কবিতায় জাগরণ (জানুয়ারী-জুন ২০১৪)
সম্পাদকীয়
সময়ের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর এ আগুয়ান পথে এক এক
করে যোগ হয় অনেক প্রাপ্তি,
অ-প্রাপ্তি, তৃপ্তি আর
বিতৃষ্ণা। পাওয়া না পাওয়ার অনেক আনন্দ বেদনা নিয়ে পার করলাম ২০১৩। শুরু হলো নতুন
বছর। অনেক আশার দোলনায় দুলে যাওয়ার প্রত্যাশায় ২০১৪ শুরু করেছি।
সব কিছুই সময়ের নখদর্পণে। আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে
ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ….। না, আমরা ভুলতে
পারিনা। ভোলা যায়না। সেই সকল মহান শিহীদদের প্রতি রইল অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভক্তি
ও বিনম্র শ্রদ্ধা।
“বন্ধু” খুব ছোট একটি শব্দ। যার অর্থ ও ব্যাপ্তি বিশ্বজোড়া। “বন্ধু” ছাড়া জীবনের অর্থটা যেন লবন ছাড়া তরকারী। একেবারে পানসে। বন্ধু দিবসে পৃথিবীর সবার সাথে হোক আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব। সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।
কবিতা দেশের কথা বলে। দশের কথা বলে কবিতা জাতির বিবেক। কবিতা প্রেমের কথা দ্রোহের কথা বলে। কালে কালে মহাকালে কবিতাতেই ঘটেছে দেশ-দশ তথা জাতির অন্তরাত্মার জাগরণ। এ প্রত্যাশাতে এবারের কবিতায় জাগরণের আয়োজন। সবশেষে এই সংখ্যাটিতে অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
ম্মানিত পাঠক, সূচীপত্রে কবিদের নামের ১ম অক্ষরের ক্রম অনুসারে সাজানো হলো
১.অমল রায় চৌধুরী – ভারত
২.অমিত বড়ুয়া
৩.অনিন্দ বড়ুয়া
৪.অনিক রায় শুভ
৫.অরুন শীল
৬.আল মুজাহিদী
৭.আনন্দ মোহন রক্ষিত
৮.আখতারুল ইসলাম
৯.আখতার হোসেন
১০.আরিফ চৌধুরী
১১.করুনা আচার্য
১২.কল্যাণী দেব চৌধুরী লিপি
১৩.কোহিনুর শাকি
১৪.কামরুল হাসান বাদল
১৫.খোশনুর
১৬.জাহানারা ইসলাম
১৭.জসীম মেহবুব
১৮.জিন্নাহ চৌধুরী
১৯.ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ
২০.ড. সৈয়দ রনো
২১.ড. সুমিতা ভট্রাচারয্য
২২.দিদার আশরাফি
২৩.তালুকদার হালিম
২৪.তামান্না জলি
২৫.নজরুল ইসলাম সাচী
২৬.নাজিমুদ্দীন শ্যামল
২৭.নির্মলেন্দু গুণ
২৮.নজরুল জাহান
২৯.বদরুন নেসা সাজু
৩০.মহাদেব সাহা
৩১.মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ
৩২.মিজানুর রহমান শামিম
৩৩.মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
৩৪.মোহাম্মদ মিজান উদ্দিন
৩৫.মোহাম্মদ ইমতিয়াজ
৩৬.মোহাম্মদ লতিফুর রহমান
৩৭.মোহাম্মদ আলী সরওয়ার
৩৮.মৃণালিনী চক্রবর্তী
৩৯.মিলন বণিক
৪০.মাঞ্জুর মোহাম্মদ
৪১.ফাহমিদা আমিন
৪২.ফারুক নওয়াজ
৪৩.বিশ্বজিৎ সেন
৪৪.রাশেদ রউফ
৪৫.রমজান আলী মামুন
৪৬.রেজা উদ্দীন স্টালিন
৪৭.রুস্তম আলী হাওলাদার
৪৮.হাবিব সাখায়েত
৪৯.লুলুল বাহার
৫০.লীনা রহমান
৫১.লিটন কুমার চৌধুরী
৫২.লাভলু চক্রবর্তী
৫৩.সাহিদা রহমান মুন্নী
৫৪.সনেট দেব
৫৫.শামিম রুনি টিটন
৫৬.বিদেশী কবিতা অনুবাদ
৫৭.সাক্ষাৎকার
একটু ভালোবাসা
অমল রায় চৌধুরী (ভারত)
কটা দিন আর বসন্তের আঁচলে
ফুকের বুকে ভ্রমর দলের হানা
জ্যোৎস্না ক’দিন যৌবন নিয়ে খেলে
আমাবস্যা আসবেই আছে জানা,
একটি দুটি নবীন মুখের হাসি
সকাল বিকেল মনের ডানা মেলা
ফাগুন দিনেই মাতাল হাওয়ার বাঁশি
জীবন জুড়ে চাওয়া পাওয়ার খেলা,
সময় হরিণ ছুটছে অবিরত
ইচ্ছেগুলোও দুলছে হৃদি গাছে
প্রেম অনুরাগ খোঁজ করবে যত
দুর্যোগ দিন,
তৃষ্ণা বুকের কাছে,
হৃদয় নিয়ে স্রেফ খেলে যাও জুয়া
জুটতেও পারে একটু ভালোবাসা
সহজ তো নয় প্রেমের পানসি বাওয়া
ঢেউ এর মাথায় দুরগামী প্রত্যাশা।
হায়রে হৃদয় তোর কপালেও ভাঁজ
হারালি সুখ ছলাকলার ফাঁদে
ভালোবাসার সাগর পাড়ে আজও
প্রেম পিয়াসি মুখ লুকিয়ে কাঁদে।
মেঘলাপরী
✍️অমিত বড়ুয়া
অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে
বৃষ্টি নামে অল্প
একটু পরে শুরু হবে
মেঘলাপরীর গল্প।
মেঘলাপরী একলা একা
দূর আকাশে থাকতো
বৃষ্টি পাগল একটি ছেলে
মেঘলাপরীকে ডাকতো।
মেঘপরীতো অভিমানী
অনেক অভিমান
মেঘবালকের কোনো কথায়
দিত না সে কান।
ইচ্ছে করেই মেঘপরীটা
কখনো না ঝরতো
মেঘবালকের সঙ্গে নানা
ছলচাতুরি করতো।
বালক তবু মেঘপরীকে
আজও ডেকে যায়
অঝোর ধারার বৃষ্টি হয়ে
আয়রে পরী আয়।
সুখের আধার
✍️অনিন্দ্য বড়ুয়া
ভূ-তত্ত পড়া ছিলো কিছুটা,
জানাছিলো-টেকনো প্লেটের সংঘর্ষেই
জেগে উঠে পৃথিবীর মাটির পাহাড়,
তখনো ছিলো না জানা-তুমি কোন মন্ত্রবলে
অধিকার করে নিলে যমজ তাহার!
পাহাড়ের সানুদেশে হতবাক বসে থেকে
কেটে গেছে কতগুলি বিহ্বল দিন,
অপার রহস্যের হাতছানি দেখে!
কতবার ভেবেছিও,
দেখে আসি একবার-
কম্পিত দুই হাত দুই শৃঙ্গে রেখে
স্বাগত জানালে শেষে নিজ থেকে,
আড়াল দেখাবে বলে যমজ পাহাড়!
রেখেছো নিজের কথা-নিতান্ত ধার্মিক
বিশ্বাসীর মতো,
শৃঙ্গ-চুড়া-উপত্যকা
চিনিয়েছে যেচে! মোমের জমাট দ্রোহ
নবীন শিখার তাপে
শিহরণে শিহরণে গলে পড়ে গেছে!
অধিগত হয়ে গেছে নিমিষেই,
রহস্য-চাদরে ঢাকা অচেনা পাহাড়!
কুয়াশার আবরণসরে গেছে পলকেই,
চির চেনা হয়ে গেছে সুখের আঁধার!
অপেক্ষা
✍️অনিক রায় শুভ
এই শুঞ্ছ-তোমাকে বলছি,
তোমাকে পাওয়ার আশায় মন্টা এমন কেন?
বাতাবি লেবুর খোসার ন্যায় তিতা কস্টে বুক;
ধরফর করে ডুবন্ত খালি কলসির বুদবুদের ন্যায়।।
এই শুঞ্ছ-তোমাকে বলছি,
সূর্যের পরিক্রমায় অন্ধকার যখন নেমে আসে;
মনে হয় শরীরে ধান ফুটে যন্ত্রনার বালুতে,
মনকে বুঝায় অপেক্ষার অবসান হবে সামনে।।
এই শুঞ্ছ-তোমাকে বলছি,
যাকে ডাক প্রাণ-পাখি,
বলি আমার প্রাণ;
সে কেন নিতে আসেনি এখনও আমার ঘ্রাণ।
চলে এসো পাখি আমার যারে বলি প্রাণ,
প্রেম সুধায় চুষে নাও যৌবনের সব ঘ্রাণ।।
একদিন তুমি কলাপাতা ছিলে
✍️অরুণ শীল
ভুলে গেছ কলাপাতা,
শ্যামলী আমার;
কম্পিত চোখের ভাষা চুম্বন আনত।
আমাকে উড়াবে যদি পুরানো আদলে,
তবে কেন ডেকেছিলে ঝড়ের নদীকে?
ভুলে গেছ সোনা ঝরা বসন্তের গান,
অগ্রজ ধমক আর সৈকতের দিন!
তোমার কুশল হোক,
স্বপ্ন হোক ভালো;
পথিক তোমাকে দেখে মহেশ্বর হবে।
আমারও রয়েছে শোক,
অমুক-তমুক লোক
তোমাকে ডাকলো কেন ভুল উচ্চারণে?
আমার ইচ্ছের মাঠে একদিন তুমি-
কলাপাতা ছিলে,
সেটা আর কে কে জানে?
আমার কাঁটার জীবন আষাঢ়ে জোয়ারে
তোমার হারানো চিঠি ভাসিয়ে ফিরাবে।
ভালো থেকো কলাপাতা দিশেহারা দিনে
হয়তো বন্ধুত্বটুকু মনে পড়ে যাবে।
শতাব্দীর হাত ধরে
✍️আল মুজাহিদী
আমি জেগে উঠলাম শতাব্দীর হাত ধরে
হাজার বছর যারা আমার মৃত্যুর পরওয়ানা হাতে ক’রে
ঘুরে বেড়াতো ঐ কাঁটা ঝোপ অন্ধকারে
তারা এখন এখন অন্ধকারের গহ্বরে বিলীন;
তারা আর কোনোদিন আমার সামনে এসে দাঁড়াবে না ।
তারা ফাঁদ পাতবে না এখানে মৃত্যুর
কারণ মৃত্যুর ফাঁদে এখন তাদের-ই দেখো, ওদের
দাঁত আর চোখগুকো চকচক করছিলো
হিংস্র হায়েনার মতো
জীবনের নিগড়ে নেপথ্যে তারা অন্তরীণ।
দেখো,
দেবদারু বৃক্ষ
নিসর্গের বুক চিরে পোড়াদাগচিহ্ন আর কৃষকের
অসংখ্য খামার,
গোলা কেমন বিরাণ পড়ে আছে
চতুর্দিকে কেবল মৃত্যুর খাঁড়া, পাঁচিল, পরিখা
মৃত্যু আর মৃত্যু- শোণিতাক্ত বধ্যভূমি।
ঝাঁপি খোলা সাপ যেন ফোঁস করে উঠে।
কিষাণীর বুকদীর্ণ করা দীর্ঘশ্বাস।
ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলো। নীল কুয়াশার
পথ পেরিয়ে,
পৌষের ঘরের আগুন পোহাতে
পোহাতে কুঠি বয়রার নীলকরদের কলোনি পেরিয়ে-
পঞ্চায়েত সমিতির পাশ দিয়ে ছুটে চল্লাম-ফনিমনসার
ঝোপে জোনাকির আলো।
আঁধারের ঐ খোড়ল থেকে সূর্যচেরা আলো মাথায় করে
একটি কাঠবেড়ালি বেরিয়ে পড়লো সদর রাস্তায়,
পৃথিবীর প্রধান ফটকের সামনে।
অরণ্যানী-কাঁপিয়ে বিশাল…
আমি জেগে উঠলাম শতাব্দীর হাত ধরে।
শুভ কাফনে
✍️আনন্দ মোহন রক্ষিত
জনতার গতিপথ বদলে দিয়েছে শাহবাগ আর প্রেসক্লাব
মানুষের ঠিকানা নিয়েছে বাঁক জনতার স্রোত নিত্যকার ঘর-
সংসার কোনটার প্রতি খেয়াল নেই তাদের, অদম্য উৎসাহে
চলেছে কেবল।
অফিসে মন টেকেনা,শিল্প কারখানায় মেসিন ঘোরেনা,
মন আনচান,
কেবলি তেজিভাব সকাল গড়িয়ে দুপুর, বিকেলের অদৃশ্য হাতছানি
কেবলি টানে ইশারায় অদৃশ্য হাত,ডাকে জামালখাঁ প্রেসক্লাব,
মুঠো তোলা হাত জোরে জোরে ওঠা নামা করে, মনের অজান্তে
ছাতিম তলা কেঁপে ওঠে স্লোগানে-সংগীতে।
শিক্ষার্থী ক্লাসে নাই,শিক্ষকের অবচেতন মন ব্যবধান ঘুচে গেছে
সাম্যের কাতারে সবাই একাকার
জন জোয়ারে প্লাবন ডেকেছে শাহবাগ চত্বরে
নবপ্রজন্ম উঠিছে জাগি নতুন উষার আগে।
যারা দেখেনি বায়ান্নের একুশ, উত্থান ঊনসত্তর আর
একাত্তর
তারাই এখন মুঠোমুঠো আগুন ছড়াচ্ছে মুখের ভাষায়
বাসন্তিক হাওয়ায় জ্বেলেদিয়েছে প্রজন্মের আগুন
লাল-সবুজ আর শুভ্র কাফনে লিখেছে অক্ষয় নাম নতুন প্রজন্ম।
বিজয়
✍️আখতারুল ইসলাম
শত শতদল’ আজ খুশির মিনারে
রৌদ্রে ফোঁটা মুক্তো ছড়ানো দ্বারে।
‘বিজয়’ তুমি জয়ের জননী (গর্ভধারিণী),
অন্তরে ঠাই দেয়া শ্রদ্ধার মনি।
অশ্রু ভরা’রে রেখোনা দুটি চোখে,
তমসাবৃত্ত বিবর্ণ ছবি রেখ না বুকে।
মাসের পর মাস ছিল না যে হাসি,
লক্ষ প্রাণের আর্তচিৎকারেশুনেছিবাঁশি।
কত লাঞ্ছনা,
গঞ্জনা আর অপমান,
বিজয়’ তোমার জন্য দিয়েছি সব বিসর্জন।
অবুঝ মন আজ অনাবিল উচ্ছাসে উদ্ভাসিত,
‘বিজয়’ তোমার ডাক বুঝি-অবিনাশিত।
তুমি উড়াও নিশান মায়ের সম্মান,
বিশ্বের ঘরে ঘরে গাও নতুন গান।
নয়ন তারার চোখে জল
✍️আকতার হোসাইন
নয়নতারাকে বলি,'
মারনাস্ত্র জমা দাও।
অথবা লুকিয়ে রাখো নীলা সাগরের তলে
মায়াহরিণীর গন্ধে সাম্বা হরিণ,
উর্ধ্বশাস ছুটেছে পুরুষ সে হাসে,
জলেও অগ্নিস্রোত,
মৃত্যুলগ্ন পুরুষের দল
নূহের নৌকো ভেবে ভিড় করে হ্যারিকেন-সাম্পানে।
নয়নতারাকে বলি,
নামাও অগ্নিপলক, সূর্য মুষড়ে
পড়ে,
হাওয়ায় অনলদাহ,
পাহাড়ে হাড়ের গান।
নিরস্ত্র উদ্ৰান্ত পুরুষ, বেধড়ক প্রাণপাতে
সফেদ শয্যা হবে ক্লিবের আস্ফালন-ভূমি’
নয়নতারার চোখে জল
‘কামান্ধ মাংসাশী পুরুষ শরীর চিনেছো শুধু,
নারীকে চেনো নি।
শূন্যতায় জলের পান্ডুলিপি
✍️আরিফ চৌধুরী
বুকের মাঝে জেগে উঠে গভীরতম নিঃসঙ্গতা
দীপাবলী রাতে জাগে জোছনা প্রহর
উঠোনে ফোটা রজনীগন্ধার মতন।
শ্রাবণের মধ্যদুপুরে আকাশ মেঘে লুকোচুরি
বুনো বৃষ্টি ঝরে,
স্নিগ্ধতম অনুভূতিতে
অবগাহন করে যন্ত্রণা দীর্ণ জীবন চরিত্র ফিরে পায়। |
দীপাবলী রাতে বুকের গহীনে
হাত দিলে টের পাই জমানো কান্নার ধ্বনি |
কে হায় বেদনা বুঝে না,
শয্যাপাতে দিনযাপনে,
বুকের তৃষ্ণায়।
উঠোন জুড়ে বকুল শাখে পূর্ণিমায় পূর্ণ করে নীলিমা
শূন্যতায় জলের পাণ্ডুলিপি লেখা হয়
মগ্নচৈতন্যের স্মৃতিময় দিনগুলোতে।
যারা ফিরে যায় অজানার দেশে, ফেলে স্মৃতির
পাণ্ডুলিপি
তাদের জন্য লেখা হয় সময়ের জীবন ইতিহাস, অনন্তকাল ধরে।
ও পথে যেও না
✍️করুণা আচার্য্য
মধুমালতি রজনীগন্ধা
কাঞ্চনমতি গোলাপ চম্পা
কত নামে তোমায় ডাকব সখি
পিয়াসিত ভ্রমর গুঞ্জনে |
দিও না সাড়া হয়ে দিশেহারা
মন লোভে তুমি ভুলো না।
ও-পথে তুমি যেও না সখি
ও-পথে তুমি যেও না।
কাঁটা বিধে যদি ধূলায় লুটাও
বাড়িবে শুধু গঞ্জনা
আসিবে না কেহ আপন যারা
বুঝিবে না কেহ বেদনা।
ও-পথে তুমি যেও না সখি
ও-পথে তুমি যেও না।
প্রেম করে তুমি মরিবে সখি ।
বুঝিবে না তার ছলনা
মধু ছাড়া মধুলোভীরা |
বোঝে না কোন রসনা
ও-পথে তুমি যেও না সখি
ও-পথে তুমি যেও না।
স্টেশনে মিলবে দুটি রেল পথ
✍️কল্যাণী দেব চৌধুরী লিপি
মস্তবড় মানুষ তুমি সে কী বিশাল বক্ষ,
বিশাল বাহুর বেষ্টনীতে বানাই আমি কক্ষ।
উধ্বপানে চোখ মেলে চাহি তোমার চাঁদের রাজ্যে,
ভাষাহারা মৌনতায় হারাই না বলা কাব্যে।
আমার কান হয় বদ্ধ,
বুক ত্রিশূলে বিদ্ধ ঝরে রক্ত,
মন হয় রক্তাক্ত। যাদুকর বাজিকর কৌশল
এ কী ছলনা?
তোমার প্রয়োগ যন্ত্রের পাওয়ার
অয়েল আমি,
সে কি বোঝে না। হার মেনেছ
আমার কাছে ভাঙো তোমার দম্ভ।
আমি অতিপ্রাকৃত নই,
আমি মানুষ
আমার চাওয়া পাওয়া,
কামনা-বাসনা
বলা,
শোনা, দেখা, প্রকাশিত আমার মহিমা।
তোমার লুকোচুরিতে আমি হাসি কাঁদি ভাসি,
জ্যোত্সায় বারান্দার চাঁদ আকাশ কথামালা বিলাই।
নক্ষত্রের সাথে মিতালি পাড়ি। প্রবারণা পূর্ণিমার
জ্যোৎস্নায় আমার বিছানা যখন ঝলমল করে,
খোলা দরজায় যখন দশ বিশটি জোনাকি আমার ঘরে
লুকোচুরি খেলে আমি ঘুমোই তোমার বুকে।
আমি যখন দেয়ালে টিকটিকির সাথে কথা বলি,
চলন্ত পাখার ঘুরনিতে শুভদৃষ্টি হয়,
তুমি বিছানায় শুয়ে চশমা চোখে ছটফটিয়ে মরো।।
ভাবনা-চিন্তায় এপাশ ওপাশ করো। আমি ছাদে উঠে
দু’বাহু বাড়িয়ে উঞ্চ আলিঙ্গনে বুকে জড়াই।
ছিড়ি দশ পাঁচটি কাগজ,
বাতাসে উড়োই চিঠি
এরই মধ্যে কলমের কালি শেষ হয়, কলম পাল্টাই।
থাক থাক হবে হবে সব হবে, সব চাওয়ার রেলপথ।
কমলাপুর,
সিলেট স্টেশনে মিলবেই।
বৈরী সময়
✍️কোহিনুর শাকি
বৈরী সময় তৈরী ব্যথা
হৃদয়ের আকুলতাকে ভীষণভাবে আহত করে
সুখের প্রাচীর ভেদ করে দুঃখ
এসে বাসা বাঁধে মনের আঙ্গিনায়
গৃহহারা স্বজনের করুণ আর্তনাদ
প্রস্ফুটিত হয় আকাশে বাতাসে
চরম নিষ্ঠুরতা,
নিমর্মতার ছোয়াঁয়
মানবিকতা আজ লজ্জিত
তছনছ হয়ে যাচ্ছে
সুন্দর সাজানো বাগান
স্বপ্নহীন দু'
চোখের দৃষ্টি
ক্রমশঃ ঝাপসা হয়ে আসে
অশ্রু গড়িয়ে পড়ে প্রতিটি নিঃশ্বাসে
প্রাপ্তী আর প্রত্যাশার মাঝে
তাই বেড়েছে ব্যবধান
চারিদিকে আজ শুনি কেবল
বিষাদের জয়গান।
পোষাক
✍️কামরুল হাসান বাদল
আমাদের পোষাকের আড়ালে
এক একটি ভয়ংকর নেকড়ে,
সুযোগ পেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রতিবেশীর বাড়িতে
ক্ষেতখামার
তছনছ,
ভিটেমাটি উজাড় করে
নগ্ন নৃত্য করে গলিত লাশের ওপর
মানুষের রক্তের দোচায়ালি |
সুরায় স্বাস্থ্যপান চলে সাকীর নিশিরাতে।
আঁধারে লোক জানাজানির আগে নেকড়ে.
ফিরে আসে পোশাকের আড়ালে তার নখ,
থাবা আর ওষ্ঠে লেগে
থাকা রক্ত কখনও কখনও সেঁটে যায়
পোশাকে,আমরা তখন পোষাক বদল করি
আমাদের পোশাক আমাদের নয়
বরং পোশাকের
আড়ালে নিরন্তর নিজেকে ঢেকে রাখি,
নেকড়েটিকে
স্মৃতির কুয়াশা
✍️খোশনূর
কি করে ভুলবো সবুজ ঘাসে শেফালীর আলপনা
কুড়িয়ে দিলে আরো কিছু ফুল আঁচলে ।
মালা না গেঁথে সে ফুল রেখেছি বইয়ের পাতা
আজো সুবাসহীন সেই ফুল কতো কথা,
বললো কুয়াশার পর্দা সরিয়ে
দুচোখে এলো জল শিশির বিন্দু হয়ে
সুস্পষ্ট দেখছি তোমার মুখ মুঠো মুঠো
সূর্য আলোর মাখামাখিতে সৌম্য শীতল হাওয়ায়
অসহিষ্ণু হলো স্মৃতির ঘুমন্ত প্রহর
এ যেনো তুষারে ঢাকা সবুজ বৃক্ষলতা
উত্তাপে নতুন দৃষ্টিতে বিশ্ব দেখা,
অবিরাম উৎকণ্ঠায় ছিলাম
মনে যেনো না পড়ে আর তোমাকে।
অথচ মনে পড়লোই তোমাকে
দূরন্ত সত্য ভালোবাসার দীপ্ততায়।
তুমি কুয়াশার সফেদ ওড়নায় জড়িয়ে ধরলে
কালের কষ্টের যন্ত্রণার দাহ ক্রমেই হলো শীতল |
অবচেতন ভাবে বললাম
এবারের শেফালী ফুল কুড়িয়ে দিলে ।
মালা গেঁথে পরাববা তোমাকে
বুঝলাম কল্পনার ভ্রান্তি
শিশির ছোঁয়া শেফালী টুপটাপ ঝরছে
আমি স্মিত হেসে চোখ মুছলাম।
ভালবাসি
✍️জাহানারা ইসলাম
ভালবাসি রাশি রাশি ফুটন্ত গোলাপের ঝাড়,
ভালবাসি
সাঁঝের বেলা হাসনা হেনার সুবাস,
ভালবাসি
সবুজের কুলে গাঁদা ফুলের হাসি,
ভালবাসি
মুকুলে ছেয়ে যাওয়া আম্রকানন,
ভালবাসি
হুলুদ শরিষার ক্ষেতে মৌমাছির গুঞ্জন,
ভালবাসি
লাউ সিমের মাচায় প্রজাপতির উড়াউড়ি,
ভালবাসি
শীতের সকলে ধোয়া উঠা ভাপা পিঠের সুবাস
ভালবাসি
আকাশের বুকে ভেসে যাওয়া পাখির ঝাঁক
ভালবাসি
বনবনান্তরে নাম না জানা পাখির কূজন।
ভালবাসি
বাওয়ালী বাতাসে ঝড়া পাতার মর্মর ধ্বনি।
ভালবাসি
অবুঝ শিশুর নিষ্পাপ মুখের নির্মল হাসি,
ভালবাসি
নিশিত নিকশ আঁধার রাতে স্রষ্টাকে ভাবতে,
ভালবাসি
যিনি আমাকে ভাবতে শিখিয়েছেন তান গুনগান গাইতে।
ভালবাসি
এই পৃথিবীটাকে আমার আপাতঃ আবাস ভূমি,
পুনঃশ্চ ভাবি,
বৃথাই মায়া মমতায় জড়িয়ে আছি
মায়ময় এই সংসার মাঝে,
চলে যেতে হবে এই আবাস
ছেড়ে অনন্ত পানে।
প্রিয়ার কালো চুল
✍️জসীম মেহবুব
বৃষ্টি এলে ভিজিয়ে দিলে
প্রিয়ার কালো চুল
চুলের ভেজা গন্ধে আমি
ছন্দে করি ভুল।
ছন্দ হলো গন্ধে মাতাল
বন্ধ করি আঁখি
এই দুনিয়ার সকল কিছু
দেয় আমাকে ফাঁকি।
থাক না ফাকি তবুও চাই |
প্রিয়ার চুলের ঘ্রাণ
রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি আমার
ব্যাকুল করে প্রাণ।
ভেজা চুলের নেশায় আমি
উঠছি শুধু ঘেমে
বৃষ্টি তুমি প্রিয়ার চুলে
আবার এসো নেমে ।
কুলের আশায়
✍️জিন্নাহ চৌধুরী
কূলের আশায়
কূল ছেড়েছো
এখন আবার
কূল হারাবার ভয় ?
ফিরবে তুমি
আবার ঘরে
দিনের পরে
সে ঘর আমার নয় !
কূলের আশায়
কূল ছেড়েছো
ভুল করেছো
কূল করেছো ক্ষয় !
প্রেমের কাঙাল
✍️ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ
উজাড় করে বিলিয়ে দিয়েছি হৃদয় চিড়ে,
ভালবাসার টুকরোগুলি বিন্দু বিন্দু করে,
ছড়িয়ে দিয়েছি সবখানে, সকল হৃদয়ে,
প্রতিদানে চেয়েছি এক কণা ভালবাসা।
বিলিয়ে দিয়েছি কাজল ভুরুর গহন বনে,
নূপুর পরা আলতা মাখা রাঙা পায়ে
পাহাড়ি বালার নৃত্যে আর মিষ্টি হাসি রেখায়,
এলোকেশের ঝির ঝির কাঁপনে, মোহিনী সিঁথিতে,
রাঙা ঠোটের মৃদু কাঁপনে, চপল কণ্ঠস্বরে,
চিলেকোঠার আড়াল হতে ক্ষণিক চাহনিতে,
ছাদের কোণে উড়ন্ত ঢেউ খেলা আঁচলে।
প্রেমভরা মন ছড়িয়ে দিয়েছি মালভূমির সরু পথে,
আঙুর বনে সোনালী চুলের ঝিকমিক ঝলকে,
সাগর কূলে বালুবেলায় সুরুপাদের সূর্যস্নানে,
সাহারার নির্মল বালুকায়, সুনীল মরীচিকায়,
নীল নদের পাড়ে, পিরামিড পাদদেশে বেদুইনবালার ভঙ্গীতে,
শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার ফুল
ঝরা পথে
নদীর পাড়ে ডিঙি নৌকায় পর্দার আড়ালে।
বাতাবাহী ভালবাসার মৌমাছিগুলি পাঠিয়ে দিয়েছি
হৃদয়ের খোঁজে, প্রেম-মধু আহরণে অন্তর
ফুলবনে
বার্তা নিয়ে চলে গেছে সে প্রেমের মৌমাছিগুলি,
মনে হয় তারা স্বচ্ছ বাহনে চলে গেছে, প্রতিফলন
ঘটেনি;
তাদের আশায় জীবনের দিনগুলি ধেয়ে চলছে পিছন পানে
শূন্য হৃদয় নিয়ে একা চলি আমি প্রেমের কাঙাল।
গাংচিল
✍️ড.সৈয়দ রনো
বেদনা বিদুর কান্নায় ব্রত
সেদিনের সেই শঙ্খ চিল
উঠানের আস্তিনে ভর করে
উঠান দাঁড়ায়
একাকি দাঁড়ায় ক্লান্ত শরীর
ভাসতে থাকে জীবনের প্রতীক্ষা জীবন স্রোতে।
বাস্তবের জাগ্রত যাতনায়
মধ্যরাতে কল্পনা ঘুমায়
এপাশ ওপাশ ফিরে দরিদ্র দেহ
খসে পড়ে রূপসী জোছনা।
চাঁদের বাসরে
নীলিমার প্রস্ফুটিত হৃদয়
ক্ষত বিক্ষত সুখ জোড়াতালি দেয়
এফোড় ওফোড়
পুনরায় স্বপ্ন দেখে জাগ্রত সকাল
গাংচিল হতে ঘাসফড়িং ডানায় ভর করে
নাচতে থাকে পোয়াতী যৌবন
শব্দহীন সৌকর্যের পুর্ণতায়
স্বপ্ন জাগায় ফেরারী বাতাস
লবনাক্ত ঘোলা জলে
রৌদ্র মেখে দুপুর সাজে
সাজে দুরন্ত কিশোরীর মন।
নিয়তীর কঠিন খেলা
ভাঙ্গা গড়ার তান্ডব চলে
পালা বদলায় গাংচিল।
চিন্তারাশি
✍️ড. সুমিতা ভট্টাচাৰ্য-(ভারত)
আমার অন্তরের অন্তস্থ’লে যে জন বাস করে
যার নির্দেশে আমি কাজ করে যাই
তাঁর উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি না
সারা দিন শুধু নিজের কাজে ব্যস্ত থাকি।
কখনো কোন অলস মুহুর্তে যখন
নিজের কাজে বিশ্লেষণ করি
বিশেষ কোনো কাজ করার জন্য
গর্ব বোধ করি।
তখন আমার অন্তরে তার উপস্থিতি
কে যেন মনে করিয়ে দেয়…
আমি নিজের অহমিকার জন্য
লজ্জা বোধ করি।
আবার কখনো কোন অসাফল্যের জন্য
যখন গ্লানি বোধ করি
তখন প্রশ্ন জাগে মনে…
সত্যি কি বিশেষ কাজগুলো আমি করেছি!
তাহলে গর্ব বোধ বা গ্লানি বোধ
কোনোটাই আমার থাকা উচিত নয়।
এভাবে একটার পর একটা চিন্তা ক্রমান্বয়ে
কালচক্রের মত যায় আর ফিরে আসে
বৃত্তাকারে অবিন্যস্ত চিন্তারাশির মাঝে
আমি কাজ করে যাই!!
শুস্ক বেলাভূমি
✍️দীপালী ভট্টাচার্য
আমি তোমার হৃদয়ের
বেলাভূমিতে
আমার ভালোবাসার
নোঙর ফেলেছিলাম
ভেবেছিলাম দু’একটা
আচঁড় কাটব রক্তাক্ত হবে তোমার
হৃদয় নামক হৃদপিন্ড
সিক্ত হবে তোমার।
অলিন্দ-নিলয় ধমনী
শিরা-উপশিরা
কিন্তু কেন জানি
ওসব কিছুই হলো না
কেবল আমার নোঙর শুল্ক বালিতে
মুখ থুবড়ে পড়ে রইলো।
হবে হয়ত এ আমার
ভোঁতা নোঙরের অক্ষমতা
নয়তো বা তোমার হৃদয়ের শুষ্ক বেলাভূমি
ধরে রাখতে পারেনি।
আমার অক্ষমতা সম্পন্ন
নোঙরটাকে
আমি আজও বুঝিনি
কোনটা সত্যিকার অর্থে সত্য
আমার নোঙর নাকি।
তোমার বালুময় হৃদয় বেলাভূমি।
লজ্জা কী নাই তার
✍️দিদার আশরাফী
পাথরের চোখে বৃষ্টি
সূর্যের চোখে কান্না
চাঁদের চোখে এক মুটো আগুন
পথ হারিয়ে থমকে দাঁড়ায় পথিক
কাকাতুয়া আর শালিকের
বজ্রকণ্ঠ স্লোগানে মুখ লুকায়
চশমখোর ও বর্ণচোরা
বৃষ্টি-কান্না-আগুন এবং প্রেম
বিধাতার স্বর্গীয় শক্তি
মোহনার প্রেমে খাদক ছড়াকার
কবিরা বলে সারা শরীর তার রাজাকার
কখনো মোহনা-কখনো যমুনা
আবার কখনো সুরমাকে নিয়ে
প্রাচীরের অন্ধ প্রকোষ্ঠে মেতে উঠে অভিসারে
কামুক ছড়াকার শরীরে তার রাজাকার
ধরো শালাকে মারো
লজ্জা কী নাই তার।
মা শোনালো গল্প
✍️তালুকদার হালিম
মায়ের মুখে স্বাধীনতার
বলতে দেখি গল্প
মাঝে মধ্যে প্রায়ই শুনান
খুব বেশি না অল্প।
তখন তিনি বিয়ের পরে
ভার্সিটিতে পড়তেন।
বির্তকেতে পটু ছিলেন
রাজনীতিও করতেন।
এক বিকেলে ছুটি শেষে
যেই না ঘরে ফিরবে
খবর পেলো, পাক সেনারা
তাদের বাড়ি ঘিরবে।
মা তখনি বুদ্ধি আঁটে
কেমনে আজ বাঁচা যায়?
পাশের ঘরের পাক ঘরেতে
কালো এক হাড়ি পায়।
হাঁড়ির কালি মুখে মেখে |
চুলের বিনি খুলে
শাড়ি ছিড়ে, লম্বা আঁচল
বসলো ভাঙ্গা টুলে।
ছাগল গরুর খাবার গুলো
দু’হাত দিয়ে মুখে দেয়
পাক সেনাদের লীডার বলে
ছোড়দে উচকো পাগলী হ্যায়”
ভালবাসা আর হবে না
✍️তামান্না জলি
ভালবাসা আর হবে না।
যার হাত ধরে
ভালবাসার ঘর বেঁধেছিলাম
ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখি
ভালবাসার জায়গাটুকু ফাঁকা
প্রাণপণ চেষ্টা করেও
যায় নি পূরণ করা।
টেনে টেনে চলছে
কোন রকম জীবনের চাকা
এত কিছুর পর দেখি
সব কিছু কেমন ফাঁকা
ভালবাসা আর হবে না।
জীবনের এই শেষ লগ্নে
বড়ই ক্লান্ত আর একা
একাকিত্বের দায় একান্ত
যেখানে শুধু স্মৃতিগুলো
শুধু করে ঘোরাফেরা
যখন তোমার ছবি
✍️নজরুল ইসলাম সাচী
যখন তোমার ছবি,
প্রতিবাদী মিছিলে পুলিশের
বুলেট বিদ্ধ রক্তমাখা সাদা শার্টে
তখন এ নগরীতে, শাহাজাহানের
প্রিয়া, মমতাজের ভালবাসার স্মৃতিগুলো
ঝনঝনে বৃষ্টি ঝরায়
তখন, আমার দু চোখে কাল রাতের স্বপ্নের বেদনার্ত
স্মৃতিগুলো দ্বার খুলেছিলো
প্রিয়তমা, এখন নিঃশ্বাসে বারুদের গন্ধ।
আর মায়ের আশাহত আকাক্ষা প্রতিচ্ছবি |
তখন তোমার দু চোখে চিরহরিৎ লতাগুলো সবুজের রং ছড়ায়
এখন, মধ্য দুপুর পেরিয়ে, বিকেলের
আয়োজনে
নগরীর মায়াবী আকাশে রংধনু
সাত রঙার মন মাতানো রং
তখন তোমাকে উজাড় করে দিতে চাই।
অনাকাক্ষিত আশ্বিনের শিলাবৃষ্টি।
কতিপয় কপোরেট বেদনা
✍️নাজিমুদ্দীন শ্যামল
আমাদের কর্পোরেট দিনগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে সারাদিন;
ঝুপঝুপ বৃষ্টির সাথে মুছে যাচ্ছে।
আমাদের যৌথ পরিবার
ভালবাসা আর সব সম্পর্কের জলছবি।
আমাদের ছেলেবেলা আর ছেলেবেলার গোলাপ ফুল
বহুতল ফ্ল্যাটে শক্ত কাঁচের দেয়ালে
আছড়ে পড়ছে এখন।
কাঁচের স্বচ্ছতায় দেখছি
বৃষ্টি; আর বৃষ্টির মতোন
মুছে যাওয়া স্মৃতি।
আমাদের পাথুরে রাতজুড়ে মাটি নেই,
নেই কোন মৃগন্ধা মৃন্ময়ী।
আমাদের দাম্পত্য, আমাদের নৈমিত্তিক সহবাস
পাথুরে রাতের গায়ে গড়িয়ে পড়া মার্বেল,
ক্রমশ প্রতিধ্বনি আর প্রতিধ্বনি।
নিত্য সঙ্গমে পাথরক্লান্তি নিয়ে সকাল এলে,
কর্পোরেট রোদের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে।
শীতল বাক্সে ঢুকে পড়ে আমাদের জীবন।
আমাদের মমতা, লুকানো ভালবাসা
আর নির্বাচন বেদনা হায়
লুকিয়ে গেছে কার্পোরেট টাইয়ের তলায়।
স্বাধীনতার অনন্ত ঘোষণা
✍️নির্মলেন্দু গুণ
সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় আকাশের চাঁদ
যেরকম গ্রহণগ্রস্ত মানুষের দৃষ্টি দখল করে,
ঠিক তেমনি তিনি এই বঙ্গীয় বদ্বীপবাসীর দৃষ্টিকে দখল করেছিলেন।
সূর্যমুখী যেরকম সর্বদা সূর্যের দিকে স্থির রাখে তার মুখ,
অথবা সদ্য প্রেমে-পড়া প্রিয়তমার বিগ্রহে তরুণ প্রেমিক
যেরকম অপলক চোখে মগ্ন রহে, তিনিও ঠিক তেমনি,
এই ভূখণ্ডবাসীর পাড়ুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
তাই, তাঁর চোখে ধরা পড়েছিল এই ভূখণ্ডবাসীর অশ্রু,
তার সুবর্ণ শৃঙ্খল এবং তার ঔপনিবেশিকতাদগ্ধ মুখশ্রী।
তার অন্তর্ভেদী দৃষ্টির বিস্ফোরণে তাই খুলে গিয়েছিল।
ধর্মের ঘোমটার নিচে চাপা পড়া ছদ্মস্বাধীনতার মুখোশ।
তিনি জীবনানন্দবৎ বাংলার মুখের দিকে তাকিয়েছিলেন।
তাই, তাঁর চোখে ধরা পড়েছিলো রূপসী বাংলার হাসিমুখ,
তাই, তাঁর চোখে ধরা পড়েছিলো পূর্ব বাংলার এঁটেল
মাটি,
তার শৌর্য-বীর্য, তার স্বায়ত্তশাসিত
স্বপ্ন, প্রিয় স্বাধীনতা।
তাঁর প্রেম ছিল প্রশ্নাতীত; তিনি ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন,
তাঁর জ্বলন্ত অস্তিত্ব ছিল স্বাধীনতার অনন্ত ঘোষণা।
পাঠক-কবির প্রেম
✍️নজরুল জাহান
আসলকুমার নয়নকুমার
ঝুমকুমারীর খবর কি?
ঝুমকুমারী ঝুমকুমারী।
সাত রকমের রঙ্গটি?
হোক না রংগের ঢঙের ঢঙের
চমক চমক চমক ভি,
কবি কোনো নিশি রাতে।
খোঁজেন ঘুরে তাপ রবি?
নেই কি কবির তাপের কাঁথা
আঁকেন কবি কার ছবি?
যার ছবিটা আকাশপটে
আঁকছে আলোয় চাঁদ?
দেখে কবি নয়ন ভাসায়
কাঁপে কবির দাঁত,
দাঁতের গানে চোখের জলে
পড়েন কবি আটকতো
কবির মনের করুণ কথার
খবর রাখেন পাঠকতো,
পাঠক কবি এক কাতারে
মনও বাজে এক সেতারে,
দুঃখ সুখের বাণীর ছলে,
পাঠক কবি পলে পলে,
প্রেম করে যে তলে তলে,
এই প্রেমেরই বহু গুণ,
প্রেম বাঁচে না বিনে নুন,
নুনের ভেতর দেয় যদি কেউ,
খাটটা রকম পাথর চুন,
পাথর চুনের ঝাঁজেও যে
ছুটতেই থাকে প্রেমের ভূণ।
অবিশ্বাসের শকুন থাবা
✍️বদরুননেসা সাজু
আমার অপরিসীম ভালো লাগা প্রেম মহব্বতের সুপেয় ধারা চলছে
একদা এক কদাকার সাপ বিষের প্রতিক্রিয়া মিশিয়ে দেয় চুমুকের পানপালে |
সেই থেকে দেখছি সংসার সবুজ শস্য সম্ভার রকমারি ফুল পড়েছে খরার
নির্মম দাহজ্বালায়, শুকনো বর্ণহীন হয়ে পড়তে দেখছি শখের জিনিষ;
অবিশ্বাসের শকুন-থাবা আমার মাথা খাচিয়ে যন্ত্রণার্ত করে প্রতি
রজনী।
বৈবাহিক সম্পর্কের সুউচ্চ বক্ষডালে চিল-হুতুমপোর
আবির্ভাব
সাকীর সুনয়নে ব্যঙ্গ কটা হেনে তুমি তার করতলে আঘাত করলে
কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে দিলে পদতলে পিষে,
চূর্ণবিচূর্ণ চুড়ি-আংটি কার্পেটে ছড়িয়ে যায়,
নববধুর নির্মল ভালোবাসা বিলাপে গুমড়ে কাঁদে, বৈশাখী হাওয়া দখল করে।
গুম হয়ে থাকা বেডরুম। বাসর রাত আপনজনকে এনেছিল কাছাকাছি
বাকহীন শ্বাসরুদ্ধ কান্ত এ দুঃসময়, তোমাকে
বড় প্রয়োজন আমার! একজোড়া
পাজামা-পাঞ্জাবী কতক্ষণই বা পারে আমাকে একদৃষ্টে নিমগ্ন
ভাবনায়
আবিষ্ট রাখতে? তারই নীচে তুমি লুঙ্গি-শার্ট কী নিপুন গুছিয়ে রেখেছো আলনায়!
তুমি এসো তাড়াতাড়ি, শিগগীর এসো, কতোদিন দেখা
হয়নি আমাদের।
এপাড় ওপাড় মাঝে নিঃসীম নিলীমা
শূন্যতার আব্রু পড়ে উন্মথি বিরহ অনল
টেনে আনে সুখ দুঃখের বর্ণ বিবর্ণময় স্মৃতি।
অন্ধ
✍️মহাদেব সাহা
রাত্রি জিন্দাবাদ দিয়ে ওঠে কার নামে নক্ষত্রপুঞ্জের চলে
নীরব মিছিল,
শোকের পোশাক পরে গাছগুলি দলে দলে নেমে আসে
নগ্ন রাজপথে।
পাথর খোদিত ক্ষুব্ধ অসংখ্য স্লোগান!
সমস্ত আকাশ জুড়ে কী করুণ দীর্ঘ এপিটাফ
একা সে বিষন্ন কবি লেখে এই ছিন্ন শোকগাঁথা
একেকটি তারকার উজ্জ্বল অক্ষরে,
আমরা এমন অন্ধ কিছুই দেখি না!
স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাঁর ফুটে ওঠে এতো বনফুল |
নিবিড় বকুল ঝরে পড়ে
বুঝি তারই শুল্ক মালা;
এমন শিশির ঝরে মানুষও কোনো শোকে তেমন কাঁদেনি
সারা বনভূমিময় বাজে দীর্ণ ব্যথিত রাগিণী,
আমরা নীরব তবু প্রতিবাদ জানায় প্রকৃতি!
নির্জনতা ভেদ করে এতো শব্দ, এতে কোলাহল।
পায়ের পশ্চাতে আরো বহু পদধ্বনি।
প্রতিটি প্রাসাদশীর্ষ অবনত হয়ে যেন ছুঁয়ে আছে
তাঁর নিঃস্ব কবরের মাটি!
শস্যময় মাঠে কার প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে নাম
অবিরাম দেশী নৌকো পাল তুলে যায়।
হাওয়ায় হাওয়ায় তার ভেসে উঠে মুখ!
পাখিরা কেমন যেন শোকে মুহ্যমান
কোনো গান শুনি না তাদের
বুঝি কোনো স্বপ্নগ্রস্ত পাখি তার স্বরে পাঠ করে
শোকের প্রস্তাব,
তার লতাগুল্মে কী গভীর মুদ্রিত ব্যানার!
আত্মার ভিতরে আত্মা কান পাতো, শোনো
তাকে দেয় জিন্দাবাদ!
পায়ের পেছনে আরো অনিঃশেষ পায়ের মিছিল।
আমরা এমন অন্ধ কিছুই দেখি না।
তুমি ও তো বলেছিলে
✍️মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ্
দীপ্তিময় দীপালোকের একজন মানুষকে যখন খুঁজতে
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায় দু’চোখ
তারার মলীন সুখে নীড়ে ফিরে চেয়ে দ্যাখে।
এখানে ওখানে স্মৃতির পাহাড়
তখন তপ্ত হৃদয়ে ঢেউ গেলে যায়।
আপন মনে বলে ওঠে এখানেই তো ছিলে একদিন তুমি
এখন কোথায় চলে গেলে; কোন বহু দুরে
কোথায় হারিয়ে গেলো সেই সোনালী দিনগুলো?
তারপর বিনিদ্র রাত, বালিশে মুখ গুঁজে
কান্নার বলিষ্ট আওয়াজ
ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে সুদূর পানে চেয়ে থাকা
সমুদ্রের নিঃসীম উর্মি মালায়
পাহাড়ের বুকে মৃদু হিমেল তুষারে
রজনীগন্ধার স্নিগ্ধতায় কিংবা গোলাপ রাঙা হাসিতে
অবুজ হৃদয়ের অবিরাম খোজাঁখুজি
তুমিও তো বলেছিলে আমাকেই ঘিরে থাকবে
আর তুমি আমি মিলে হবো
দীপ্তিময় দীপালোকের এক নির্ভেজাল বাসিন্দা।
অবিশ্রান্ত করতালি
✍️মিজানুর রহমান শামিম
পারঙ্গম স্বপ্নেরা অংকুরে বিনাশ
তোমার ওড়নায় ঝুলে আছে।
লুফেন বাতাস
কষ্টের পায়তারা বাজায় অবিশ্রান্ত করতালি
থেমে যাচ্ছে বাতাসের পায়চারি
প্রবল পাহাড় প্রতাপে
ঝুলে আছে চাঁদের তিলকে উল্টানো বাঁদুর
কারণ তুমি ফিরিয়ে নিয়েছো তোমার মুখ
আমার ওষ্ঠের জমিন থেকে।
দোহাই
✍️মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন
দোহাই ভাগ্য রজনীর দোহাই
দোহাই তোমার সৃষ্টি
আমি যেন পাই তোমার নিকট |
তোমার শোভন দৃষ্টি
দোহাই তোমার সব ক্ষমতার
সবটুকু মোর নিয়ো
তবু যেন হই তোমার নিকট
সবচে’তোমার প্রিয়।
একুশের ভাষা
✍️মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন
মুখের বুলি ফোটে বাংলা ভাষায়
বুক জুড়ে যায়, মায়ের মমতায়
একুশের বাংলা ভাষা গৌরবময়
রক্তঝড়া স্বাধীন বাংলা জয়।
আমার দেশের পরশমাখা মাটি
ঋতু ভরা মজার দেশে মুষলধারা বৃষ্টি
শিশির ভেজা মাঠের সবুজ ঘাসে
গরম চাদরে মনটা বড় হাসে।
অবস্থান
✍️মোহাম্মদ লতিফুর রহমান
নিবুনিবু প্রদীপের মত দুটি চোখে
বিশীর্ণ দেহের অন্ত্যজ কর্ম
বৃথা বেঁচে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা,
আয়ত্বের অতীত, নিকটে হাজির করা,
ভুলুণ্ঠিত সম্মানকে টেনে উত্তোলন,
পরিচিত জনের নিকট প্রিয়তর হওয়া।
যাহা পাইনি তাহার আশা করা,
সর্বজনের নিকট অভিনয়ে ব্যস্ত থাকা
নিলর্জ আতিশয্য বড়ই বাহুল্য,
আমি মনে করি তাহা অনেক দূরে
বিবেচক প্রজ্ঞাপনের সমীপে প্রজ্ঞা বিতরণ,
হোক তাহা খাঁটি অথবা পুঁথিগত
তবুও পারি না, থাকিতে মত্ত
উবে যাবে কপুরের মতো
অথবা কলকে ঘুরবে অন্যদের হাতে |
শুধু আমি ছাড়া।
গুণীদের মাঝে নিগৃহিত হবে চরমভাবে
উপলব্দির শিকড় দেশে, মর্মে হানবে আঘাত।
অমূল্য বচন মূল্যহীন হবে।
তাচ্ছিল্লতায় পাবে পরিপূর্ণতা
বোবার নেই কোন শত্ৰু,
নেই কোন আরাধনা,
নেই কোন হিসেবের খাতা
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিস্পাপ জীবন।
সেই বোবার হাতে নিয়েছি বায়াত
আনন্দচিত্তে প্রশান্তির উচ্চমার্গে
চলে যেতে চাই বান প্রস্থের মত
চিরদিনের জন্য দুর কোন দেশে।
পথের ফুল
✍️মোঃ আলী সারওয়ার
ফুল নেবে গো ফুল
শাপলা, গোলাপ, পদ্ম, বেলী ,কামিনী, বকুল।
এমন কোন মানব পাবে না।
যে ভালবাসে না ফুল।
ফুল নেবে গো ফুল।
হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, শিউলী,
শিমুল।
এমন কোন তটিনী পাবে না।
যার পাবে না দু-কুল।
একুল ওকুল সব হারিয়ে
ভাসছে এখন তারা।
পথেই তাদের জীবন যাপন
তাইতো দিশেহারা।
পথিমধ্যে পথ শিশুরা।
দু-হাত ভর্তি ফুল।
দুর্ঘটনার ধার ধারে না |
বিক্রি করছে ফুল।
অনবরত জপছে পথকলিরা।
ফুল নেবে গো ফুল।
পথেই তারা মাথা আঁচড়ায়
পথেই বাঁধে চুল।
কষ্ট করে গাঁথছে তাদের মা-খালারা
বকুল-বেলীর মালা।
বিক্রি হলেই প্রাণটা জুড়ায়।
জুড়ায় পেটের জ্বালা।
কারো হাতে শাপলা-গোলাপ
আর কারো হাতে রজনীগন্ধা।
একই ভাবে পার হয়ে যায়
সকাল থেকে সন্ধ্যা।
প্রথম দেখা
✍️মৃণালিনী চক্রবর্তী
নদীর কিনারে, দেখেছি তাহারে, প্রথম
চাঁদের আলোয়,
ঝলমল নদী, তরঙ্গ নিরবধি, উছলে উছলে
তাসে।
বহুদিন গড়ে, এসেছি এই ধারে, অতীত স্মৃতির
নীড়ে
গোধূলীর ছায়ায়, আবীর মায়ায়, যখন সুৰ্য
অস্তে যায় কিরে
হঠাৎ দেখি, দেবদা, সে কি,
কণ্ঠে রবীন্দ্রসুরে।
মোহাচ্ছন্ন সময়, বুকে স্মৃতিদের প্রণয়, অন্তঃ জ্বালায় মরে।
কত হৃদপত্র, করেছে বিচিত্র, বয়সের
ফোঁড় ছিড়ে
সেই পরিচিত, এখনো সেই মত, আছে নিমেধে
ধরে।
অবাক বিস্ময়ে, দুচোখ নিঃশেষে, আলোকে
দেখি তারে,
কেমনে এমন হয়, না কিছু বদলায়, চীর সবুজ
মেনতার ধারে।
বুকে হরিদ্রার মাঝে, হঠাৎ আলোর সাজ,
বহু পুরনো বছরে মাই ফিরে,
এমন দিনের আস্ফালনে, আবারো যেন সাকো গড়ে,
দুটি হৃদয়ে উচ্ছাস ঘিরে,
তবুও ছিন্ন হয়, বিচ্ছিন্ন হাওয়ায়
ফুলের অরণ্যে ঝরা পাপড়ী,
এমন দেখার, চোখাচোখিতে
হৃদয় ক্ষরণ উঠে ভাদরি ।
তোমাকে খুঁজে মরছি
✍️মিলন বনিক
মাগো, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? কত কাল ধরে,
কত বেলা অবেলায় তোমাকে খুঁজে মরছি।
কিষাণের সবুজ ফসলের মাঠে, কিষাণীর প্রৌঢ় আটচালা
থেকে শুন্য উঠোন,
নদী পারের ঐ বটতলাটায়, গ্রামের পদ্ম দীঘির শান বাঁধানো ঘাটে।
নয়তো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ মিনারের পাদদেশে।
কোথাও তুমি নেই, তুমি কি জেগে আছো?
নাকি তোমার নাড়ি ছেড়া ধন রফিক, সালামের
রক্তমাখা জামা বুকে নিয়ে
এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুণছো? বায়ান্ন থেকে কত দীর্ঘ
পথ পাড়ি দিয়ে
আমরা এসেছি একুশ শতকে। তুমি জেগে ওঠো,
সুদৃশ্য দালানের সদর দরজায় পঞ্চ-প্রদীপের
ডালা সাঁঝিয়ে
একটি বার উঠোনের দিকে মুখ করে তাকিয়ে দেখো,
নিভু নিভু মাটির প্রদীপটা কেমন জ্বলে উঠে বিষাক্ত বাতাসে
চৈতী ফুলের বাগান ঘিরে দেখো কেমন জ্বলছে জোনাক
আজ একুশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে আমরা ঠায় দাঁড়িয়ে।
তোমার লক্ষ কোটি সন্তান কেমন বীর দর্পে
তোমায় মা বলে ডাকছে। পশ্চিমের সবুজ ধান ক্ষেত মাড়িয়ে
নদী পারের বুড়ো বটগাছটা ছেড়ে দিয়েছে তার শিকড় বাকড়
সে আজ সুরম্য প্রাসাদে ইট পাথরের খাঁচায় বন্দী বনসাই।
বায়ান্নতে তোমার সন্তানেরা দিয়েছে আমাদের মা ডাকার অধিকার।
একাত্তরে তোমার সন্তানেরা করেছে অস্তিত্বের লড়াই।
একুশ শতকে তোমার জোনাকিরা বুড়ো বট গাছটার সাথে আঁতাত করে
আমায় প্রশ্ন করে, আমাদের অস্তিত্ব কোথায়? আমাদের হারিয়ে যেতে দিওনা।
আমরা যে তোমার মায়ের উত্তরসূরি, যাকে তুমি
খুঁজে ফিরেছো সুদীর্ঘ সময়।
মগ্ন সড়কের শেষ প্রান্তের বাড়িটি
✍️মানজুর মুহাম্মদ
বেলকনির ভেজা ওড়নায় দুপুর,
রোদের ফেসিয়ালে।
খুঁজে থাকে, গোপন খুঁড়ে।
ম ম হলুদ ঘ্রাণে প্রাণান্ত নিঃশ্বাস,
যেন বড়শিতে গাঁথা ছট-ফট কৈ।
বোগেনভেলির আলতো দোল।
বারুদ-গন্ধের খোসা খসে বাতাসের।
বৈদ্যুতিক তারে শালিকের চোখ মাপে
আকাশের ধুকপুক । স্নিগ্ধ যাদু।
সন্ধ্যা-রাত। না সকাল।
ঘুমোয় অনন্তকাল পাশ ফেরা, প্রহরের।
নেই যুদ্ধ। তবু বাজে বুকে টালমাটাল।
স্থির বোতাম চেপে দিয়েছে মহাকাল
সবার শুন্যতায় শুধু গোলাপ উড়ায়
মগ্ন সড়কের শেষ প্রান্তের বাড়িটি।
শুধুই নিরাশা
✍️ফাহমিদা আমিন
বন্যা মঙ্গা আসে খড়া
খেয়ে শোক, বাঁচে আদমরা
আর্সেনিকে অকাল জড়া
অশান্তিতে চারিদিক ভরা।
সোনার বাংলা একি দশা।
আশাহীন বাঁচা শুধু নিরাশা
কাটবে কবে এই অমানিশা
মাতালের বোতলই সব
✍️ফারুক নওয়াজ
মাতালের কাছে এই পৃথিবীটা ভাসমান ডিম
অথবা সে মনে করে বিশ্বটা তার... শুধু তার
সে রাজা; এই মানুষ, গাছ-পালা, পাখি এবং
যা কিছু আছে সবকিছু তাহার অধীন।
মাতাল পাতালে যায়, ইচ্ছে হলে স্বর্গে উঠে পড়ে
বগলে বোতল নিয়ে মাঝরাতে খোলা ছাদে গলা ছেড়ে গায়
হায়রে বোতল কই, কে নিলো বোতল আমার...
মাতালের বোতলই সব; কলত্র বোঝে না মাতাল
সংসার চুলোয় যাক মাতালের কী!
মাতাল পাতালে যায়, মুহূতে স্বর্গে গিয়ে নাচে।
মাতাল চেনে না দেশ, চেনে না প্রেম-মায়া
মাতাল ঘুমোলে ঘাসে শিশ্ন তার ঠোকরায় কাকে;
দেশ আজ ভরে গেছে বধ্যমাতালে...
মাতালেরা মনে করে দেশ যেন তাহাদের মচ্ছবখানা
জনতারা তাহাদের ক্রীতদাস যেন;
মাতালেরা ধর্ম বোঝেনা, ধ্বংস ও মৃত্যুতে
মাতালের কীবা আসে-যায়!
দেশ আজ মাতালে ভরে গেছে;
মাতাল পাতালে যায়, মাতাল চাতালে ওঠে...
মাতাল স্বর্গে গিয়ে নাচে ধেই ধেই...
যেই দেশে সংবিধান শুধু ভালবাসা
✍️বিশ্বজিৎ সেন
কালো বেড়াল করে ঘুর ঘুর ছোপ ছোপ
বেগুনী আঁধারে! কেউ তো জানে না কে হবে হবে টোপ!
ঘাড়গুলো মানুষের জানে না কখন কার মাথা
কিংবা পিঞ্জিরার পাখি উড়ে যায় নিরাকারে।
এখানে মৃত্যু নামে বহুক্ষেত্রে মানুষের হুকুমে।
রুহ খেকো কালো বেড়াল আশে পাশে ঘুর ঘুর করে |
কি জানি কখন কার ঘাড় মটকায়!
আমার কবিতাগুলো এক একটা বলাকার মতো
উড়ে যাচ্ছে চোখ বোজা আকাশে
আলোয়--ভয়হীন আতঙ্কহীন
বৈষম্যবিহীন দেশ যেই খানে সংবিধান শুধু ভালবাসা।
আমার বিহঙ্গ যাবে সেইখানে ভেঙ্গে গেলে খাঁচা!
ভালোবাসার দীর্ঘশ্বাস
✍️রাশেদ রউফ
জরাগ্রস্ত অন্ধকার কাকের পালক হয়ে ছড়িয়ে
পড়েছে মর্ত্যে
নির্বীজ বৃক্ষের মতো |
নির্বীর্য পুরুষের মতো দীপ্তিহীন আমার শরীর;
প্রচণ্ড ঘূর্ণির বেগে বিধ্বস্ত কুটিরের ছায়া পড়ে,
আর বৃষ্টির সংখ্যাহীন ফোঁটার মতো নিক্ষিপ্ত হয় শাদা
নিষ্ঠীবন।
ভয়ার্ত বনের মধ্যে মৃগ নেই, মৃগাঙ্কও নেই।
শুধু পাতা ঝরার শব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে গাছপালা।
আর্ত ও আর্দ্র শরীর নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো আমি!
কখন ভোরের হাওয়া জানান দেবে যে,
আলো আর হাসি থোকায় থোকায় ফুটে আছে
কখন এ নিরালম্ব অন্ধকার উড়ে যাবে-দেখবো
রোদের মিহি জরি
মৃতকল্প শয্যা ছেড়ে কখন দাঁড়াবো আমি নিজ
আয়নায়!
পরলোক ডাকে
✍️রমজান আলী মামুন
একদিন যেতে হবে চলে
যোজন যোজন সেই দূরে
সহসাই ফিরে নাতো কেউ
যায় নাতো কেউ কিছু বলে।
কোন কিছু হয় নাতো মেপে
পৃথিবীতে কতো কিছু ঘটে
তবু আহা স্মৃতি গুলো নিয়ে
বেদনায় বুক উঠে কেঁপে।
যাই তবে কি যে রেখে
সঞ্চয় করিনিতো কিছু
পরলোক ডেকে বলে আয়
হাতছানি দেয় পিছু পিছু।
চলে গেলে কেননা তবে আসা।
ক্ষণিকের ভালোবাসা শুধু
বেদনার বৃষ্টি ঝরিয়ে
হৃদয়ের মাঠ হবে ধু-ধু।
রেখে যাবো
✍️রেজাউদ্দিন স্টালিন
রেখে যাবো এমন এক উত্তরাধিকার
আদিগন্ত হু হু পথ অনিঃশেষ অন্তরীক্ষ
সকাল না হওয়া এক গভীর রাত্রি
নক্ষত্রের নেমে আসা নিরর্থক আলো
জানালায় বিধবার লেপ্টে থাকা চোখ
কখনো মাতৃক্রোড় দ্যাখেনি এমন কৈশোর
রেখে যাবো বুক-উজাড় বেদনার বাঁশি
শুকনো নদীর চড়া নৌকার নাভিতে রৌদ্র
দু'একটা গাঙচিল দিকভ্রষ্ট ঘুড়ির অসীম
ঝঞ্চাহত বৃক্ষের নুয়ে পড়া দাঁত
হাঁ-মুখ ম্যানহোলে পড়া রাস্তার বুক
এমন নিঃসঙ্গ পথিক যার গন্তব্য উধাও
রেখে যাবো জলাভূমি চাঁদের চিৎকার
ক্ষুধার স্বর্গরাজ্য স্লোগান মিছিল
মঙ্গায় দগ্ধ লোক কর্কশ জিহ্বার দাগ
সর্বনাশুন্ধি সাদা সাপের লেহন
অসহ্য আইনে পোড়া বিবেকের বাহু
হৃদয়ের রন্ধ্র জুড়ে হতাশার হিংস্র হাহাকার
রেখে যাবো দুঃসময় স্মৃতিচারণের মহাকাল
সূর্য ডোবে না এমন এক বন্ধ্যা প্রান্তর
উত্তরসূরী কেউ যেন অর্জন করতে পারে কাঙ্ক্ষিত দিন।
স্বপ্ন আর সুন্দরের অবিচ্ছন্ন ঘড়ি
অনায়াসলব্ধ কিছু রেখে যাওয়া মারাত্নক পাপ।
দুঃখ নয়
✍️রুস্তম আলী হাওলাদার
পথের পাশে শীতে কাঁপে
রাত দুপুরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা ।
আহা! মরি! হরি! হরি!
কি যে করি-
আঁধা বুঝি-
এই শীতে
লাগে ওদের কম্বল।
শুধু দুঃখ নয়!
ভাবতে লাগে অবাক!
জীবন থেকে জীবনটা যে
এতটাই তফাৎ।
বিষন্ন বিকেল
✍️হাবীব সাখায়েৎ
কাঁটাতারে বিদ্ধ মেঘের হাহাকার
উড়ছে হাওয়ায়
একটি অস্থির বিষন্ন বিকেল
ডুব-সাঁতারে
ঢুকে পড়ে সন্ধ্যের চৌকাঠ পেরিয়ে
রাতের নিকষ কালো অন্ধকারে।
কী আর করতে পারি বলো?
চেয়ে-চেয়ে দেখি
প্রকৃতির সহজ সরল নিয়ম;
লুলু বেঁচে থাক
✍️লুলুল বাহার
চাঁদ ফুল লতা, মেঘ পাখী
তাদের নিজস্ব হাতে যদি সাজায়
যদি উপেক্ষা করে যেতে পারে সকল অক্ষমতা
ওদের বলো- তবে লুলু বেঁচে থাক।
লুলু বেঁচে থাক শোকে সুখে দুঃখ চেয়ে
ছড়িয়ে সুগন্ধের মত সন্ন্যাসিনী মন |
বিবাগী পৃথিবীর।
যদি ওরা না ভোলে, মনে রেখে মন দেয়
সঁপেঃ তবে বেঁচে থাক লুলু এইসব ভিতে
শ্রীহীন অনভিজাত কুঁড়েঘরের মত
নিজের ভেতরে নিজে একাগ্র হয়ে |
তালা খুলে
মাটির মত মাতৃত্ব নিয়ে মাতৃভূমে
লুলু বেচে থাক মাটি হয়ে, মাটি হয়ে
ছোট ছোট ঘাসে।
ফিরে এসো সংসার সীমান্তে
✍️লীনা রহমান
ফিরে এসো হৃদয় বন্দরে
বেদনায় উত্তাল সিন্ধুপাড়ে
জীবন নদীর জোসনায়
শঙ্খ সাদা জোসনায়
জীবনের ঘনিভূত বেদনায়!
ফিরে এসো
নব প্রজন্ম হয়ে প্রাণের উজ্জল শিখায়
শিমুল পলাশ ফোটা কোকিল ডাকা বসন্তে,
রক্তজবা লাল গোলাপ ও কৃঞ্চচূড়া হয়ে
উজ্জীবিত সংসার সীমান্তে।
উষ্ণ ভালবাসার উত্তপ্ত সুর্যের কিরণ হয়ে
বিচ্ছুরিত আলোর রশ্মি হয়ে
বিদগ্ধ বেদনার নীলাম্বরে
ফিরে এসো হৃদয় বন্দরে।
দিধা কম্পিত নিতম্ব অধর ললাটে
নীল খামের মনোহরী মলাটে এসো
অবশেষে হৃদয়ের কোল ঘেঁষে
ফাল্গুনের আগুন ঝরা দিনে
দূরে যাওয়া অতীতের দুরন্ত ক্ষণে
বহু কথায় ব্যবহৃত
দুই যুগ অতিক্রান্ত যেন
সেই সুখের শালিক হয়ে
নিকানো উঠোনো
শ্রাবণ বরিষণে
বুনো কাননে মেঘমুক্ত প্রাঙ্গণে
অকৃত্রিম আহবানে।
মেঘেরা ছুটছে
✍️লিটন কুমার চৌধুরী
এক টুকরো মেঘ দু'টুকরো মেঘ
তিন টুকরো মেঘ ওড়ে,
কিসের এতো তাড়া তাদের
যায় কোথায় রোজ ভোরে।
আকাশের ওই মাঠ ছেড়ে কী
পালিয়ে যায় তারা,
ছুটছো কোথায় জানতে চেয়ে
পাইনি কোনো সাড়া।
ছুটছে তারা ছুটছে কেবল
কীসের এই উদ্বেগ,
কী যেন কী খুঁজতে তাদের
দ্রুত গতিবেগ
সাদা মেঘের সাঁকো ওড়ে |
টুকরো কেমন তরো,
আমার কথা যাও শুনে যাও
তারপর নাই ওড়ো।
প্রতিক্ষার হলো ইতি
✍️লাভলু চক্রবর্তী
অতপর প্রতিক্ষার হলো ইতি
স্বপ্নকে বেঁধে দেয়া হলো সীমানা
শূন্যতার গহীন অরণ্যে এলো বৃষ্টি
এক টুকরো বিজলির আলো আমায়
দিয়ে গেল নতুন পথের ঠিকানা।
অস্ত যাওয়া সূর্য যখন বিকেলের কোলে
কাজল কালো মায়াবী ওই দুটি চোখ
কি যেন বলল আমায়।
সাদামাটা গড়ন এলোমেলো কেশ
সাজ গোজহীন চেহেরার দুষ্টু মিষ্টি হাসি
বুঝিয়ে দিল ভাল লেগেছে-তোমায়
সমস্ত তনু মনে ঝড় তোলে অদৃশ্য হলে।
অতপর প্রতিক্ষার হলো ইতি
বুকের মধ্যে জমাট বাঁধা।
সমস্ত ভালবাসার হলো মুক্তি
অবিরাম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
এক ছাতার নীচে এসে দাঁড়ালাম আমরা
হাতে হাত রেখে মুক্ত ভালবাসা
বলে উঠে ভালবাসি শুধু তোমায়
আমার সমগ্র সত্ত্বা শুধু তোমার জন্যে।
বিস্ময়ে ভাবছি
✍️সাহিদা রহমান মুন্নী
বিস্ময়ে শুধুই ভেবেই চলেছি, কত সহজেই
মুখ ফিরিয়ে নিতে পার তুমি, কত সহজেই!
নখদর্পণে যার ইচ্ছা- অনিচ্ছার কাছে জিম্মী।
ছিলো তোমার ভালো কিবা মন্দ থাকা- আজ সেই
‘চালিকাশক্তি’ মূহুর্তেই যেন কিছুই না,
কোনদিন
যেন চিনতেই না- এমন তাচ্ছিল্য ভরে ফেলে রেখেছ
বর্জিত অন্ধকার গৃহে আবর্জনার মত!
পুষির মত তুমিও আদর-সোহাগ-প্রেম
ভালোবাসার-মূহুর্তেই দিলে গলাটিপে,
ফিরিয়ে নিলে মুখ-অচেনা হয়ে গেলে
চির অচেনা ! পুষিতো মুখ ফোড়াবার পূর্বে
অন্তত দু' একবার টর্চ লাইটসম চোখ নিয়ে
মাথা উঁচু করে চেয়ে দেখে মনীবের মলীন মুখ খানি!
তুমিতো অকৃজ্ঞতায় পুষিকেও হার মানালে!
কি করে নিখুঁত অভিনয়ের পর অভিনয়।
তুমি করেই যাচ্ছ- করেই যাচ্ছ! বড় বেশি
বিস্ময়ে
ভাবছি, ভেবেই চলেছি...এই আমি
নামক চালিকাশক্তি
আজ আর তোমার সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-
চায়ের আড্ডা,
কবিতা, জরুরী মিটিং, বৃষ্টির
শীতলতা-ট্রেনের
ফিরতি- বা গমনে কিংবা বাড়ির নিচে মশার
নির্যাতন কিংবা লৌকিকতার তোয়াক্কা না করে
চুপিচুপি দিনের শেষ বিদায়- অথবা বেলকনীতে অনেকের
অগোচরে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনের ফিসফিস
যা তোমার প্রাণের উপজীব্য হয়ে উঠেছিলো- আজ
সবই বেমালুম হয়ে গেছে! এখন প্রাণের সঞ্চালনায়
অপ্রয়োজনে আমি! তাই না? কত সহজেই পার
তুমি!
কত বেশি সহজে! সাপের খোলসের মত তুমিও
যেন খোলসের আবডালে এক কুৎসিত মানসিকতার
পুণ্ডলী ছিলে, ভালমানুষের বাহ্যিকতায়.....
যাকে আমি বা আমরা কেউই পারিনি।
অবিশ্বাস করতে! কায়মনে পুঁজো করেছি
তোমার-আর তুমি লংঘন করেছো পুঁজোর
পবিত্রতা অনেক বেশী নাটকীয়তায়....
বিস্ময়ে ভাবছি, কেবলই ভাবছি, কি করে পার
তুমি!
পৃথিবীতে বিশ্বাস কিবা ভরসার কোন
কষ্টিপাথরে যাচাই করে মানুষ মন বাজারে
চিনবে বহুরূপী এ ভালো মানুষগুলোকে বিস্ময়ে ভাবছি...!!!
মৃত ভালোবাসা
✍️সনেট দেব।
ভালোবাসা মাথা ঠুকছে।
বিবেকের নিষ্ঠুর কঠিন পাথরে
অশ্লীলতার ফুলিঙ্গে জ্বলছে...
দু-প্রেমীক প্রেমিকা।
আজ পরাজিত ভালোবাসা।
নিঃশ্বাস-বিশ্বাস বিলুপ্ত প্রায়
এ অমলিন ভালোবাসায়
আজ কোন ভালোবাসা নাই।
এমন করে প্রশ্ন করো না
✍️শামীম রুমি টিটন
আজন্ম কেন বয়ে চলে নদী .
সূর্য কেন ওঠে
সাগর কেন জোয়ার বেলা
জোসনা রাতে ফোটে
চাঁদের-আলোয় বুকের ভিতর
আমার কেন ব্যথার জোয়ার আসে
গ্রীষ্ম-দিনে রোদের তাপে।
অন্তরে ঝড় ওঠে।
রুদ্র-ছায়ায় শরৎ প্রভায়
চোখের জলে বর্ষা কেন নামে
ঝড়ের দিনে বন্ধ দরজায়
হৃদয় কেন কাঁপে
তন্দ্রা-রাতে বৃক্ষশাখে
ফুলটি কেন ফোটে।
গভীর রাতে জোনাক কেন
আমার বুকে জ্বলে
শিশির হয়ে পুষ্প মরে
হৃদয় কেন পুড়ে
সন্ধ্যা সাজে অন্ধকারে
হৃদয় কেন কাঁদে
আবার যদি হয় গো দেখা
পরজনম’
কালে।
প্রশ্ন হবে তখন কী আর
দাঁড়িয়ে স্বর্গ পরে?
অনুবাদ কবিতা
শ্যাম্পু সেড সং
✍️কবি হ্যাদা সেন্দু
শ্যাম্ভু,
তুমি আমাকে ডাকছো
মানব সভ্যতা ধ্বংসের সেই স্বর্গে
আমি তীর্যকভাবে বেঁকে যাওয়া
মানুষের সঙ্গে তোমার দীপ্তিময়
অতীতে দাঁড়িয়ে আছি।।
বার বার ফিরে আসি শ্যান্ড্রু নদীর কাছে
স্বপ্নে মাঝে দেখি সোনালী পদ্ম ছড়ানো সুগন্ধি
আর ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা কাঠের তৈরী আরোহী |
শ্যাম্ভু,
তুমি আমাকে ডাকো ভূপৃষ্ঠে
সেখানে চিরসবুজ সাম্রাজ্যের ধ্বংস্তুপ
আমি নিজে পরিত্যাক্ত একজন সামান্য মঙ্গোল
সবুজের বুকে আমি নিজে পরিত্যক্ত
এক টুকরো কণিকা।
কবি পরিচিতিঃ
কবি হ্যাদা সেন্দু,
জন্মঃ ১৯৬১ সালে। মঙ্গোলিয়ার জাতীয় কবি।
তাঁর কবিতা সমগ্র ৩০টির বেশী ভাষায় অনুদিত রয়েছে।
তিনি মঙ্গোলিয়ার কবিদের অন্যতম। মঙ্গোলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-এ
তিনি অধ্যাপনা করেছেন। সেই সাথে দ্যা ইন্টারন্যাশনাল লিটারেরি কোয়াটারলির
সম্পাদক। হ্যাদা সেন্দু আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত কবি।
বাবা একটি নাট্যদলের প্রধান ছিলেন এবং মা ছিলেন নাট্যশিল্পী।
তিনি মঙ্গোলিয়ান সাহিত্য বিশেষ করে ক্লাসিক্যাল, মহাকাব্য,
লোকসঙ্গীত ও
আধুনিক কবিতা পাঠের সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর প্রথম কবিতা সমগ্র
The Nomadic songs
and moonlight. তিনি এথেন্স সিটি হল পাইজ এবং অলিম্পিক অব কালচার সম্মাননা
১৯৯১ অর্জন করেন। এছাড়াও গ্রীস, কানাডা, আমেরিকায় সাহিত্যের জন্য
সম্মানসূচক মেডেল অর্জন করেন।
#সমাপ্ত#
কোন মন্তব্য নেই