
কোথায় পাবো প্রেমের বাঁশি!
কোথায় তোমার বিশাল আকাশ
মরুর বুকে হিমেল বাতাস,
কোথায় তোমার চোখের জল
কোথায় গেলে পাবো অতল!
কোথায় বলো নীলচে আকাশ
জৌৎস্নামেখে হাতটা বাড়াস,
কোথায় বলো পাবো তোমায়
খুঁজছি বুকের স্বপ্নধরায় !
................................................................................................
অথচ তুমি জানোনি
দেয়াল জুড়ে বিষাদ ছিল অথচ তুমি জানোনি,
আমি মাসকে মাস,দিনকে দিন তোমায় খুঁজেছি
অথচ তুমি জানাও নি!
হয়তো তুমি চাইলেই পারতে ছুঁয়ে দিতে মেঘবর্ণ কিংবা সুন্দরের পাঁপড়ি,
হয়তো তুমি চাইলেই পারতে জৌৎস্নার আলোয় হাত রাখতে!
তোমার স্পর্শহীনতায় নিয়ম করে ডিপ্রেশনে ক্রান্তি যত
অথচ তুমি চাইলেই পারতে মুছে দিতে সব ক্ষত !
তোমার বুকে মাথা রাখবো বলেই স্বপ্নের নীল ছুঁই,
অথচ তুমি চাইলেই বলতে পারতে বুকের মানুষটা কই !
তুমি বলোনি,তুমি খোঁজনি
হারিয়ে যাওয়া মেঘে হাত দাওনি,
অথচ তুমি চাইলেই পারতে আমায় খুঁজতে!
দীর্ঘরজনী তৃষ্ণা আমার তোমায় খুঁজে খুুঁজে,
অথচ তুমি চাইলেই পারতে আমায় বুঝতে !
................................................................................................
তুমিহীনা ক্ষত
তোমার হারিয়ে যাওয়াই স্বভাব
আমার থাকছে জুড়ে অভাব,
তোমার দীঘল কালো চুল
থাকছে কানে দূল,
আমি খুঁজি তোমায় রোজ
তুমি নাও নি আমার খোঁজ!
তোমার বৃষ্টিপড়া দিন
আমার থাকলো জুড়ে ঋণ,
তুমি হিসাব কষো কত
আমার থাকছে বুকে ক্ষত!
................................................................................................
শূন্যতাদের দখলে স্বপ্ন
এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতেই হাঁপিয়ে পড়ি
মেঘের দিকে তাকাতে গেলেই ভেঙে পড়ি
স্বপ্ন কতো দেখবো বলেই হেঁটে চলি
তবু কতো ভাঙ্গন বুকে ইচ্ছে করি !
একটু আকাশ দেখবো বলেই উপরে উঠা
মেঘের কাছে যাবো বলেই বেড়ে উঠা,
স্বপ্ন কতো হাত ফসকেই হারিয়ে গেল
চোখের কোণায় জলের আভাষ ছূঁয়ে গেল!
কোথায় বলো নীল আকাশী প্রেমের মানুষ
ইচ্ছে করেই তাকে খুঁজে উড়াই ফানুষ,
কোথায় বলো খোঁজে পাবো মনের মানুষ
মানুষ নামক এ শহরে উড়ছে কতো রঙিন ফানুশ !
কোথায় পাবো খুঁজে বলো সোনালী দিন
ইচ্ছেরা সব লেখার মাঝেই থাকছে রঙিন,
কোথায় বলো খুঁজে পাবো শুদ্ধ হাসি
মানুষগুলো গোপন দাবায় বাঁজায় বাঁশি !
নিজের ভেতর রোজ কতোবার
হুমড়ি খেয়ে ঝুঁকে পড়ি,
নিজের ব্যাথায় গোপন আভায়-
রোজ কতোবার স্বপ্ন গড়ি !
রোজ কতোবার বেলীফিলের গন্ধ শুকে ফুলের আভাষ খুঁজে বেড়াই,
তুমিও কি আর বুঝবে বলো-
রোজ কতোবার স্বপ্ন খুঁজে হাতটা বাড়াই !
................................................................................................
কেউ নেই
পাশ কাটিয়ে হারিয়ে গেল কতো কিছু
নীলের জৌৎস্না, সুভাষিত ফুল কিংবা হিমেল বাতাস
কেউ নেই! আছে শূন্যতা আর শূন্যতার আকাশে ভর করা বিশাল কালো মেঘ!
ইচ্ছেরাও ডুবে যায়,স্বপ্ন হারিয়ে তৃষ্ণার জল
কোথায় গেলে পাবো বলো গভীরতম অতল,
কোথায় বলো নীলের বুকে জৌৎস্নারা সব আঁকে
কোথায় গেলে হাসবে জীবন থাকবোনা রোগ শোকে !
কোথায় বলো শিউলী-জবা গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ
বিচ্ছেদেরই আলিঙ্গেনে তীব্র অভিমান,
থাকছে কতো ক্ষত জমা গভীরতম খাঁদ
তুমি কি আর বুঝবে সকল আঘাত পাওয়া স্বাদ !
হারিয়ে গেলো কাছের কতো প্রিয় মানুষ
আজকে না হয় শূনতাতে উড়াই ফানুশ,
ইচ্ছে হলে মেঘের খামে চিঠি দিও
স্বপ্নদেখা আকাশটা না হয় কেঁড়ে নিও!
বিচ্ছেদেরই তীব্র জলে জ্বলছি একা
এ শহরে হারিয়ে যাওয়াই সজীবতা,
তাই যদি হয় কষ্ট না হয় ভুলে যাবো
জলের আকার ধরতে গিয়েই ধোঁকা খাবো !
................................................................................................
আর্তনাদের ফানুশ
আমার খুব কাছের অনেক প্রিয় মানুষ ছিল
যারা নিত্যনতুন ভঙ্গিমাতে হারিয়ে গিয়েছিল,
আমার খুব গভীরতম আপন মানুষ ছিল
যাদের উষ্ণ ছোঁয়ায় পরশ মেখে হৃদয় ভেঙেছিল !
আমার খুব ইচ্ছে-জমা স্বপ্নতরী ছিল
বৃষ্টি-বাদল মেঘের ক্ষণে হৃদয় ভেঙ্গেছিল,
আমার খুব ভেতর জুড়ে প্রেমের রঙে গাঁথা
তাই-তো কতো ভাঙ্গন এসে করলো নীরবতা!
থমকে যাওয়া পথের বাঁকে স্মৃতির জমা ধূলো
জীবন থেকে হারিয়ে গেল নীলের জৌৎস্নাগুলো,
হারিয়ে গেলো কতো আপন প্রিয় কতো মানুষ
তাদের কথা ভেবে উড়াই আর্তনাদের ফানুশ !
................................................................................................
হে আমার বিষন্ন সুন্দরী
হে অনন্য সুন্দরী
চোখের এই ছন্দপতনে কোন সে মায়ার টান,
কেনো বার বার এসে ভেতরটা কুঁড়ে খাও
কেনোই-বা ইচ্ছে করেই আমার দিকে ফিরে তাকাও!
কেনো বলো অনন্য সুন্দরী-
কেনো ডুবে যাই আমি তোমার নিকটস্থ প্রেম কারাগারে,
কেনো তোমার মায়ার স্পর্শে মেঘডুবি
কিংবা চোখের কোণে কাজল লাগা স্বপ্নতরী!
হে আমার বিষন্ন সুন্দরী
দু'চোখে এতো মায়া এঁকে কেনো ডুবাও,
কেনোই বা বার বার চোখ তুলে তাকাও !
হে আমার বিষন্ন সুন্দরী
কোথায় তোমার চোখের ভাষায় নীলচে ঘূড়ি,
কোথায় বলো চোখের ভেতর গভীর ভাষা
কোথায় বলো অজানা সব শত আশা!
হে আমার অনন্য সুন্দরী
চোখের উপর নীলচে আকাশ মেঘডুবি,
উদাস মনে থাকছে কতো কাব্যকথা
তোমায় দেখে থাকছে কতো গভীরতা,
তোমায় ভেবে নিখিল আকাশ ভাবতে পারি
হে আমার বিষণ্ন সুন্দরী !
................................................................................................
নিভৃত জল
আমি এক তৃষ্ণার্ত মানুষ
পাথর চাপা আর্তনাদে উড়াই কত ফানুশ!
আমি এক স্বপ্নচারী প্রেমের দেয়াল
বুকে ব্যাথা জমছে কতো নাই যে খেয়াল!
আমি এক নিভৃত ভাবের নীরব মানুষ
আমার কাছে নেই যে রঙের রঙিন ফানুশ!
আমি রোজ হেরে যাই কতো ছলে
কতো মানুষ হারিয়ে গেল অন্যদলে!
আমি এক অন্ধকারের পথের পথিক
আমার পথে আলো আসে আত্মঘাতিক,
আমি আজ নীরবতায় গল্প লেখি
কতো স্বপ্ন রোজই ভাঙে তবু কত স্বপ্ন দেখি!
আমার আজ নিভৃত জলে চোখটা ভাসে
চোখটা আমি আড়াল করলে বুকটা আসে
বুকের ভেতর অজানা কতো স্বপ্নচারী
স্বপ্নরেখায় হাঁটতে গেলেই কষ্ট আসে ভারী!
আমার চোখের জল কুড়িয়ে আমি দেখি
জলের আকার ছু্ঁতে গিয়ে গল্প লেখি,
তু্মি কি আর বুঝবে শরীর ঘামছে কেনো
মেঘের ভেতর জলের আকার থাকছে কেনো!
তুমি কি আর বুঝবে চোখের অন্য রেখা
যে চোখেতে থাকছে কত জলের রেখা,
যে চোখেতে অশ্রু জমে হচ্ছে ক্ষত
তুমি কি আর বুঝবে চোখে বৃষ্টি কত !
................................................................................................
কোন মন্তব্য নেই