Header Ads

কবিতায় জাগরণ (জুলাই-২০১৩)

 



সম্পাদকীয়

 

 

কবিতা হচ্ছে জাতির বিবেক আর কবি সে বিবেককে সদা জাগ্রতরুপে সোচ্চার রাখেন কালে-মহাকালের ক্রান্তিক্ষনে।

মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে কবিতা উড়ে বেড়ায় দেশ জাতি তথা সমাজের উদাত্ত আকাশে।

 

শব্দের গায়ে ছন্দ, তাল, লয় ও অর্থবোধক ভাব কে অলঙ্কার পরিয়ে সাজানো হয় একটি কবিতাকে।

 

সে কবিতাতে থাকে গাঢ় প্রেম, বিরহাগ্নি, প্রত্যাশা ও পাওয়া না পাওয়ার ব্যাঞ্চনা।

স্বপ্নের পথ ধরে আসা সেই কবিতায় থাকে সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতাকে আলোকিত করার আলো ।

কবিরা তাইতো স্বপ্ন ও আলোর ফেরিওয়ালা ।

 

ধর্ম-বর্ণ ও দেশের সীমানা পেরিয়ে কবিরা স্বপ্ন ও আলো ফেরি করে বেড়ায় যুগান্তরে, দেশান্তরে ।

এ রকম এক ঝাঁক প্রতিভাবান কবিদের লেখা নিয়ে সাজালাম "কবিতায় জাগরণ" নামক লিটল ম্যাগাজিনটি ।

 

এবং আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ঐ সকল মহৎপ্রাণ মানুষগুলোকে যারা বিভিন্নভাবে এই লিটল ম্যাগাজিনটি

প্রকাশ করতে আমাকে সহযোগিতা করেছেন এবং প্রত্যাশা রইল আগামী দিনগুলোতেও লেখা ও সহযোগিতা পাবার।

 

সাহিদা রহমান মুন্নী

 

 

 যারা✍️ লিখেছেন এই সংখ্যায়

. বেগম রনু সিদ্দিকী                              

 . ফাহমিদা আমিন                                   

 . মহাদেব সাহা                                    

 . দিপালী ভট্রাচারয                              

 . মুহাম্মাদ নুরুল হুদা                            

 . লিলি হক                                         

 . আল মুজাহিদী                                    

 . রেজাউদ্দিন স্টালিন                           

 . রহমান লতিফ                                    

 ১০. সাবিহা মুসা                                     

 ১১. মরজিনা আকতার                            

 ১২. নোউশিয়া নাজনীন                           

 ১৩. পারভীন চৌধুরী                               

 ১৪. কামরুল হাসান বাদল                        

 ১৫. জসীম মেহবুব                                   

 ১৬. বিশ্বজিৎ সেন                                  

 ১৭. নজরুল জাহান                                   

 ১৮. আরিফ চৌধুরী                                  

 ১৯. জিন্নাহ চৌধুরী                                     

 ২০. মোহাম্মদ সাদ উদ্দিন                             

 ২১. অনিন্দ্য বড়ুয়া                                     

 ২২. প্রাকৃতজ শামীম রুমি টিটন

 ২৩. শাহনাজ পারভীন 

 ২৪কোহিনুর শাকি     

 ২৫. হোসাইন আনোয়ার

 ২৬. সাঈকা জান্নাত চৌধুরী

 ২৭. খোশনুর

 ২৮. মানজুর মোহাম্মদ

 ২৯. আশা মণি

 ৩০. অমিত বড়ুয়া

 ৩১. তামান্না জলি

 ৩২. মোখলেসুর রহমান

 ৩৩. অরুণ শীল

 ৩৪. সৌবেন

 ৩৫. মনি ইসলাম

 ৩৬. নাজিমুদ্দিন শ্যামল

 ৩৭. লুতফুন্নাহার হাসি

 ৩৮. আকতার হোসেন

 ৩৯. মোহাম্মদ নুরুল আবসার

 ৪০. জুয়েল মাহমুদ

 ৪১. মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ

 ৪২. সাহিদা রহমান মুন্নী

 ৪৩. সংগৃহীত জাপানী কবিতা



মাগো তোমায় ভালোবাসি

✍️বেগম রনু সিদ্দিকী

 

খোকা বলে-

মাগো আমি

ভবে যখন আসি,

আমার চোখে

পানি ছিল

তোমার মুখে হাসি ।

খোকা তোমার বড় হবে

দিনে দিনে মানুষ হবে

আমায় মানুষ করতে মাগো

কষ্ট তোমার বেশি

তাইতো মাগো

সবার চেয়ে

তোমায় ভালোবাসি ।

....................................................................................... 


জীবন মানে

✍️ফাহমিদা আমিন

 

জীবন মানে

নকশী কাঁথা

মায়ের হাতের পুলি

জীবন মানে রুপ কথা,

গল্প শোনার

ঠাকুরমার ঝুলি ।

 

হলুদ সবুজ মেশা

ক্ষেত সরিষার

ঝর ঝর মেঘ-জল

ঘন বরিধার ।

 

জীবন যেন

সকালের আলো

সূর্যের ঝিকি মিকি

অমানিশায় ঝোপ ঝাড়ে

জোনাকির উকি ঝুঁকি ।

 

জীবন মানে পূর্ণিমা চাঁদ

উদ্ভাস উল্লাস

সোচ্চার ভাবে বেঁচে থাকা

বিশ্বাস, নিঃশ্বাস ।

.......................................................................................


পদ্ম পুকুর

✍️মহাদেব সাহা

 

এই পদ্মপুকুরে হয়তো কোনদিন ঠিকই

পদ্ম ফুটেছিল,

ফুটেছিল জল আলো করে

আসমানি ফুল,

আজ তাতে পদ্ম পড়ে আছে জল ।

 

ফুলও থাকেনা, পদ্মও শুকিয়ে যায়,

কিন্তু সৌরভ থাকে, এই পদ্দপুকুরে সেই

সৌরভ ফুটে আছে ।

.......................................................................................


জীবন জীবনের

✍️দীপালী ভট্টাচার্য

 

জীবনকে জীবনের মত দেখেছি

তাই পাওয়া না পাওয়ায় কোন দুঃখ নাই

জীবন তো মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়া।

কখনো দশতলা বাড়ীতে

কখনো শনের কুঁড়েঘরে মাটিতে,

বাগানে কিংবা জলাশয়ে

জীবনটাও তো এমন কেবলি বৃষ্টির মত

এখানে, ওখানে, সেখানে ঝরে পাতা।

তারপরও মানুষ স্বপ্ন দেখে কতকিছুর

অথচ সবকিছু সঞ্চয় অমূলক সন্তান

সুখে থাকবে বংশধর জমিদায়ী

করবে আশায় স্বপ্নে বিভোর হয়ে

কেলি অপকর্মে লিপ্ত মানুষ কেড়ে নেয়,

কেড়ে যায় বেড়ে যেতে চায়

অথচ দু'হাত খালি করে যাবার সময় দেখা যায়।

কিছু নাই, কেউ নাই।

বৃথা সমারোহ, বৃথা আয়োজন।

জীবন জীবনের জন্যই প্রয়োজন।

  

 .......................................................................................

 

রেণু

✍️মুহাম্মদ নূরুল হুদা

 

ফুলের যেমন রেণু থাকে,

আমার তেমন রেণু

আমার রেণু কি করে হয়

অন্যের কামধেনু?

কোথেকে হায় কি যে হলো,

রেণুর হলো বিয়ে

লাল চেলিতে চলল রেণু

ঘোমটা মাথায় দিয়ে

কি আর করি, অবোধ প্রেমিক

জানাই বেদনা প্রবোধ দিয়ে বলল রেণু,

অধিক কেঁদো না

সুবোধ বালক মুছে নিলাম

জলভরা দুই আঁখি

সারাজীবন সামনে আমার,

মরণটাই বাকী।

 ....................................................................................... 

সাথে যদি থাক তুমি

✍️লিলি হক

 

আমার দেশ আমার ভালোবাসা

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাত্রা।

চলন্ত ট্রেনের কামরায় বসে দেখছি

কিষাণী বধুর সমাজ চিত্রিত মুখ।

 

প্রস্ফুটিত ধানের ক্ষেতে তোমার মুখ

জারী বনের ছায়ায় হেঁটে যাওয়া

আর কেমন হয় সাথে যদি থাক তুমি!

ওহ তো ওই তো কিশোরী মেয়েটি

মাটির দেয়াল লিপছে, আকাশটা ভারী

সুন্দর লাগছে, যৌবনবতী লাউয়ের ডগা

ওই যে মাছ ধরা জাল ফেলে ভাইটির

হাতে, আমিও কেমন দেখো।

তোমাদের ভালোবাসার জালে

ধরা পড়ে গেলাম মনে হয়

এই যেন পাশে বসে বলছে

কী লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে

দাও দাওনা বাকী লেখাটুকু শেষ করে দিই।

.......................................................................................

 

অস্তিত্ববাদীর মৃত্তিকা দর্শন

✍️আল মুজাহিদী

 

পৃথিবীর সব চেকপোস্ট আর সীমান্ত দেয়াল

দ্বিখণ্ডিত করে আমার আত্মার সপ্তর্ষিমণ্ডল

সৌর মহাদেশ আর আমার পৃথিবী ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে

 

আমি ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হতে থাকি দ্রাঘিমার কতো ডিগ্রী

নিচে নির্বাসিত হতে থাকি, মৃত্তিকা উপত্যকা থেকে

নির্বাসিত হতে থাকি।

 

যদিও আমি এবং আমার আত্মা সমগ্র আহার একক

প্রগাঢ় রক্তিম জলবিন্দু দ্যাখো, ধাতব যন্ত্রের মধ্যে কোনো হৃদয় প্রমিতি নেই

একটি ঈগল কতোবার বায়মন্ডলকে দ্বিখন্ডিত করে

কী রকম উল্টেপাল্টে দ্যাখে সুনীল দিগন্ত।

 

আমি মহাপৃথিবীর মাত্রা গ্রাম অতিক্রম করে সীমান্ত দেয়াল

পাড়ি দিয়ে ছুটে যাই রহস্যের সেরেনাদে, সংগীত প্রপাতে

হে সীমান্ত রেখা, দ্রাঘিমার কতো ডিগ্রী নিচে এখন দাঁড়িয়ে আছি

পানাম নগর থেকে হেঁটে যাই

 

তোমার রহস্য নগরীতে মানুষের প্রাচীন স্বদেশে ফিরে আসি

অস্তিত্ববাদীর মতো ছিড়ে ফেলি সময়ের দেহের শেকল

সবার ভেতর আমি বেঁচে আছি। আমিও তোমার আত্মার কাছে

চলে যেতে চাই, সঁপে দিতে চাই আত্মার পারদপুঞ্জ সত্ত্বার সমগ্র বিভা

 

এই গ্রহে এই গৃহে সংসারে বড়ই দুর্ভিক্ষ এখন হে সময়,

হে পার্থিব কাল কেউ কোনো কিছু আর অপার্থিব রেখে

যেতে পারি না আমরা আমাদের সোনালী ঈগল উড়ে যায় যেন

 

পৃথিবী অক্ষরেখায় ভ্রাম্যমাণ জলীয় বুদ্বুদঃ মৃত্তিকা আমার সত্ত্বায়

উজ্জীবিত করে গুল্মময় হরিৎ উদ্ভিদ।

....................................................................................... 

  


আয়না কি দরকার

✍️রেজাউদ্দিন স্টালিন

 

চোখের ভেতর মুখ দেখেছি আয়না কি দরকার।

পৃথিবীতে স্বচ্ছতম আয়না

পাওয়াই ভার।

পারদতো নয় কাঁচের নীচে গভীর অন্ধকার।

চোখের ভেতর মুখ দেখেছি আয়না কি দরকার।

জলের কাছে আগুন পেলাম

পাথর কি দরকার।

সব পাথরেই আগুন থাকে

এমন তো নয় আর।

বুকের আগুন খুঁচিয়ে তোলে মুর্থ বারবার।

চোখের ভেতর মুখ দেখেছি আয়না কি দরকার।

পথের কাছে পথ পেয়েছি

ভয় কি হারাবার

গতির ভেতর আলোক আছে

বিরোধী জোছনার।

হাত বাড়ালে যায় না পাওয়া সাজানো সংসার

চোখের ভেতর মুখ দেখেছি আয়না কি দরকার।

.......................................................................................


 

নির্ভুল গণনা

✍️রহমান লতিফ

 

নির্ভুল গণনা, আয়না কি দরকার।

সৃষ্টির রহস্য এখনো অজানা।

প্রাণের স্পন্দন মহাজাগতিক বিস্ময়,

জ্ঞানের ঘোরে নিত্য আবর্তময়,

ধীর লয়ে সৃষ্টি হারিয়ে যায়,

জানে না কেহ, কোন পথে কোথায়

চলে যায় কোন অচিন ধামে,

কত গাড়ি ছুটে কোথা তাহা থামে।

কেহ নাহি জানে শুধু একটু খানি,

অসহায় হয় জগতের প্রাণী।

শূন্য হতে জগৎ হয়,

শূন্যতেই লয়,

শূন্যের কারাগারে

সকল সৃষ্টির ক্ষয়।

.......................................................................................


এইতো জীবন

✍️ সাবিহা মুসা

 

ক্লান্ত দুপুরে অবসন্ন মনে

আনমনে একাকী বসে

দীঘির পাড়ে

 

ছোঁট্ট ঢিলটি ছুঁড়ে ছিলাম

আঘাত পেয়ে পানির বৃত্তাকার

রেখাটি বড় হয়ে তরঙ্গ তুলে।

 

আবার ছোঁট হয়ে মিলিয়ে গেল

বাতাসে মৃদুমন্দ দোলা

কখনও বা শান্ত পরিপাটি

জীবনটাও কি তাই?

 

নীড় বাধা ব্যস্ততা, অবসর নাই

ফুলে ফলে ভরা বাগানের

সত্র পরিচর্যা।

 

ছোঁটকলি থেকে বড়ফুল

সুগন্ধে মৌ মৌ মাতাল হাওয়া

স্নিগ্ধ পরশ ফুলের সৌন্দর্য্যে

মুগ্ধ সবাই।

 

মালির কাজ শেষ

ফুরিয়েছে প্রয়োজন

অর্থব বয়সের ভারে

 

নুয়ে যাওয়া মালি

অবশেষে ঠাই হোলো।

গৃহের পরিত্যাক্ত নির্জন কোনে

অপেক্ষা অন্তিম শয়নের ।

.......................................................................................  


ভালবাসা মানে

✍️ মর্জিনা আখতার ।

 

ভালবাসা মানে এক মুঠো ওম

একরাশ বিশ্বাস,

 

ভালবাসা মানে এক তোড়া ফুল

কিংবা দীর্ঘশ্বাস।

 

ভালবাসা মানে বয়ে চলা এক

ছোঁট নদী তরতর,

 

ভালবাসা মানে ধু ধু পড়ে থাকা

অসহায় বালুচর।

 

ভালবাসা মানে রঙ তুলি দিয়ে।

নির্মল ছবি আঁকা

 

ভালবাসা মানে তুমি ছাড়া যেন

পুরো পৃথিবী ফাঁকা।

 

ভালবাসা মানে চেনা মুখটির

সারাদিন আনাগোনা,

 

ভালবাসা মানে অনুক্ষণ এক

স্বপ্নের জালবোনা ।

.......................................................................................


আজন্ম ক্ষুধা

✍️নৌশিয়া নাজনীন

  

আমি একফোঁটা রক্তবিন্দু থেকে

বেড়ে ওঠা ভ্রণের আয়োজক

অন্ধকার মাতৃগর্ভের

 

জড়ায়ু চুষে খাওয়া রক্তচোষক

প্রথম চুম্বনে চুষে ছিলাম

 

জনৈক নারীর যুগল স্তনের অমৃত সুধা

সেই থেকে জঠরে লেগে আছে।

জন্ম জঠের আজন্ম ক্ষুধা।

 .......................................................................................

 

স্বপ্ন সুখের ঠিকানায়

✍️ পারভীন চৌধুরী

 

স্বপ্ন বুনেছি যার স্বপ্ন পুরে বহুদূরে

মেঘে মেঘে উড়ে উড়ে ।

তারাদের দেশ পেরিয়ে যাঁৰ অচিন পুরে

সেথায় আছে সবুজে সবুজ, পান্না সবুজে ভারা

ফুলে ফুলে হাওয়া পথ

 

স্বর্গের শিশুরা যেন স্বর্গের আলোয় হরা।

সেথায় যেন ব্যস্ত জীবনের প্রশস্ত পথ চলা

দুপময় দোলা।

 

জীবন সেখানে ছবির মত পথ ভোলা

পাহাড়ে পাহাড়ে চলে জীবনের আনাগোনা

রঙ্গিন গাছের পাতায় পাতায় যেন

নানান আলপনা

 

হঠাৎ বৃষ্টির গানে গাছপালা,

পথে দুএকজন ছাড়া আর কারুর

পথচলা হয়ে উঠে উজ্জ্বল

 

মুগ্ধতায় আমি সিদ্ধ।

লাল টালির লম্বা লম্বা ছাউনিগুলো

জীবনের প্রয়োজনে প্রতিটি সিড়ি

জীবন নিয়ে তাদের গভীর গম্ভীর সুনীতি বোর্ট

ব্যস্ত জীবনে ও খোজে প্রশান্তি

সে এক সুন্দর দেশ।

 

সেখানেও আছে কোকিল শ্যামা দোয়েল

আমার দেশের বউ কথা কও

চির বসন্তের সেই দেশ ফুলে ফুলে চাওয়া

বিদগ্ধ চিত্ত ভরে উঠে অনাবিল আনন্দে

 

ছবির মতো সে দেশখানি গড়েহে

নিজেরাই সবুজে-শ্যামলে।

তবুও বিদগ্ধ চিত্ত করে আনচান

 

কখন ফিরিব আমার সোনার বাংলাদেশে

যেখানে আমার শিকড়, আমার স্বপ্ন সুখের ঠিকানায়।

 .......................................................................................

  

কামরুল হাসান বাদল

 

১. নিখোঁজ

 

লিখি কারণ-বর্ণমালাগুলো সাজাতে হবে

শব্দ দিয়ে পথ তৈরি করে তার দুই পাশে

কৃষ্ণচূড়া ফোটাতে হবে। কৃষ্ণচূড়ার রঙ মনে

 

করিয়ে দেবে রক্তাক্ত অভূত্থানের কথা, পথের

দুপাশে ফুল ছড়াতে ছড়াতে যারা এসেছিল

তাঁদের খোঁজ মিলছে না কোথাও।

 

২. পতন

 

সিড়িগুলো এত নিচে নেমে গেছে

আমি নামতে নামতে ক্লান্ত নামার

দেখা পেলাম না যারা পতনে অনিচ্ছুক।

.......................................................................................



 
  

উড়ালপঙ্খী

✍️ জসীম মেহবুব

 

উড়ালপঙ্খী উড়ে গেল

কান্দে নুহাশপাড়া।

চান্নি পসর রাইতে ছিল

সে পখীটার সাড়া।

 

চন্দ্রকথা, ‘শ্যামল ছায়া

আমার আছে জল

চোখের সামনে ছবিগুলো

করছে ঝলোমল।

 

ঘেটুপুত্র কমলা আর

শ্রাবণ মেঘের দিন

এসব ছবি মনের মাঝে।

থাকবে অমলিন।

 

বহুব্রীহি, ‘আজ রবিবার

বাদলা দিনের গান

বনকুমারি, বনবাতাসি

জুড়ায় সবার প্রাণ।

 

মেঘ বলেছে যাব যাবো

সবাই গেছে বনে।

খোয়াব নগর, জল তরঙ্গ

গাঁথা সবার মনে।

 

বৃহন্নলা, ‘বুয়া বিলাস

চন্দ্ৰকারিগর,

মজার নাটকসোনার কলস

আর কালা কইতর।

কান্দে পাঠক, নিষাদ নিনিথ,

কান্দে তরুলতা,

 

সবার মুখে ঘুরছে কেবল।

হুমায়ূনের কথা।

গল্প, নাটক, উপন্যাসে

ছড়ালো যাঁর গুণ।

 

তার ভেতরে বসত করে

মানুষ হুমায়ুন ।

.......................................................................................


মনের ভিতর বাংলাদেশ

✍️বিশ্বজিৎ সেন

 

মনের ভিতর আছে আমার আর এক বাংলাদেশ

সেইখানে নেই জ্বালাও পোড়াও সাম্প্রদায়িক শে।

সেইখানে যে নেমে আসে দল বেঁধে সব পরী

 

মহানন্দে শিশুর মতোই হাত ধরে নাচ করি।

আমায় যখন ইচ্ছে করে আঘাত করে কেউ

মনের ভিতর হ্রদের জলে সৃষ্টি করি ঢেউ।

 

ঢেউ থেকে যায় বার্তা উড়ে লাল সবুজের বুকে

কী যে শান্তি পাই গো তখন থাকি পরম সুখে।

কাঁদলে কাঁদে পরীগুলো হাসলে হাসির ঝড়

দেয় বইয়ে নড়ে ওঠে মনের বাগান ঘর ।

 

হৃদয় জুড়ে আছে আমার লাল সবুজ এক দেশ

নেই সেখানে হানাহানি নেই খুন গুম দ্বেষ।

আমি আমার স্বপ্ন বুনি ঠাকুরমায়ের সঙ্গে।

নীল ছায়া আর সবুজ হাওয়া নিয়ে আসে বঙ্গে।

  .......................................................................................

 

ভাল্লাগে না

✍️নজরুল জাহান

 

আসলে খুব রাগ ধরে যায় মাঝে মাঝে

ইচ্ছে করে তুলে একটা আছাড় ঝাড়ি

নিজের পাছায় গোটা কয়েক লাথি মারি

তা না করে সময় নষ্ট বাজে কাজে।

 

হঠাৎ করে দাঁড় করায় কেউ পথের বাঁকে

হল্লা-চিল্লা-খিস্তি ঢোকায় চোখে নাকে

এই যে বলি ভাল্লাগে না তবু ডাকে

ইচ্ছে করে ঘুষ্যি লাগাই উল্টোটাকে।

....................................................................................... 

  

নারী ও আকুলতা

✍️ আরিফ চৌধুরী

 

একলা আমি পথ চলেছি

তোমার সাথে দেখা।

পথের মাঝে ছড়িয়ে দিলে

আলোর অরূপ রেখা,

 

মনের মাঝে কেমন তরো

ভাবনা এসে জাগে।

বসন্তের আলোয় বাঁধ্যে

ভালোবাসার রাগে।

 

কেমন তরো বুকের ভেতর।

আর্তনাদের বাঁশি।

তোমার ঝর্ণাতলায় স্নান করতে

একলা ছুটে আসি,

 

কোথায় তোমার আগলে রাখার

গভীর আকুলতা

ভালোবাসার গহীন জুড়ে

মিথ্যে ফাঁদ পাতা।

 

চোখের জল মুছে এসো

বসন্ত রাত কালি

পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে

দেখতে ফালি ফালি।


.......................................................................................

 

ক্ষয়িষ্ণু ভালবাসা

✍️ জিন্নাহ চৌধুরী।

 

তুমি রাতের বেলায় পূর্ণিমার চাঁদ উঠা দেখেছ

কি নির্মল, স্নিগ্ধ, অপূর্ব জ্যোতি বলয়

তোমার অজান্তেই তোমার হৃদয়ের মাঝে

এমনি একটি চাঁদ উঠে রোজ রোজ যার প্রভায়

তুমি মানুষকে উপলব্ধি করো।

 

মাটি, নদী, ফুল, পাহাড় ঝর্ণাকে বুকে পেলে

তুমি সারারাত জেগে জেগে কি এমন অংক করো

যোগ-বিয়োগের সূত্র জানা আছে তোমার?

সপ্তাহে সাতটা চুমু থেকে পাঁচটা বাদ পড়ে গেলে

বিয়োগ ফল কতটা হৃদয় বিদারক তা কি তুমি বুঝ?

 

অংক নয়, মানাঙ্ক করা, আছে আমার।

আমি জানি তোমার মন-মন্দিরে জ্বলতে

থাকা চাঁন, অংক, খাল, নদী, পাহাড়

রোজ রোজ তোমায় শাসায়

তাইতো আমি ভরসা পাই

ভালবাসি ক্ষমাহীন সততায়!

.......................................................................................

 

এসো যুদ্ধ করি

✍️ মোহাম্মদ সাদউদ্দিন (আরজু) ভারত থেকে

 

ওরা আমাদের সুন্দর সকালকে

কলুষিত করেছে

প্রতিটি দিনরাতকে দুর্গন্ধে ভরে দিয়েছে

আমাদের অন্দর মহলে ঢুকে খাজ কেটেছে।

 

ওরা আমাদের প্রতিটি ইচ্ছাকে ধুলিসাৎ করেছে

আমাদের প্রতিটি ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে

আর নয়, এবার সাবধান হও।

এসো এবার যুদ্ধ করি।

 .......................................................................................

 

ওম ভগায় নমঃ

✍️অনিন্দ বড়ুয়া

 

যে খেলাতে বারবারই চাও হারতে তুমি

ইচ্ছে করে, এমন খেলায় ইস্তফা দাও

এবার নারী, ঢাল-তলোয়ার ঘুরিয়ে হাওয়ায়

 

লাভ করা যায় যেসব ভুমি যুদ্ধ বিনাই;

সেই ভূমিতে বাস করে না ক্ষত্রিয়কুল,

রক্তে যাদের হাৱা-জেতা নেশার মতো

সহজাত; সন্ধি করার অধিকারও প্রাপ্য তারই,

 

থাকলে রাজি নতুন করে করতে পারি আবার শুরু

যুদ্ধ যুদ্ধ। বাৎসায়নের স্কুলে নেই প্রথম থেকেই

ছুটির ঘণ্টা বাজার নিয়ম; সন্ধ্যা হলেও

 

মন্দিরে তার দীপ জ্বলে না, ধূপের থালায়।

হয় না হোমও,

লগ্ন এলে সমর্পণের শিষ্যরা তার রতির আশায়

মন্ত্র জপে যুক্তকরে- “ওম ভগায় নমঃ নমঃ

....................................................................................... 

 

সত্য-বিশ্বাস

✍️প্রাকৃতজ শামিমরুমি টিটন

 

অনিত্য-দেহে নিত্য-খেলেরে

নিত্য-সত্য অনিত্য-দেহে

অনিত্য- সত্য নিত্য-বিশআস

নিত্য-অনিত্য-সত্য-বিশ্বাস

 

নিত্য-খেলেরে অনিত্য-লয়ে

অনিত্য-নাশে নিত্য-বিলাসে

নিত্য-জন্ম অনিত্য-মৃত্যু

জন্ম-মৃতু-সত্য-বিশ্বাস।

 

সত্য-বিশ্বাস অধরের-গানে

এ-কোন-সুর দ্বৈরথে-বাজেরে

আত্ম-জীবন সত্য-বিশ্বাস

চরম-লন্ধ-ত্তর-নিঃশ্বাস

 

দ্বন্দ্ব-দ্বৈরথে সত্য-সরবে

অনিত-সত্য বিশ্বাস-প্রলয়ে

জগৎ কর্মে ভুবন-ধর্মে

সত্য-বিশ্বাস-নিরব-দ্বন্দ্বে

 

জীবন-তুল্য সরব-সত্য।

নিরব-বিশ্বাস জীবন-মূল্য

সরব-ভূবন নিরব-ঈশ্বর

সত্য-বিশ্বাস-তোমার-তুল্য

অনিত্য-দেহে নিত্য-খেলেরে।

.......................................................................................


অস্থিরতা

✍️শাহনাজ পারভীন

 

তোমাকে দেখার জন্য কেন এই অস্থিরতা?

হৃদয়ের মরুদ্যানে স্নায়ুর কাঁপন,

নদী জোয়ারের বাঁধভাঙ্গা প্লাবন।

 

মনে হয় কাছে-ই দাঁড়িয়ে তুমি,

হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারি আমি

 

অনুভবে মনে হলো

তাজমহলের চেয়ে তোমাকে দেখাই শ্রেয়।

হৃদয়ে ধ্বনিত হলো একটি শব্দমালা,

তুমি আমার অনেক প্রিয় ।

.......................................................................................


নীল বেদনার কাব্য

✍️কোহিনুর শাকি

 

কখনো কখনো নিজেকে বড়

নিঃসঙ্গ মনে হয়

একাকীত্বের নীরব যন্ত্রণাগুলোর

কঠিন স্পর্শে কেঁপে ওঠে মন।

 

স্বপ্নের দালান কোঠা

কল্পনায় গড়া ইমারত

ধ্বসে পড়ে প্রতিনিয়ত

দুর্ভাবনার কণিকারা যেনো

নীরবে করছে আলিঙ্গন।

 

বরফ গলা কষ্টগুলো

বৃষ্টির মত করে

ঝরে ফেলে আসা স্মৃতিটুকু

কেবলই মনে পড়ে।

 

আর মনে পড়ে আমার আকাশে

তুমি উড়েছিলে বিহঙ্গের মতো

চাঁদনী রাতে জোছনার আলোয়

তোমার দুহাত ভরে যেতে

 

রোদ্রের খরতাপে ক্লান্ত হতে তুমি।

পাশে থেকে মেঘ হয়ে

ছায়া দিতাম আমি।

 

আজ চারপাশে কেউ নেই

তুমিহীন পৃথিবীতে

সবকিছু শুন্য শুন্য মনে হয়

নীল বেদনার ছোঁয়ায় তাই

আমি ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত।

  .......................................................................................


 প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

✍️ হোসাইন আনোয়ার

 

ভালোই করেছে প্রভু, পুরুষ বানিয়েছ বলে

নারী বানাও নি আমায় সাম্প্রতিক কালে ।

 

ভালোই করেছ প্রভু পুরুষ বানিয়ে বলে

তা না হলে অবিবাহিত সখিনা বিবির মত

আমাকেও এক বিশাল তলপেট নিয়ে চলতে

হতো

গাঁয়ে গঞ্জে, প্রকাশ্য লোকালয়ে।

 

কোট কাচারী, জনসদ্র, বিচারকের কাঠগড়ায়

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ, হাজারো কৌতুহল

চোখে আমি ধর্ষিত হতাম বার বার ।

 

পত্রিকায় হেডলাইন, টিভি ক্যামেরা,

সাংবাদিকের জেরা।

জননেত্রী দেশনেত্রী কামড়া-কামড়ি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

সবাই ব্যস্ত হত আমাকে নিয়ে।

 

অথচ,

এসব কিছুই হয় নি

নিজগুণে পুরুষ বানিয়েছ বলে।

.......................................................................................


  


কথা দিয়েছিলে

✍️সাঈকা জান্নাত চৌধুরী

 

কথা দিয়েছিলে তুমি আসবে,

তাই তোমার দেয়া নীল শাড়িটা পড়ে

সে সমুদ্র তীরে আজও তোমার অপেক্ষায়

কথা দিয়েছিলে তুমি আসবে,

 

হাতে একগুচ্ছ গোলাপ সেখান থেকে

একটি গোলাপ আমার খোপায় পড়বার প্রতীক্ষায়

কথা দিয়েছিলে তুমি আসবে,

আমার হাত ধরে সাগরের তীরে,

কিছুক্ষণ একসাথে বসে থাকবে।

কথা দিয়েছিলে তুমি আসবে।

 

পাতলা ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি মেখে রাখবে।

আর চুপি চুপি ‘তোমায় ভালবাসি' বলবে

কথা দিয়েছিলে তুমি আমায়

দুজনে একসাথে আমৃত্যু কাটাবে।

 

কথা দিয়েছিলে, সেদিন বিকেলে তুমি আসবে

তাই দু'চোখ হাজার স্বপ্নের কাজলে সাজিয়েছি

তুমি আসবে বলে, তাই তোমার স্পর্শধন্য ললাট

আজ রাঙা কুমকুমে রাঙ্গিয়েছি।

 

তুমি পারলে না আমায় দেওয়া কথাগুলো রাখতে,

শেষ বিকেলের বৃদ্ধ সবিতার মত

হারিয়ে গেলে সিন্ধুর ওপাড়ে।

তাই আমি আজও সেই তীরে হাওয়ায়

ভাসছি তোমার ফেলে যাওয়া নিঃশ্বাস ঘিরে...।

 .......................................................................................

  

আমি তখনো তোমার

✍️খোশনুর

 

হঠাৎ সুরভিত হাওয়া যদি ছুঁয়ে যায়

নদীটায় চাঁদ দোল খায়

সূর্য ঝকমক করে বিকেলের ঝিলে

চেনা সুরে গান গায় অচেনা কেউ

 

আর সন্ধ্যে হয়ে যায় আরো সুন্দর

ধূপের ঘাণে পবিত্র প্রত্যাশায়

আজান হয় মসজিদে,

গীর্জায় উপসনা আর মন্দিরের উলুধ্বনী

স্ব সত্ত্বায় জেগে ওঠে যদি ।

 

নশ্বর যৌবনের মুক্তো তন্ময়তার পবিত্র সমর্পন

তখন আমি এসেছি খুব কাছে ধরে নিও!

প্রেমতো চলে বিলম্বিত লয়ে

 

প্রেম জ্বলে অগ্নি হয়ে, আকাক্ষার স্নায়ুতে |

প্রেম অবিচল অৰিৱল অটুট সৰ বয়সে।

সব সময়ে দুই জগতের সেতুপথে।

 

ফুল দেখে আমাকে মনে করো

ধুলো ধুয়ে পাবে আমাকেই,

ঐ তারার ঝিকমিক আমি এই যে।

 

অশ্রু ঝড়ালে এখানেও আমি।

বিভিন্ন রূপকে আমি তোমার চারদিকে।

এই যে বিষণ্ণতা এই একা তুমি,

 

এখানেও আমার সমগ্রতা।

তুমি আমার আমি তোমার।

জীবনে তোমার মরণে হবোকার?

তোমারি। তোমার নৈঃসঙ্গের স্মৃতিদ্বীপ আমি।

.......................................................................................

 

 

আরাধ্য পদাবলী

✍️মানজুর মুহাম্মদ

 

ক.

পকেটে রাত নিয়ে চুরি,

ঘুমিয়ে যাবো যদি পাই একটু ফুরসত।

আসেনাতো সেই মহেন্দ্রক্ষণ।

তোমাকে শেষ দেখার,

জলমগ্ন চোখ জ্বালায় আগুনের দস্তখত।

 

খ.

ডাকে ভালোবাসার বৈশাখী লগ্ন

ডাকে বকুল তলায় ঘ্রাণ মাখা ছায়া

আজ না হয় নষ্ট হবো

নষ্ট হয়ে কষ্ট পাবো।

তোমার মায়া উড়িয়ে দেবে

কঠিন লজ্জা, হায়া।

 

গ.

চলো ফিরে যাই এথেন্সের জলসায়

এরিস্টটলের কানে কানে বলি

আমাদের গণতন্ত্র তৃষ্ণায় কাতর,

বারেবারে জল চায় ।

.......................................................................................

বসন্তের কুজন

✍️আশামণি

 

তোমার সাম্রাজ্যের ধন ভান্ডার

তোলা থাক আকাশের সিন্দুকে

পরিপাটি ড্রইং এ শোভিত হোক ললনারা।

মালির নিপুণ বাগানে বসন্তের কোকিল

সুরক্ষিত গেট দারোয়ান

খৈনি পিষুক আনমনে দুহাতের তালুতে

সাম্রাজ্যবাদী পুরুষ।

 

কবির কাছে এ সবই নিতান্ত মামুলী

কবি তোমার রোম দগ্ধ বুক দাবিদার

শূন্য পান পাত্রের অপলক দৃষ্টির দাবিদার।

এক ফোঁটা জলও কোথাও অবশিষ্ট নেই?

নাকি স্বেচ্ছাচারী জমিদারের মত

নিঃশেষ করেছে?

 

সর্বহৃত পুরুষ কৰি ভিখারী নয়

কৰি যা পেতে চায় তা বন্ধ করেই

জলের সুরঙ্গ পথ তৈরী করেই

সাহারায় শোভিত হবে রাফলেসিয়া ।

.......................................................................................


কর্ণফুলী

✍️ অমিত বড়ুয়া

 

ঢেউয়ে ঢেউয়ে কর্ণফুলী জাগে।

দেখতে তাকে কি যে দারুণ লাগে

রসিক মাৰি সাম্পান চালায় ধীরে

 

কোথায় যাবে কোন সে অচিনপুরে

মাঝির গানে মন উদাসী হয়।

ঘরের ছেলে আর কি ঘরে রয়?

 

দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে যেতে

মনটা আমার উঠল কেমন মেতে

কর্ণফুলী চলছে আঁকাবাঁকা।

দু'পাশে তার মধুর ছবি আঁকা।

.......................................................................................

 

ধ্রুব সত্য অগ্নি

 ✍️ মোখলেছুর রহমান

 

এক এক করে সবই হারিয়ে যায়।

এক নিষ্ঠুর ধ্রুব সত্য গ্রাস করবে সবাইকে

মিশে যাবে প্রিয় মুখগুলো।

হারিয়ে যাবে যৌবন

ফিরবে না কোন কিছুই।

 

আমিও হারিয়ে যাবো এক অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে,

ডুবে যাবে কালের সীমাহীন গর্ভে।

 

আর কখনোই ফিরে তাকাবে না এই মহাকাল।

কখনোই দেখা হবে না ফেলে আসা অতীত।

যা অনিবার্য কারণ.....

কালের স্রোতে মিশে যা.....।

 .......................................................................................


আমারই রক্তে

✍️ তামান্না জলি

 

যারা কেঁড়ে খায় পাঁচশত কোটি

মানুষের মুখের গ্রাস।

যারা অনিশ্চিতের মুখে

ঠেলে দিচ্ছে দেশ,

যারা উপযোগী করে তুলছে

স্ব-স্ব দেশগুলোতে

সন্ত্রাসের বাস।

 

যারা সৃষ্টি করছে

মনের ভিতর ত্রাস।

যারা বাংলার মানুষের

খাবারের থালায়।

 

তুলে দিচ্ছে জন্তু জানোয়ারের ঘাস।

দোয়া চাই,

যেন আমারই রক্তে লিখা হয়,

তাদের সর্বনাশ।

  .......................................................................................

   

আমড়া কাঠের চেঁকি

✍️ অরুণ শীল

 

মাথার ভেতর লেখার পোকা

ঢুকে যেদিন মারলো টোকা

সেদিন থেকে পাল্টিয়ে নাম

হলো অরুণ শীল।

 

বিজ্ঞজনে কত্ত বোঝে!

সবকিছুতে ছন্দ খোঁজে

জানেন শুধু সোজাসুজি

দিতে অন্ত্যমিল।

 

নেই কিছু তার লেখাপড়া

তবু লিখে পদ্য ছড়া

নিজের টাকায় বের করে বই,

লিটল ম্যাগাজিন।

 

ছন্দ-ছড়ায় সুর উড়িয়ে।

হঠাৎ করে যায় ফুরিয়ে

এখন নাকি চাকরিতে সে

কাটায় সারাদিন।

 

তবুও সে আড্ডা মারে।

আড্ডাতে কী গপ্পো ছাড়ে

আগের মতো জানে না সে

করতে লেখালেখি,

 

বন্ধুরা সব দেখলে তারে

আড়ালে টিটকারী মারে

চুপি সারে ডাকে তাকে

আমড়া কাঠের চেঁকি।

 .......................................................................................

  

আমার মানসী

✍️ সৌরেন

 

অঘ্রাণের সোনালী ধানশীষে

এক মুঠো রোদুরে উজ্জ্বল তোমার মুখের পানে

আমি চেয়ে থাকি

এক পরিতৃপ্ত কৃষাণের মত ।

 

তোমার শ্যামল শরীর লাবণ্যে ভরে ওঠে,

আমার মুগ্ধ আঁখিপটে।

মনের জানালায় খেলা করে উত্তরায়ণের বাতাস।

তুমি পরিপূর্ণা- আমি তৃপ্ত।

 

বসন্তের সিঁদুরে পলাশ আরও রক্তিম হয়,

ভালোবাসা ছুঁয়ে থাকে তাকে।

দখিনা বাতাসে তোমার অলকে ঝরে পড়ে রেনু ।

তোমার আমার মাঝে মোহময়ী খুশীর উদ্দামতা।

 

শ্রাবণের দুরন্ত যৌবনা তটিনীর স্রোতে

আমার শালতি ভেসে চলে

তোমার ফেনিল উচ্ছলতার মাঝে

আমি সুখী- তুমি আনন্দিতা।

 .......................................................................................

  

স্মরণে রেখ

✍️ মনি ইসলাম

 

রোদ্রে পোড়া কৃষ্ণচূড়ার রঙ্গ দেখেছো কি?

ভাষা শহীদের রক্ত সেখানে একে রেখেছি।

 

শিমুলের ডালে বুলবুলি ঐ

ধানের শিষে নাচে যে চড়ই

কে দিল এই অপার স্বাধীনতা

বলতে পার কি?

 

শত যোদ্ধার অঙ্গীকারে

এ স্বাধীনতা পেয়েছি।

 

তপ্ত রোদেও কৃষকের মুখ

অবাধ্য কিশোরের সেই জলে খেলা

রাখাল বাঁশিতে হয় আত্মভোলা

ড়ন্ত বিকেলে গোধুলীর আলো

বলতো দেখি কেমনে এলো?

 

শত বিরঙ্গণার আত্মত্যাগে

এ সুখ যে পেয়েছি।

 

শিশিরের উপর ঝলমলে আলো

বাঙালীর বিবেক কে জাগালো

বলতে পারো কি?

 

লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে

এ আলো দেখেছি।

....................................................................................... 

  

অজান্তে ফুরায় আত্মজ সঞ্চয়

✍️ নাজিমুদ্দিন শ্যামল

 

আমাদের জানালার পাশে জোড়া শালিক

নারকেল গাছের সাথে ঝুলে থাকা

পাখির বাসা আর আজকের রোদেলা সকাল

 

চলে যাবে কিছু না বলে ।

এই নির্বাক চলে যাওয়ার নাম ভালবাসা।

 

আজকের কৃষ্ণচূড়া বসন্ত বাতাস

তোমার চুলের উক্ষা

এসব স্মৃতি কেবল আত্মা সঞ্চয়

এই গোপন সঞ্চয়ের সমষ্টি জীবন ।

 

আমরা তো জীবন অজান্তেই প্রতিদিন করি যাপন

প্রতিদিন ভালবাসার জন্য, কষ্টের জন্য

সময়ের জন্য আমাদের অনন্ত আকুতি

কেবল জীবনের কার্নিশে জল ছবি আঁকে।

 

কিছু জল আর জীবন ছবি।

আমরা কোন ফ্রেমে বাঁধবো বলো?

তারপরও তো শূন্য ফ্রেমই শুধু ঝুলে থাকে

 

জীবন জুড়ে কিংবা স্মৃতির পাতায় পাতায়

আহ! অজান্তেই ফুরিয়ে যায় জীবন সময়।

 .......................................................................................

    

হারানো সুর

✍️ লুৎফুন নাহার হাসি

 

বর্ষা শেষ হয়ে গেছে

শরতের মেঘগুলো লুকোচুরি খেলে

মাঝে মাঝে আকাশ নীলে

তারাদের আনাগোনা।

 

এরই মাঝে আবার শুরু হলো

বৃষ্টির ঝিরঝিরে হাওয়া।

 

ভেবেছিলাম বর্ষায় ভিজে যাওয়া সেই মন

পুরাতন স্মৃতির আবেগ বিহ্বল কবিতার সুর

নিয়ে গেছে সাথে করে ।

 

হৃদয়ের মাঝখানে রয়ে গেছে যে

সে যেন আবার এসেছে ফিরে।

সারাদিন রিমঝিম ঝিপঝিপ বৃষ্টি

কি যে এক অনাসৃষ্টি।

 

হারানো শ্রাবণ যেন ফিরে ফিরে আসে

ভালোবাসা ভালোলাগা স্মৃতি বিভ্রাট।

সময় অতিক্রম করে হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার

কেবলি করাঘাত করে।

 

আসি শুধু চেয়ে থাকি

জানালার পাশে ভিজে যাওয়া সবুজ গাছে

ফুল নেই তবুও কি।

 

অপূর্ব সুরভী ছড়ায় বাতাসে

আমি পেয়েছি খুঁজে হারানো সেই শ্রাবণকে

কষ্টগুলো ধুয়ে মুছে

যেমন করে ভালোবাসা ফিরে আসে।

 .......................................................................................

 

 হারু গা খিতা

জাপানী কবিতা

 

হারু গা খিতা, হারু গা খিতা,

দেকো নি খিতা

ইয়ামা নি খিতা, সাতো না খিতা

নো নি মো খিতা।

 

হানা গা সাকু, হানা গা সাকু,

দোকে নি সাকু,

ইয়ামা নি সাকু, সততা নি সাকু

নো নি মো সাকু।

.......................................................................................


 

(কবিতাটির অনুবাদ নিম্নরূপ) 

বসন্ত এসেছে।

 

বসন্ত এসেছে, বসন্ত এসেছে

কোথায় এসেছে?

পাহাড়ে এসেছে, গাঁয়ে এসেছে

সবুজ ক্ষেতে বসন্ত এসেছে।

 

ফুল ফুটেছে, ফুল ফুটেছে

কোথায় ফুল ফুটেছে?

পাহাড়ে ফুটেছে, গাঁয়ে ফুটেছে

সবুজ ক্ষেতেও ফুটেছে।

 

(সংগৃহীত)

 .......................................................................................

    

বিচ্ছেদ

✍️ আকতার হোসাইন

 

মৃত রমণীর পাশে শুয়ে শুয়ে রাত কেটে গেলো।

যখন সকাল হলো, দেখি তার তুষারপ্রবণ দাঁতে ক্রসরেণু

 

শস্যগন্ধ চুলে উড়ে বসে কাঙাল পায়রা

আর, সরল বণেদি ত্বকে বিগত দিনের কিছু আদর-ছত্রাক।

 

যথারীতি লোকক্রীয়া শেষে

আমি তাকে সঁপে দিই সময়ের ক্ষুধার্ত উদরে।

 

ভাবি, বিধিবদ্ধ প্রণয়ের যবনিকা শেষে

আমি আজ কুমার স্বাধীন।

 

ইচ্ছে যখন রাতে ঘরে ফিরি। ভাবলেশহীন।

প্রশ্ন নেই, কান্নামুখ অক্টোপাশ-ক্ষোভ-খেদ নেই

অন্তিম যাত্রীর সাথে একই প্রকোষ্ঠে বন্দি প্রচ্ছন্ন শবভিতি নেই

 

তবু, শয্যা ঘরে স্বপ্নময় ঘুমের সাঁতারে।

নীলাভ আলোর খাঁচা ভেঙে

তেড়ে আসে ইতিকথা, বিবিধ সংসার ভঙ্গি ক্ষুধার্ত কুমিরের মুখ।

 

অন্য ঘরে, আমাকে অবজ্ঞা করে আমারই ছায়া-প্রচ্ছায়া

রক্ত-জল, মাংস-মাটি, মূল-মজ্জা-হাড়

 

জড়ো করে যতোসব বাতিল উপাচার

স্মৃতিযজ্ঞ শুরু করে আমারই মালিকানাধীনে।

 

বিগত রমণী সেই উপভোগ্য অগ্নিফাঁদ দেখে

মুগ্ধ আয়েশী চোখে স্বচ্ছতোয়া জলে শুয়ে হাসে।

 .......................................................................................

  

এক বৃষ্টি মুখর দুপুরের গল্প

✍️ মুহাম্মদ নুরুল আবসার

 

আকাশের কোথাও এক টুকরো মেঘ ছিল না।

আমৱা ধীর পায়ে পাহাড়ের শীর্ষচুড়ায় উঠলাম।

পাহাড়ের নির্জনতায় বৃক্ষরাজির হিন্দোলিত ছায়ায়

আমরা পরস্পর নিবিঢ় সান্নিধ্যে উদ্মিত হচ্ছিলাম

 

ঠিক তখনই ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি এলো

তুমুল বৃষ্টি আর বাতাসে

পাহাড়ের সব কিছু এলোমেলো করে দিল।

 

তোমাকে এবং আমাকে

এখন এ বৃষ্টিমুখর দুপুরে

যৌবনের জয়গান শোনাতে তুমি ডেকেছিলে

আর আমি শোনালাম তোমাকে।

 

জীবনের দুঃখ জাগানিয়া লিরিক

তোমার যৌবনের জয়গান এবং

আমার জীবনের দুঃখ জাগানিয়া লিরিকে

সেদিন একাকার হয়ে গেছি দু'জনে

বৃষ্টি মূখর সেই দুপুরের স্মৃতি।

এখনো আমাকে তাড়িত করে।

তোমাকে করে না!

.......................................................................................

 

কলঙ্ক মেখে

✍️ জুয়েল মাহমুদ

 

কলঙ্ক মেখে মেঘ ঝরে পড়ে বরষায়

সোনা রোদে জলকণা হাওয়া মেখে উড়ে যায়

এত আসা যাওয়া এত কিছু পাওয়া।

 

তবুও ওরাও কোনদিন নিজেদের বোঝেনি

তুমিও বুঝবে না.

 

তুমি আমার জীবনের গহীনে আসো

পারো যদি একবার আমায় ভালোবাসো

জানি পারবে না।

জল আর মেঘও পারেনি।

তুমিও পারবে না.

 .......................................................................................

 

ভাল কি থাকা যায়!

✍️ সাহিদা রহমান মুন্নী

 

চারিদিকে মানুষ রূপী হাজারো মানুষের আগাগোনা।

যেখানে বা যার কাছে নূন্যতম আশ্বস্থ পাওয়ার চেষ্টা করেছি

বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চক্ষু ভেদ করে বার বার বুঝতে হয়েছে

এ কী নিদারুন অপচেষ্টাই না করেছি।

 

ঝলঝল করা হীরার টুকরো ভেবে যা হৃদয়ের

একান্ত অন্তরীক্ষে গচ্ছিত করেছি যতবার স্বযতনে

ঠিক ততবারই সস্তামানের কাঁচ হয়ে

ক্ষত বিক্ষত রক্তে রক্তাক্ত হয়েছে

নিত্য নতুন আঙ্গিকে!

 

চোখের ভুলে কিংবা মনের ভুলে হীরা ভেবে যা তুলে নিয়েছিলাম

সবটাই ছিল ধারালো কাচ।

ঠিক যতটুকু জায়গায় আপনত্ব খোঁজার জন্য

হৃদয়ের অনুভূতিগুলো গচ্ছিত করে।

অগ্রপথে ছুটতে চেয়েছি এলোপাথারী।

 

মুখ থুবড়ে ঠিক ততুটুক দূরত্বে ছিটকে পড়েছি!!

সে যে কি দারুন কষ্ট ভেলকিবাজির পুরোটাই

ভেলকি খেলে চলেছে মানুষগুলো

কাছের মানুষ হয়ে এক অভিনয় নাটকীয়তায়...

 

আর আমিও বিশ্বাসের অবুঝ পঙ্খী

বারবার উড়াল দেই অবিশ্বাসের আকাশে।

ফিরে আসতে হয় রিক্ত হয়ে সবটুকু রিক্ততায়!

তেতো হয়ে যায় ক্রমশই অনুভূতিগুলো

নিজের চারিপাশে এত্ত মানুষরূপী ফানুষের ধূম্রছায়ায়,

ভাল কি থাকা যায়!

 

পোর খাওয়া ক্ষত বিক্ষত এ মনটা নিয়ে ক্রমশই

অশ্রুজলের চোরাবালিতে একটু একটু করে

নিমজ্জিত হয়েই চলেছি।

সেই থেকে এই অবধি, এত্ত হৃদয় হরণতায়

ভাল কি থাকা যায়!

....................................................................................... 

  

তুমি আসবে তাই

 ✍️ মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ

 

তুমি আসবে তাই আলোক সজ্জায় সাজিয়েছি আমি আমাকে

 

তুমি আসবে তাই অস্থিমজ্জায় গেথে রেখেছি আমি তোমাকে

 

তুমি আসবে তাই হৃদয়ের গহীনে চলে স্বপ্নের দোলাচল

 

তুমি আসবে তাই সেতারের টুং টাং ধ্বনীতে বাজছে বিহ্বল

 

তুমি আসবে তাই নুপুরের ঝংকারে আকাশ বাতাস মাতোয়ারা

 

তুমি আসবে তাই চারিদিকে সাজ সাজ রব আর আমি যেন দিশেহারা

 

তুমি আসবে তাই ফুলের সুগন্ধিতে ভরে গেছে আজ চারিদিক

 

তুমি আসবে তাই সুভাসিত হৃদয়ে দেখছি উদ্ভাসিত আলো ঝিকমিক

 

তুমি আসবে তাই পথপানে চেয়ে আছি কখন আসবে শুভ মাহেন্দ্রক্ষণ

 

তুমি আসবে তাই পাখির মত উড়তে চায় ছোট আমার উদাসী মন

 

তুমি আসবে তাই কখনও ব্যালকুনি কখনো জানালার গ্রীল ধরে চেয়ে থাকা

 

তুমি আসবে তাই অপেক্ষার প্রহর গুণছে আমার সাথী পাতা পল্লব, নদীর শাখা

 .......................................................................................

   

v সাহিদা রহমান মুন্নীর লেখা বই সমুহ পড়ুন

 

Ø জোনাকীর আলো বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Ø অনুভবে তুমি বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Ø নাচে ফড়িং তিড়িং বিড়িং ছড়ার বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Ø বিদগ্ধ যন্ত্রণা বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Ø এবং অতএব বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Ø সাহিদা রহমান মুন্নীর ইংলিশ কবিতা পড়তে ক্লিক করুন

 

 

  

 

#সমাপ্ত# 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.