আসলাম প্রধান 'র গুচ্ছ ছড়া
নাম সমাধান
নাতির কি নাম
দেবেন নানা
চিন্তা করে
না-পান
অভিধানেও নাম
খোঁজেন, আর
মাঝে মাঝে চা
খান!
যে-নাম হবে
মিষ্টি-মধুর
লোক দেবে স্বীকৃতি
স্কুলে যে নামখানিতে
ঘটবে না বিকৃতি-
এমন একটা নাম
পেতে চান তিনি
হবেও না যে
নামটা বিকিকিনি!
যেমন ধরো, নামটা
কারো 'বুলেট'
দুষ্ট যারা,
পাল্টে দিল 'টু-লেট' !
সমস্যা এইখানে-
নামের ভেতর
অনাম ঢুকে
হারায় নামের
মানে !
নাতির নামটা
দেবেন না তাই 'খোকা'ও-
মূর্খ যারা,
ভাবতে পারে
বাচ্চা বোকাটোকাও
।
নানার এসব যুক্তি
শুনে
নানি বলেন,
থামো-
ছন্দমিলের দ্বন্দ্বে
গেলে
পাবে না ঠিক
নামও !
এই যে দ্যাখো
আমার নামটা
'আঁখি'
আঁখির সাথে
পাখি মেলে
'রাখি' মেলে
মেলেও 'মাখামাখি
।
ছড়ায় ছড়ায় বলতে
পারো
পাবদা পুঁটি-টাকি
ঝাঁকাঝাঁকি-ডাকাডাকি
কিংবা চাখাচাখি
!
তোমার নামেও
ছন্দ হবে-
আবুল বাকি- ফাঁকি
তাই বলে কি
আমরা দুজন
নামছাড়া কেউ
থাকি ?
আসল কথা নামেতে
নয়-
মানুষ বড় গুণে
'লোকটি ভালো
'সবাই বলে
গুণের খবর শুনে
।
একটা ভালো অর্থ
দেখে
নাম রেখে দাও
নাতির
গুণ দিয়ে সে
করবে সেবা
সমস্ত দেশ-জাতির
।
..................................... .............................................................................
জীবনযুদ্ধ
ঘুম-আলস্যে
রোগ বাঁধিয়ে হার্টে-
মুষড়ে পড়ো চলন্ত
ঝঞ্ঝাটে ?
শত্রুভয়ে, সভ্য-শান্ত
তুমি
মালিক হয়ে সেজেছ
ভাড়াটে !
বুকে যদি সাহস-ই
না রাখো
তবে কেনো লোকালয়ে
থাকো?
ঘোরো গিয়ে অরণ্যে,
বৈরাগী-
একাএকা আপনাকে
ঢাকো ।
মনুষ্য সমাজে
বেঁধে বাসা
জব্দ করো বেদনা-হতাশা,
ছিন্নভিন্ন
লণ্ডভণ্ড করো,
তেড়ে আসা ভণ্ডামি-তামাসা
!
জন্ম থেকে আমৃত্যু
লড়াইয়ে
জিততে হবে কর্মবর্ম দিয়ে-
হার কী মানে
ক্ষুদ্র পিপীলিকা
প্রতিকূলে বাসগৃহ
বানিয়ে?
..................................... .............................................................................
সমান্তরাল
পেছনের দিনগুলো
হারালেম কই !
কত নদ-নদী পথ
কত মত-অভিমত
অতিক্রম করে
আজ দাঁড়ালেম কই !
পেছনের দিনগুলো
হারালেম কই !
শৃংখল ছিঁড়ে
পদ বাড়ালেম কই !
অভাবের চড়াঘাত
সমাজের স্বরাঘাত
পরাধীন যন্ত্রণা
তাড়ালেম কই !
পেছনের দিনগুলো
হারালেম কই !
আঁধারের বাঁকাঘাট
পাড়ালেম কই !
যা-ই ছিল তা-ই
দেখি
ভাঙা নৌকাই
দেখি-
সাহসী, গভীর
রাত মাড়ালেম কই !
পেছনের দিনগুলো
হারালেম কই !
..................................... .............................................................................
চামড়াছেলা কুত্তো
বইসা খাছে নবাবজাদা
জমিন বেচা ট্যাকা
নিয়া
কচ্চে একন,
ভিঁ নিছে মোর
চাটিচুটি, ফাঁকি
দিয়া !
একন মাটির দামকোনা
যে
আগের চায়া বাচ্চে
মেলা-
সেইকনা দেকি
কর্মা হোছে
পুরান পাপী,
আদাকেলা ।
চার বাপুতে
নিন না-পাড়ে
কাগজপাতি নাড়েচাড়ে-
উকট্যা বেড়ায়
কোনঠে এনা
খুদ-গুঁড়া তুষ
পাবে
চামড়াছেলা কুত্তো
হয়া
চাইটাচুইটা
খাবে ।
ভাবকাহিনী:
পৈতৃকসূত্রে
প্রাপ্ত জমি বিক্রি করে বসে খেয়ে খেয়ে নবাবজাদা
এখন ফতুর । লোকের কাছে বলে বেড়ায়, ক্রেতা তার
জমি ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে । বর্তমানে জমির দাম
বেড়ে যাওয়ায় তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। পিতাপুত্র
মিলে এখন রাতজেগে জমির কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখে, যদি কোনো খড়কুটো পাওয়া যায়; চামড়াছেলা
কুত্তার মতো চেটেপুটে খাবে ।
..................................... .............................................................................
গোড়ালি
সমগ্র শরীর
বোরখায় ঢেকে রেখেছ
শুধু গোড়ালিটুকু
দেখেই আমি মুগ্ধ
রূপালি সূর্যালোকে
হঠাৎ হঠাৎ চকচক করে ওঠে পাদমূল
বেড়ে যায় আমার
হৃদস্পন্দন
কল্পনার পরিধি
অজানা-অদেখার
প্রতি আকর্ষণ।
অনেক দূর থেকে
পাই পুরো শরীরের কড়ামিষ্টি ঘ্রাণ
আবেগে নিস্তেজ
হয়ে আসে নাসিকার ভেতরের অংশ
হৃদয়দূরবিনে
খুঁজে ফিরি তোমার শরীরের প্রতিটি স্তরের অপার সৌন্দর্য
মাঝে মাঝে অবাকত্ব
নাজেহাল করে দেয় জ্ঞান, চিন্তাশক্তি । সুবহানাল্লাহ!
কখনো আন্দাজেই
পুলকিত হই, বোরখার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা রূপলাবন্য
কিনারবিহীন
যৌবনসমূদ্রের রহস্য ।
নিরূপণ করতে
পারি না, এর প্রসারতা-অতলতা
কেউ পেরেছে
কিনা, জানি না
সকলের সাথে
আমিও গোড়ালি দেখেই তোমার বিশালতা অনুমান করে
চলেছি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর-
এ-তালাশ চলতেই থাকবে আমৃত্যু। ইনশাআল্লাহ।
..................................... .............................................................................
অট্টালিকার স্বপ্ন
সেদিন রাতে
ঘুমে ছিলাম ফজর হবার আগে
স্বপ্নে দেখি,
করছি বাড়ি ঢাকার আরামবাগে !
ব্যাংকে টাকা
হাজার কোটি- কপাল গেছে খুলে
এক নিমিষে সকল
অভাব গেলাম যেন ভুলে !
গুলশানে কি
বারিধারায়- পড়ছে না ঠিক মনে
কিনছি জমি পনের
কাঠা ,দেশের লোকের সনে !
পাজেরো কার
আমায় নিয়ে যাচ্ছে বিমানঘাটি
দেশ ভ্রমনে
চলছি ছুটে- রোম ইটালির মাটি !
বেশ কিছু দেশ
ভ্রমণ শেষে এলাম যখন ঘরে
ঠিক তখনি ঘুমটি
ভাঙে মুয়াজ্জিনের স্বরে !
আজান শুনে জেগেই
দেখি, ভাঙাঘরে শুয়ে
সারা মেঝেয়
বৃষ্টি পানি পড়ছে নুয়ে নুয়ে !
..................................... .............................................................................
ছড়ার ভেতর গল্প
ছড়ায় ছড়ায় গল্প
করে
বাচ্চাকে মা
ঘুম পাড়ায়
মনের কোণে ভাসতে
থাকা
অদ্ভুতুরে ধূম
তাড়ায় !
সকাল-বিকেল
মিষ্টিছড়ায়
কত্ত কী-যে
রোজ পড়ায়
একটু করে একটু
করে
লেখাপড়ার জোশ
ধরায়!
স্কুলে স্যার
ছড়ায় ছড়ায়-
শিশুর ভবিষ্যত
বাতায়!
কেউ বা ছড়ায়
গল্প শুনে
জীবন চলার পথ
হাতায় !
ছড়ায় গড়া মন্ত্র
পড়ে
ফকির-বেদে- যশ কামায়
জাত-বিজাতের
কেউটে-গোখুর
জিন-পরিদের
ধস্ নামায় !
ছড়ায় পরিপক্ক
নেতা
ছন্দে ছন্দে
চোট লাগায়
আমজনতার হৃদয়
খুঁড়ে
নির্বাচনে ভোট
বাগায় !
..................................... .............................................................................
বোনারপাড়ার
স্মৃতি
বোনারপাড়া স্টেশনে,
লোকোশেডের চতুর্পাশে
আমার পায়ের
ধুলোমাটি
মিশে আছে দুর্বাঘাসে!
রেলকলোনির অলিগলি
ইটপাথুরে দালানকোঠা
এই, আমাকে মনে
মনে
দিচ্ছে তারা
নানান খোঁটা!
লাইন ভাঙা শব্দ
করে
ট্রেনের আওয়াজ
কানে এলে
বাঁধনহারা ছুটে
যেতাম
কী সকালে- কী
বিকেলে !
রাত বিরাতে
মঞ্চে-মাঠে
জারি-সারি যাত্রাপালা-
ডিস এন্টেনার
আগ্রাসনে
ওসবে আজ ঝুলছে
তালা!
ওভারব্রিজে,
বুকস্টলে
চা"র দোকানে
আড্ডা কত-
হারানো সে দিনের
কথা
ভেবে ভেবে হই
আহত!
অনেক বছর দূর
শহরে
মমতাহীন এ তল্লাটে
যেমন থাকি,
এ মন হাঁটে
বোনারপাড়ার
রাস্তাঘাটে!
কোথায় কাজি
আজহার আলী-
হাইস্কুল ও
বাল্যবেলা
বন্ধু যারা
হঠাৎ করে
সেই যে কবে
ছাড়ল খেলা!
কতজনের নাম
ভুলেছি,
মনেও তাদের
গল্প নাই-
এমনি করে যাচ্ছি
ভুলে
অতীত দিনের
কল্পনাই !
..................................... .............................................................................
কৃষক দম্পতি
তুমি ঝিমাচ্ছ
কী মজা পাচ্ছ
আমি হাল চাষি
মাঠে
ভূমি কাটাকাটি
করি পরিপাটি
ফের যেতে হবে
হাটে !
বধূ উঠে বলে
সকালে বিকালে
আমিও কি খাঁটি
কম ?
বাসন মাজাতে
রান্না সাজাতে
বেরিয়ে আসে
না দম?
চলে গেলে মাঠে
বাড়িতে কী ঘটে
রাখ তুমি তার
খোঁজ ?
বাচ্চা তোমার
কী যে কারবার
ঘরে করে রোজ
রোজ!
করে হাঁটাহাঁটি
ভাঙে থালাবাটি
ছিঁড়ে ফেলে
যত বই
বলতো কেমনে
একা গৃহকোণে
এত এত জ্বালা
সই ?
তার কথা শুনি
বলি, ও গিন্নি
এটাতেই এত জ্বালা
?
তুমিই বলতো
যন্ত্রণা কত
গরু ও ছাগল
পালা ?
কোন্ পশুটায়
কই ছুটে যায়
কার ক্ষেতে
খায় ধান
সারাক্ষণ দেখি
আমিই একাকি
হাঁপায় না এই
প্রাণ?
কী করে যে থাকি
কাদাধুলো মাখি
মাঠেতে সকল
কাজে
মরি রোদে পুড়ে
তুমি থাকো ঘরে
রূপসী রাণীর
সাজে !
বধূ এটা শুনে
ক্ষেপে মনে
মনে
জ্বলে যায়-
বলে রাগে,
চুলোর গরমে
আমার মরমে
কত না আরাম
লাগে !
পাতিল নামাই
ছ্যাঁক কত খাই
একটু হলেই ভুল
দেহ পুড়ে যায়
কালি লাগে গায়
পাই না কো দিশ-কূল
!
কাল থেকে এসে
আমার আবেশে
তুমি নাও সব
কাজ
আমি যাব হাটে
পথে ঘাটে মাঠে
পড়বো চাষার
সাজ !
..................................... .............................................................................
বোচারাম চোকিদার
বোচারাম চোকিদার
-
কলাচোর ধরে
ফেলে
কী যে বকাবকি
তার !
শালা তুমি যাবা
কই ?
এইবার ঠেলা
বুঝো,
জেলে বসি খাবা
খই !
লোকে বলে অকর্মা
চোকিদার বোচারাম
তোরে ধরি একচোডে
অপবাদ ঘোঁচালাম
!
বিয়াইয়ের ছেলে,
মানে-
মেয়েটার জামাইয়ে
সারাক্ষণই খোঁটা
দেয়
খাই তার-ই কামাই-য়ে
!
আরে বাবা রিযিকটা
যার যার কপালে
নিশিরাতে রাজা
কেউ
মিস্কিন সকালে
!
আমি কী কাজের
লোক
'চ্যারম্যন'
ভালো জানে
কত বড় বড় কাজ
করেছি এ-পালোয়ানে
!
জিজ্ঞেস করে
তুমি জানবা-
অধমের সব কথা
মানবা !
স্বাধীনতা যুদ্ধে
পেলে সবে স্বাধিকার
অভাবের সংসারে
আমি দেখি আঁধিয়ার
!
আঠাশ বছর হলো
'চারকি'-
যা বেতন পাই
আমি
কী খানা-ই খাই
আমি !
খোঁজ নেয়া কারো
দরকার কি ?
পাই দুটো শাকপাতা
খে' ঠিকঠাক
মাথা-
নিরলস যাই খেঁটে
খেঁটে
কাজ করি পায়
হেঁটে হেঁটে !
বোচারাম চোকিদার
নেই 'ওকিটকি'
তার
অন্যের ফোনে
দেই মিসকল
হাতে নেই রাইফেল-পিস্তল!
দুঃখের কত কথা
কতভাবে বলে
সে
পিছে পিছে চোর
নিয়ে
অফিসেতে চলে
সে !
সম্বুখে সড়কের
মোড়
ঝোপ বুঝে কোপ
মারে চোর
ভোঁ-দৌড় দিয়ে
যায় হারিয়ে !
বোচারাম চোকিদার
হতবাক-
চোরটাকে হারিয়ে
ফ্যালফ্যাল
থাকে একা দাঁড়িয়ে !
..................................... .............................................................................
রূপনগরের সুন্দরী
রূপনগরে থাকে
বলেই
তার রূপসী কন্যা
হয়
অঙ্গে রূপের
বন্যা বয় !
শুনে অবাক- হাসতেছি বার বার
আলোর যুগেও
ঠাসা অন্ধকার !
দেখছি নানা
বিজ্ঞাপনে
দিচ্ছে টানা
শিক্ষা, জনে-
ফর্সা হতে,
এসব মাখো শ্যামলা গায়-
কালো মানুষ
থাকলো কেনো আফ্রিকায় ?
হাতিরপুলে কার
হয়েছে হাতির মতো ছেলে ?
বন্গ্রামে কী
দালান ছাড়া বনের দেখা মেলে ?
ছন্দমিলে বলবে
তুমি, উত্তরা-
থাকে অতি ধূর্তরা,
আর যা থাকে-
দৈত্যদানব ভূত
তারা !
কাব্য কী সব
সত্য হয় ?
ও কি মনের পথ্য
নয় ?
ছড়ায় অনেক ঠাট্টা
চলে
গল্পগুজব আড্ডা
চলে-
একটু এয়ারপোটটা
ছাড়ো
কাছে গিয়েই
দেখতে পারো,
উত্তরাতে মন্ত্রী
থাকে
এমপি থাকে
থাকে সচিব আমলারা
কুলিমজুর কামলারা-
............বুঝো
?
দু'চোখ মেলে
খুঁজো !
আবার বলো, সবুজবাগের
বাসিন্দারা সাচ্চা সবুজ-
বলছো যারা আস্ত
বোকা, বাচ্চা অবুঝ-
বাদামতলি কোন্
জমানায় বাদাম হত ?
এমন ডাহা কল্প
কথা শুনবো কত !
ভূতের গলি ভূত
থাকে, না-পেত্নী থাকে-
কে খোঁজ রাখে
? কে খোঁজ রাখে?
বলবে তুমি,
গর্ব করে
সব মতামত খর্ব
করে ,
ফকিরাপুলে থাকে
সবাই ফকির,
রাজারবাগে রাজাই-
কথাটা কেউ-ই
মানবে না- তা জেনো,
যতই শানাই বাজাই
!
রূপনগরের মধ্যে
শেয়ালবাড়ি
এ সত্যটা থাকছে
খেয়াল কার-ই ?
সেইখানে যার
রূপের কথা- রূপটি কার ?
তথ্য জেনো,
রূপ ছিল তার বাপ ও মার !
বংশ থেকেই রূপ
পেয়েছে মেয়ে
শহরবাসি দেখছে
চেয়ে চেয়ে !
..................................... .............................................................................
দুর্জনের দেশে
অচেনা অচেনা
লাগে চিরচেনা পথঘাট
একাএকা হেঁটে
যান অতীতের সম্রাট ।
চিনছেনা কেউ
তাকে, যে দেশের সন্তান-
পরিচিত জনেরাও
করে না-দেখার ভান ।
এড়িয়ে এড়িয়ে
যায় পাশে থাকা লোকজন
যারা করেছিল
তার ঝুটোএঁটো ভক্ষণ ।
স্বার্থের হেরফেরে
ছুটে গেছে বন্ধন
শোনে শুধু সুখময়
স্মৃতিদের ক্রন্দন।
যতদিন বাহুবল,
আছে ধনভাণ্ডার-
সকলেই নিকটের
বিশ্বাসী কান্ডার ।
যেই মাঝরাস্তায়
ইঞ্জিনে তেল নেই
নিরুপায়-অসহায়
পথিকের বেল নেই !
চারপাশ লোকালয়,
জনগণ- গর্জন,
মিলবে না একজন
মানুষের দর্শন ।
..................................... .............................................................................
আঁধার সমাজ
সত্যবাকের কণ্ঠ
চেপে ধরে
ওরা শুধু টাকার
জন্য লড়ে ।
যেখানে নেই
মায়া, মানবতা
একটুও নেই অধিকারের
কথা!
স্বার্থ লোভে
সুচিন্তা মোড় ঘুরে
হেঁটে বেড়ায়
একা, অনেক দূরে !
ওদের থেকে সূর্য-চাঁদের
আলো
সত্যি বুঝি,
আঁধারে পালালো ।
ন্যায়বিচারের
শক্ত শিকল ছিঁড়ে
পুণ্য পালায়
মসজিদে-মন্দিরে।
উপদেশের বাণীগুলো
ভয়ে-
লুকিয়েছে উপাসনালয়ে
!
লিপ্সাভরা রাস্তাঘাটের
বায়ু
জেগে ঘুমায়
স্বার্থত্যাগের স্নায়ু !
অমানুষে মিথ্যে
অভিনয়ে
টিকে আছে মানুষ
পরিচয়ে !
..................................... .............................................................................
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
.
সেকালের হলুদ
বা গৌরবর্ণের অট্টালিকাগুলো দেখেই আন্দাজ করা যায়,
এ সব রাজা-বাদশাদের
সুখানুভবের প্রাসাদ
এগুলোতে সাধারণের
প্রবেশ ছিল অসাধারণ ব্যাপার
আশেপাশের প্রশস্ত-পরিচ্ছন্ন
রাস্তাঘাট তাদের একান্ত বলে জনগনের চলাচলে থাকত বিধিনিষেধ
আজ টেকনাফ থেকে
তেঁতুলিয়া
জাফলং থেকে
শ্যামনগর
কুয়াকাটা থেকে
ভূরুঙ্গামারী
আখাউড়া থেকে
মুজিবনগর- মুজিবের স্বর্ণালী পরশ,
হাজার কিলোমিটার
সুপ্রশস্ত মজবুত নান্দনিক হাইওয়ে !
পদ্মা-যমুনার
প্রবল জলস্রোত
অশান্ত টেউ
ভেঙ্গে নির্মিত
অতীতকে হার
মানানো দৈবাকৃতির ব্রিজ- পুরো জাতির মায়াবীবন্ধন !
অসংখ্য রাজকীয়
সেতু-কালভার্ট রাস্তাঘাট, অলিগলি সাধারণ বাঙালির জন্য উন্মুক্ত
হলুদ-গৌরবর্ণ
ছাড়িয়ে নানা রঙে রঙিন লক্ষ লক্ষ বহুতল সুরম্য অট্টালিকা এখন কেবলি বাঙালির নয়, বাংলাদেশের
সকল মানুষের নিজস্ব সম্পত্তি ।
সম্রাটদের গরু-ঘোড়া-গাধার
গাড়ি
কাঠের নৌকোগুলো
এখন জাদুঘরে দর্শনীয়
কত হাজার বছরের
পরিবর্তন-
মাত্র ক-বছরেই
!
১৯৭১ থেকে কদিনেই
!
পুরো বাঙালি
জাতিই আজ গর্বিত নবাব-সম্রাট !
মাত্র একজন
মানুষের জন্য-
শেখ মুজিবুর
রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব ।
..................................... .............................................................................
অকৃতজ্ঞ
ভেবেছি আপন
যাকে
পদে পদে সে
আমাকে
ঠকিয়েই গেছে
চিরকাল-
যত প্রতিবাদ,
কথা
শাসনের কঠোরতা
সবটুকু হয়েছে
প্যাঁচাল।
যাকে দিয়েছি
বাগান
গলে নাই সে-পাষাণ
কচুপাতা রাখে
নাই জল-
তার দু-চরণে
পেশ
অনুরোধ-উপদেশ
পুরোটাই অচল-বিফল
!
কৃতঘ্ন এ-ভুবনে
কানে কম কম
শোনে
বিবেকের সরল
কেতাব !
সূর্যের আলো
নিয়ে
আঁধারে বিকিয়ে
দিয়ে
চাঁদ পায় দাতার
খেতাব!
..................................... .............................................................................
যমুনাপাড়ের
বাশশা
নদীভাঙা মানুষ
বা মুই
সোগটি যায়া,
শ্যাষে-
ভাসতে ভাসতে
আলুম এনা
তোমারঘরে দ্যাশে
।
খোরেতমোরেত্
কেছো না-চাম
খালি এনা চাছিনু
কাম,
প্যাটের দায়ে
কবাটা দিন
হাত নাড়িয়া
খাইম-
আশা আছে, চর
জাগিলে
আপন দ্যাশে
যাইম ।
কী কমো বা,
কপাল এলাও পোড়া,
যমুনা মোর কচ্চে
যে ঠ্যাং খোঁড়া-
পিত্তি বছর
ভাঙে,
ছৈলপোয়াতি কোছাত্
নিয়া নিয়া
ঘোরোম গাঙে
গাঙে !
ভাগিগুষ্ঠী
একঠে আছিল্ যারা
কেডা কোনঠে
আছে যে বা তারা !
কাঁয়োর সাথে
কাঁয়োর দেখা নাই-
বাশশাগুলা ফকির
হয়া একন
পরার দ্যাশোত্
কষ্ট করি খাই।
ভাবকাহিনী:
নদী ভেঙে সহায়-সম্বল
হারিয়ে ভাসতে ভাসতে তোমাদের দেশে এলাম । আমি দান-খয়রাত চাইতে আসি নাই । আপাতত কিছু
দিন তোমাদের দেশে কাজ করে খেতে চাই । নদীতে নতুন চর জেগে উঠলে আবার দেশে চলে যাব ।
যমুনা নদী প্রতি
বছর ভেঙে ভেঙে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে সর্বশান্ত করেছে । স্ত্রী-পুত্র-পরিবার নিয়ে এখন
বিভিন্ন এলাকায় কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই । আমার নিকটতম আত্মীয়দের কারো সাথে কারো দেখা
হয় না । যারা একসময় একসাথে, পাশাপাশি বাদশাহী জীবন-যাপন করেছি, এখন নদী ভেঙে সবাই ফকির
। ছন্নছাড়া হয়ে যে-যার মতো দূর-দূরান্তে কষ্টকর জীবনযাপন করছি । ]
..................................... .............................................................................
রাঘবপুরের ভূত
বোনারপাড়া কলেজ
থেকে
অল্প দূরে
রাঘবপুরে
ফকির পাড়ার
বাঁশবাগানে
ভূত ছিল যে
কতো-
গভীর রাতে তাদের
নাকি
রঙ-তামাশা হতো!
সে-জঙ্গলেই
বাড়ি করেন
আজহার আলী চাচা
কী দু:সাহস
অন্ধকারে
ভূতের সাথে
বাঁচা !
সেখান থেকে
মাইল খানেক
পশ্চিমে উত্তরে
কোন সাহসী কবে
কখন
মেরেছে ভূত
ধরে-
জায়গাটাকে
সব বল
"ভূতমারা"-
সে-স্থানেও
এখন অনেক
লোক বসতি পাড়া
!
বনবাগানে এক
সমানে
হচ্ছে বসত ঘর
ভূতের সাথে
বনের পশু-
পাখি দেশান্তর!
..................................... .............................................................................
দোহাই
হোসনে তোরা
বুড়ো রে কেউ
হোসনে তোরা
বুড়ো
পাল্টে যাবে
মতিগতি
মিষ্টিগলার
সুরও !
চামড়া ঝুলে
শুঁটকি হবে
পাকবে দাড়ি-চুলও
একে একে বল
হারাবে
হাড্ডি যতগুলো
!
চোখের জ্যোতি
কমে গিয়ে
দেখবি ধুলোধুলো
দাঁতপড়ে কেউ
ফোঁকলা হবি
লাগবে কানে
তুলো!
শরীরখানা কাঁচের
মতো
ভাঙবে গুঁড়োগুঁড়ো
দোহাই লাগে
কখনো রে
হোসনে বুড়োটুরো
!
..................................... .............................................................................
যাযাবরের ঠিকানা
ঘি-ডাঙা ওড
দিয়া তুমি
কালপানি গাঁও
যাবা
গাঁয়ের মোদে
নয়াপাড়াত্
চৌ-মোহনা পাবা
।
দখিনমোকে যে-ঘাটা'টা-
সেই ঘাটাখান
ধরি,
সাত-আট মিনিট
হাঁটার পরে
দ্যাকপা নজর
করি-
বায়েমুরাত্
ডিঘি আছে,
সমনে জুমার
ঘর-
ডানে মুরার্
বাড়িওয়ালা
একন যাযাবর
!
ওত্তি আছে যাযাবরের
ম্যালা পায়ের
ছাপ,
খুলির গোরোত্
নিন্দোত্ আছে
তার হারানো
বাপ ।
তোমার কাছে
তার-ই হয়া
কম মিনতি করি
আইসো এনা সেই
কবরোত্
দোয়া-দরুদ পড়ি
।
ভাবকাহিনী:
ঘি-ডাঙা রাস্তা
দিয়ে তুমি কালপানি গ্রামে যেও । গ্রামের মধ্যে নয়াপাড়া নামক একটা স্থানে চাররাস্তার
মোড় পাবে। দক্ষিণ দিকে যে-রাস্তাটি চলে গেছে, সেই রাস্তা ধরে সাত-আট মিনিট হাঁটার পর
লক্ষ্য করবে, বামে একটি পুকুর, সামনে একটি মসজিদ । তার ডানপাশেই যার বাড়ি, সে এখন যাযাবর
। ওখানে সেই যাযাবরের পায়ের অনেক চিহ্ন আছে এবং বাড়ির উঠোনেই কবরে ঘুমিয়ে আছেন তার
হারিয়ে যাওয়া বাবা । তোমার কাছে যাযাবরের পক্ষ থেকে অনুরোধ, তার বাপের কবরে একটু দোয়া-দরুদ
পড়ে এসো ।]
..................................... .............................................................................
বাবরি মসজিদ
.
আজ থেকে সাড়ে
চারশ' বছর আগে
তুমি হয়েছিলে
বাবরের অনুভূতি
প্রকাশ পেয়েছ
আজানের ধ্বনি হয়ে
ভেসেছ ভারতে
ডুবোজাহাজের মতো !
দ্বীনের দরদি
যাত্রীদের বুকে তুলে
ছুটেছ অনেক
বছরের পথ ধরে-
কত নদী, কত
উপনদী পার হলে,
কত যে পাহাড়,
কত বাঁধ ভেঙেচুরে!
তোমার মিনারে
আজানের ধ্বনি দিয়ে
নানা অভাগার
জুড়িয়ে দিয়েছ প্রান
কোটি কাঙালের
ভুল পথ তুলে নিয়ে
সঠিক পথের দানিয়েছ
সন্ধান!
পাপসমূদ্রে
তুমি যে পুণ্যদ্বীপ
মুসলমানের বেহেশত,
বালাখানা
আলোর দিশারী
অম্লান ভাস্কর
বিক্ষতপাখির
ওড়ার শক্ত ডানা!
যুগ যুগ ধরে
নতুন বধুর সাজে
উন্নতশীরে অনুক্ষণ
মায়াডোরে
এক এক করে তৌহিদী
জনতাকে
কোলে তুলে নিতে
হাজার লোকের ভীড়ে
আজ তুমি সাড়ে
চারশ' বছর পরে
কোন পাষাণের
শাবলে প্রকম্পিত !
বাজাও বিষাণ
কোন বিদায়ের ছলে
ভাঙার জন্য
হয়েছিলে নির্মিত!
.
বি:দ্র: ৬ ডিসেম্বর
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর সর্বপ্রথম আমার এই লেখাটিই দৈনিক সকালের খবর (২৪/১২/১৯৯২),
দৈনিক মিল্লাত (২৫/১২/১৯৯২)সহ আরো কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় ।
..................................... .............................................................................
খাঁটি বান্দা
ঘুটু করি মামলা
নাগে দিয়া
ঘরোত আছোম যুতকরি
বসিয়া !
এংকরি মুই ট্যাকা
কামাই করোম
নাই বাহে মোর
চোকোত্ এনা শরম !
২
পল্লা-পাতর
থুছোম এনা ফ্যারোত্
পোয়াখানেক কম
দ্যাম এক স্যারোত্ !
বোজোম আগে কাস্টমারের
ভাব
পরে করোম নাবের
উপুর নাব ।
৩
বাইছাবুইছা
চলোম হালাল-হারাম
খালি এনা আইল
কাইটা ভিন বারাম !
কোদাল মারোম
আ'লের তলেতলে-
জমিন হামার
এইংক্যা করি বলে !
৪
মানুষট্যা মুই
গাঁয়ের মোদে সোনার চায়া খাঁটি
জাল দলিলোত্
মারিয়া খাম অন্য মানষের মাটি !
সাদাসিদা নোকগুলাকে
দিছোম ঠ্যালা-প্যালা
ভুয়া দলিল করি
করি হছোম জমিনএলা ।
ভাবকাহিনী:
১। কৌশলে দু'পক্ষের
মধ্যে মামলা লাগিয়ে দিয়ে আমি ঘরে চুপ করে বসে আছি । বস্তুত, আমি এ-ভাবেই টাকা কামাই
করি । আমার চোখে কোনো লজ্জা নেই।
২। দাঁড়িপাল্লা
ও বাটখারায় হেরফের রেখেছি । ওজনে একসেরে একপোয়া কম দেই । খরিদ্দারের চোখ-চাউনি বুঝে
লাভের থেকেও বেশি লাভ করি ।
৩। আমি হালাল-হারাম
বেছেবুছে চলি । শুধু জমির আইল কাটি, কোদালের মাধ্যমে জমি বাড়াই ।
৪। গ্রামের
মধ্যে আমি সোনার চেয়ে খাঁটি মানুষ । জাল দলিলের মাধ্যমে আমি অন্যের জমি দখল করে ভোগ
করছি । ভুয়া দলিল করে করে আমি জমিওয়ালাও হয়েছি। ]
..................................... .............................................................................
ক্যাংকা করি যাম
কোষ্টা কাটোম
কোষ্টা কাটোম
কোষ্টাক থোম
পিলোত্
কোষ্টাগুলা
পিল আইলে ফির
জাক দ্যাম তাক
বিলোত্ ।
ভরটা দিনই হাতপাও
নাড়োম-
কোন সোমে যে
নিক্যাস ছাড়োম
শাওন মাসোত
কামের উপর কাম
অনুষ্ঠানোত্
ক্যাংকা করি যাম বাহে মুই,
ক্যাংকা করি
যাম?
কাইদনা হালাই
কাইদনা হালাই
পানি স্যাচোম
ভিঁয়োত্
সার-পানিতি
সোগটি খরচ
যায়না এনা জিয়োত্
!
বেছোন তোলোম,
গাড়োম ওয়া-
য়্যার মোদে
ফির কোষ্টা ধোয়া !
শিনট্যা উব্যা
ফোসকা পড়ে চাম-
অনুষ্ঠানোত
ক্যাংকা করি যাম বাহে মুই,
ক্যাংকা করি
যাম?
ভাবকাহিনী
:
শাওন মাসে পাটকাটা
, জাক দেয়া, পাট ধোয়া , পাটখড়ি বহন করে বাড়িতে আনা,তারপর কাদাজমি চাষ করে ফসল বোনাসহ
নানা কাজের ব্যস্ততায় অনুষ্ঠানের দাওয়াতে যাওয়া কি করে সম্ভব? সেটাই বলা হচ্ছে! ]
..................................... .............................................................................
চা-র টলের গিয়ানী
হাঁটুর সমান
বয়সও নয়,
গপ্পে শিয়ান
শিয়ান
চাও বা না-চাও,
অরা তোমাক
উব্দেইশ্যা
দ্যায় গিয়ান !
ক্যাও দ্যাখে
নাই সাট্টিফিকিট,
হাইস্কুল ও
কলেজ
আল্লাহ্ তা'লা
অরোক দিছে
পশ্মে পশ্মে
নলেজ !
চায়ের টলোত্
আড্ডা মারে,
এর-অর থেনে
চা খায়--
তাউত্যা পাকায়,
আলকুনি দ্যায়,
কার কতা কাক
নাগায় !
অরের মোদে পাবা
না বা
আল্লাহ্ খোদার
ভীতি
সোগ কেছোতি
অরা দ্যাকায়
পাকনামি-পণ্ডিতি।
হ্যাকাব্যাকা
এগ্লা সাপ-ই
গাঁও সমাজের
বোঝা
দুনাত্ অরা
ব্যাকাই হাঁটে,
গোরোত্ গেলেই
সোজা ।
ভাবকাহিনী:
বয়স ও যোগ্যতার
তুলনায় ওরা চাপাবাজিতে পটু; পাক্কা সেয়ানা । তুমি চাও বা না-চাও, ওরা নিজে থেকেই তোমাকে
জ্ঞান দিতে এগিয়ে আসে । ওরা কেউ হাইস্কুল বা কলেজ পাস করে নাই ! অথচ ওদের পশমে পশমে
জ্ঞান ভর্তি। ওরা গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা মারে । এর-ওর কাছে চা খায় এবং নানাবিষয়ে
বুদ্ধির তাউত্যা ( তাউত্যা একপ্রকার চিকন রশি) পাকায় ! উস্কানিমূলক কথা বলে । অন্যের
ব্যক্তিগত বিষয়ে নাকগলায় । ওরা আল্লাহ বা পরপারের ভয় করে না । গ্রামের প্রতিটি ব্যাপারেই
পণ্ডিতি দেখায় । সারাজীবন এঁকে বেঁকে চলে, মৃত্যুর পর কবরে গিয়ে সোজা হয় ! ]
..................................... .............................................................................
গাঁও ব্যাড়াবার সখ
ঢাকাত্ থেনে
বাড়িত্ আলুম
গাঁও ব্যাড়ালুম,
সখ মেটেনি তাও-
ক্যাংকরি সখ
মিটপে বাহে ?
ঘরোত্ যে-নাই
মাও !
ইতিউতি চায়া
দ্যাকোম,
সগলারি মাও
আছে-
মোর মায়ে যে
নিন্ পাড়ে ওই
নদীর বাতাত্,
বাঁশের থোপার
কাছে !
দুক্কু নাগে,
মায়ের আগে
বাপ-ই ভাগে
!
ঘর কর্যা আন্দার-
আদ্দে ঘাটাত্
থুয়া হামাক
হোছে পাগার
পার !
দোনোজন-ই দ্যাশান্তরি
ছাচ্ছে দুনার
মায়া-
জানোম না বা
কোনঠে তারা,
ক্যাংকা আছে,
মাটির তলে যায়া
!
ভাবকাহিনী:
গ্রামের বাড়িতে
এলাম । গ্রাম ঘুরে বেড়ালাম । তবুও সাধ পূরণ হলো না। কীভাবে সাধ মিটবে ? কারণ, আমার
মা-যে ঘরে নেই !
এদিকসেদিক ঘুরে
দেখি, সবার মা-ই বেঁচে আছেন। কিন্তু আমার মা আছেন নদীর তীরে, বাঁশবাগানে ঘুমিয়ে !
মায়ের আগে বাবা-ই
বাড়ি অন্ধকার করে চলে গেছেন । আমাকে মাঝপথে রেখে তারা দুজনেই দুনিয়ার মায়া ছেড়ে অন্য
জগতে চলে গেছেন। জানি না, তারা কোথায়, কেমন আছেন মাটির নিচে। ]
..................................... .............................................................................
ইনবক্সের বন্ধু
ছাগলে কি না
বলে,
পাগলে কি না
খায়-
এটিও মাঝে মাঝে
ফেবুতে দেখা
যায় !
ছেলেরা মেয়ে
সাজে,
মেয়েরা ছেলে
হয়-
ম্যাসেজে কত
কথা
কী মধু ঢেলে
কয় !
প্রেমেতে মজে
গিয়ে
আঁধারে ডুবে
যায়,
যখনি বুঝে ফেলে,
তখনি বলে, হায়
!
গলাটা শুনিনি
রে,
লুকিয়ে ছিলি-তুই-
আড়ালে থেকে
থেকে
কী-ধোঁকা দিলি
তুই !
..................................... .............................................................................
ঘটন-অঘটন
এত্তগুলা ডেমেন
দিয়া
তোমার সাথে
বচ্চি বিয়া।
কাম করিয়া খামো
ক্যা?
বাপের বাড়িত্
যামো ক্যা?
২
বিয়ার কতা শুনা
চ্যাংড়া
শরমে তাঁই তলাছে
কারো সাতে কতা
না কই
বাড়িত্ থেনে
পলাছে !
৩
বাপে খাছে জমিন
বেচি
হামি সেটি হাল
নে-গেছি !
হামার আছে হাঁটুত্
বল
জমিন দিছি ব্যা-দখল
!
ভাবকাহিনী:
১। এতগুলো টাকা
যৌতুক দিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি । কাজ করে খাব কেনো? বাপের বাড়িতেই-বা যাব কেনো ?
২। বিয়ের কথা
শুনে ছেলে শরমে একেবারে মুষড়ে পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে কারো সাথে কথা না বলে বাড়ি থেকেই
পালিয়ে যায়।
৩। বাপে জমি
বিক্রি করেছে। আমি সেই জমিতে হাল নিয়ে গেছি। আমার হাঁটুতে বল আছে, তাই বাপের বিক্রি
করা জমি বেদখল দিয়ে শক্তি দেখালাম । ]
..................................... .............................................................................
জন্মভূমির সম্মান
একটা কথা হ্নদয়
দিয়ে শোনো-
এ পৃথিবীর যেখানে
যাও
দেশের কায়া
মাটির মায়া
ভুলো না কক্ষনো
!
স্বদেশ নিয়ে
গল্প কোরো
বিরক্তবোধ অল্প
কোরো !
প্রচার কোরো
আপন দেশে
কোথায় কী কী
আছে-
গর্ব করে জানান
দিও
সব মানুষের
কাছে !
বলবে যা যা-
ভালগুলোই বোলো
মন্দ সবই গোপন
কোরে চোলো,
বিদেশিদের সঙ্গে
মিশে মিশে-
খুঁজে নিও নিজের
কী কী দিশে !
খাঁটিভাবে
করেও যাবে
তাদের গুণগান-
সখ্যগড়ে জন্মভূমির
বাড়িও সম্মান
!
..................................... .............................................................................
পালা বিলাই
কালক্যা আতোত্
একখোরা দুধ
মুট্টি খাছে
বিলাই
মনে কয় অক্
ধর্যা এনা
ইচ্ছামোতে কিলাই
।
আন্দারেমুন্দারে
বাহে
দুধকোনা সোগ
খায়া,
সাধু হয়া শুত্যা
আছে
চকির কানিত্
যায়া !
চুপেচাপে চোরের
নাকান
হাপুসহুপুস
খাছে
যাচ্ছে দ্যাকা,
দুধের সর্ অর্
গালোত্ বাজ্যা
আছে।
মোর বাসাতে
সুখোত্ আছে,
চাট্যা খায়াদায়া-
মনে কোলে এন্দুর
মারে
আরেক বাড়িত্
যায়া !
হামার ঘরের
চিকা-ধার্যা
মাচ্চে বাহে
ঠিক-ই-
এখন খালি উকট্যা
বেড়ায়
ত্যাল্চাটা-টিকটিকি
!
ভাবকাহিনী:
গতরাতে একবাটি
দুধ পুরোটা বেড়াল খেয়ে ফেলেছে । অন্ধকারে সে চোরের মতো দুধ চুরি করে খেয়ে চকির এক কোণায়
সাধুর মতো ঘুমিয়ে আছে। সেই যে এই চুরিটা করেছে, তার বড় প্রমাণ, তার গালে এখনো দুধের
সর লেগে আছে !
আমার এখানে
খেয়েদেয়ে সে মোটামুটি সুখেই আছে। মন চাইলে সে অন্য বাড়িতে গিয়েও ইঁদুর মেরে আসে । কারণ,
আমার বাড়ির চিকা-ইঁদুর সব মেরে শেষ করেছে; এখন সে তেলাপোকা ও টিকটিকি খুঁজে বেড়ায়।
]
..................................... .............................................................................
গাঞ্জা-বাবার দোকানদার
মোর কতা তুই
শুনিস নাই
মোক হিসাবোত্
গুনিস নাই
এখন এলা
বোজেক ঠ্যালা
!
গাঞ্জা-বাবা,
ডাইল খায়া মর্
,
দ্যাশের নোকের
গাইল খায়া মর্
-
আগ্যাবে তোক
ক্যাডা?
নাল দালানের
ভাত খায়া তুই
মরেক শালার
ব্যাটা
মরেক শালার
ব্যাটা।
তুই হছিলু দোকানদার
বানাইছিলু কাস্টমার
যারা খাছে
সোগ পলাছে ।
তোর কারণে
গাঁওগুলা আইজ
ভালো ভালো
ছাওগুলা আইজ
নষ্ট হোছে পুরা
কোপে কোপে পুলিশে
তোর
হাড্ডি করুক
গুড়্যা
হাড্ডি করুক
গুড়্যা ।
ভাবকাহিনী:
মাদক ব্যবসায়ী
ছেলেকে পুলিশে ধরেছে । বাবা-মা তাকে অনেকবার এই ব্যবসা থেকে সরে আসতে বলেছিলেন । এ-ব্যবসার
পরিণাম কী, তা তারা ছেলেকে নানাভাবে বুঝিয়েছেন । কিন্তু , ছেলে বাবা-মা'র কথা শোনেনি,
তাদেরকে পাত্তাই দেয় নি । আজ সেই অবাধ্য ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে । তাই, রাগে-দু:খে
গারজিয়ান কড়াভাষায় বলছেন, তুই তো আমার কথা শুনিস নি, আমাকে তো হিসেবে গুণিস নি, এখন
ঠেলা বোঝ ! গাঁজা-ইয়াবা-ডাইল খেয়ে মর ! দেশের লোকের অভিশাপে মর ! জেলের ভাত খেয়ে মর
! তুই হয়েছিলি মাদকের দোকানদার ! কত খদ্দের তৈরি করছিলি ! তারা এখন সব পালিয়েছে ! তোর
কারণে সুন্দর গ্রামের ভালো ভালো ছেলেরা নষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশ তোকে মেরে হাড়হাড্ডি ভেঙে
গুড়ো করে দিক !
পাদটীকা: অনেক
বাবা-মা-ই এমন কষ্ট-যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ]
..................................... .............................................................................
বানের পরে
বানের পানি
আসিয়া মোর
ধান গেল মোট
খায়া-
দ্যাখোম খালি
চায়া !
হালের ট্যাকা,
সারের ট্যাকা-
মুট্টি আছে
বাকি
দেম এলা কোত্থাকি?
একেলা মুই চিন্তা
করোম,
ঠেকাঠেকিত্
পোলে,
কী খাবে বৌ-ছোলে
?
আবাদসুবাদ সোগ্গি
গেল,
ক্যামনে-বা
কী খামো ?
কোনঠে ট্যাকা
পামো ?
ভাদ্দর-আশিন-কাতি-আগন-
পুরাই যাবে
বসা
কী হোবে মোর
দষা?
ইলিপ চাবার
চাম না বাহে
চিয়ারম্যানের
কাছে-
নোজ্যা-শরম
আছে !
ভাবকাহিনী:
বন্যা এসে মাঠের সব ধান খেয়ে ফেলল । আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি । ধান লাগানোর সময় জমি
চাষবাবদ হালের টাকা এবং সারের টাকা বাকি রেখেছি; সেই দেনা পরিশোধ করব কীভাবে ! একা
একা চিন্তা করছি, অভাবে পড়লে পরিবার কী খাবে ! ফসল নষ্ট হওয়ায় বিকল্প কোন কাজে টাকা
রোজগার করব ? ভাদ্র মাস থেকে অঘ্রাণ মাস পর্যন্ত পুরো সময় বেকার, এই সময়ে কী অবস্থা
হবে ? এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে লজ্জা-শরমে রিলিপও চাইতে পারব না।]
..................................... .............................................................................
ঢাকা শহর
ঢাকা
শহর -ঢাকা শহর
ইট-পাথুরে পাকা শহর
ডানে
পাকা বামে পাকা
রঙ বে-রঙে মাখা
শহর !
ঢাকা
শহর-ঢাকা শহর
গাড়ি-ঘোড়া চাকার শহর
লোকে
বলে এ শহরই
এত্ত
এত্ত টাকার শহর !
ঢাকা
শহর-ঢাকা শহর
কোনোমতে
থাকার শহর-
শুনবে
যখন কাকের গলা
মনে
হবে 'কা-কা'র
শহর !
ঢাকা
শহর ঢাকা শহর
ডাকাডাকি
হাঁকার শহর-
ঈদের
রাতে একেবারে
খাঁ-খাঁ শহর ,ফাঁকা
শহর !
সাহসী কাক
কাকতাড়ুয়ার মাথায় টাক
টাকের
ওপর একটি কাক-
কোন
সাহসে
দাঁড়ালো
সে?
ব্যাপার
দেখে হই অবাক !
মুখের পাড়া
বেজায় শিয়ান
ছ্যারা
এঠের ন্যাটা
ওঠে দিয়া
ওঠের ন্যাটা
এঠে নিয়া
বাজায় ন্যারাভ্যারা
এইংক্যা শিয়ান
ছ্যারা-
ঘাড়ও বেজায়
ত্যাড়া
ভালোমন্দ কেছো
কোলে
আতোত্ ভাঙে
ব্যাড়া!
ভেষণ খারাপ
চোপা
আগ্যা যায়া
তার মুখোতে
কাঁয় নাগাবে
টোপা ?
নাই-যে জিবাত্
পাড়া-
সগলারি ভয়,
কাক যে কী-কয়-
এক্কে পুরা
নারা ।
মানে না মাও-বাপোক
জর্ম দিয়া ঘরোত্
তারা
পোষে গোমাসাপোক
।
ভাবকাহিনী:
সমাজের এক দুর্দান্ত
দুষ্টু-সেয়ানা ছেলের কথা বলা হচ্ছে , যে এখানকার কথা ওখানে, ওখানকার কথা এখানে বলে
সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে । সে এমন সেয়ানা ও ঘাড় ত্যাড়া যে, তাকে কেউ ভালোমন্দ কিছু
বললে রাতে তার ঘরের ব্যাড়া ভেঙে দিয়ে আসে । সে এমন চাপাবাজ, কেউ এগিয়ে গিয়ে তার মুখে
টোপা লাগাতে পারে না, কারণ, তার ঠোঁটে কোনো পাড়া ( বাঁশের তৈরি মাছধরা যন্ত্রের বিশেষ
দরজা, যার ভেতর দিয়ে মাছ খাঁচায় প্রবেশের পর আর বেরোতে পারে না, এমন প্রবেশ পথ ) নেই,
কখন কাকে কী ফায়সা-অশ্রাব্য গালি দিয়ে বসে, সেই ভয় সবার মনে কাজ করে । নারাদের (কথায়
কথায় যারা অশ্লীল বাক্য বলে ) মতো মুখ । মা-বাবাকেও গ্রাহ্য করে করে না সে । এমন ছেলেকে
জন্ম দিয়ে বাবা-মাও যেন ঘরে গোখরো সাপ-ই পুষছেন ।
..................................... .............................................................................
ছয় ঠ্যাংওয়ালা
কবিতা
ওরে তোরা কে
কোথায়, তাড়াতাড়ি আয়-
দেখে যা-রে
ব্যাপারটা অন্যধারায় !
কবিদের পেট
থেকে
আষাঢ়ে কাঁঠাল
পেকে
কবিতা যে জন্মেছে
ছয়খানা পা'য়
!
..................................... .............................................................................
আমার প্রিয় সাঘাটা উপজেলা
কেমন করে ভুলব
বলো
বোনারপাড়ার
ধুলো ?
যে ধুলোতে মিশে
আছে
আমার স্মৃতিগুলো
!
জুম্মারবাড়ি-উল্লাবাজার
,
ভরতখালি হাটে-
স্মৃতি আছে
যমুনাতে
নৌকা-জাহাজঘাটে!
হায় ! কী-করে
ভুলি?
দৃশ্যগুলো খুঁটে
খুঁটে
ছড়ার মাঝে তুলি!
এই মাটি যে
কবি-লেখক
সাহিত্যিকের
মাটি,
দিনে-রাতে তাদের
কলম
করছে হাঁটাহাঁটি
!
একাত্তরে যুদ্ধে
যারা
শহীদ এবং ক্ষত
,
এই সাঘাটায়
তাদের কীর্তি
নয় যে ভোলার
মত!
এই মাটিতে জন্ম
নেয়া
গর্বিত সন্তান-
সারাদেশে আছে
তাদের
অনেক অবদান!
জন্মেছিলেন
এই মাটিতে
ফজলে রাব্বী
মিয়া-
অহংকারে আনন্দিত
আমরা যাকে নিয়া
!
এই খানেতে আছেন
বহু
শিল্প-কোটিপতি,
তাদের জোরে
যাচ্ছে সরে
দীনতা- দুর্গতি!
উপজেলায় লক্ষণীয়
সাক্ষরতার হারও,
উচ্চপদে অধিষ্ঠিত
হাজার অফিসার'ও
!
দেশবিদেশে বহু
মানুষ
নানা পেশায়
রত,
তাদের ঘাম'ও
এই মাটিকে
করেছে উন্নত।.
লোকসমাজে দূর
হয়েছে
কর্মবিমুখতা,
কষ্টজয়ে কারোরি
নেই
একটু অলসতা
!
*********
সবুজ-রঙিন বোরকাপড়া
গাঁয়ের মোড়ে
মোড়ে,
পাখপাখালি মনের
সুখে
গান শুনিয়ে
ওড়ে !
পর্যটকের বিরতি
নেই
ঘুরছি দেশেদেশে-
ক্লান্তদেহ
শান্ত হবে
এই মাটিতেই
এসে !
..................................... .............................................................................
জামাইয়ের চাকরি
চাকরি পালো
তোমার পিছে
তোমার পোস্টের
অনেক নীচে
কপাল দ্যাখো
তার-
হামার বেটিক
বিয়া করি
কত কী কারবার!
ঢাকাত পাঁচটা
বাড়ি কচ্চে
মাইক্রো-মটর
গাড়ি কচ্চে
ভাড়াত্ দিছে
তাক-
তোমার কী কী
আছে বাহে
কও এনা হামাক?
ম্যালা ট্যাকা
বেতন মাসে
তারচা বেশি
উপ্রি আসে
গাঁও কিন্তিছে
তাঁই-
তোমার ক্যামা
কোনোঠেনে
শেংকা কেছো
নাই ?
জামাই-বেটি
ঘুরি ব্যাড়ায়
মাঝেসাজে বিদ্যাশও
যায়
সেঠেও বাড়ি
তার-
তুমি-ও তো চাকরি
কল্যা
কী আছে তোমার?
ভাবকাহিনী:
তোমার পরে এবং তোমার নীচের পোস্টে আমার মেয়ের জামাই চাকরি পেলো। এরপর আমার মেয়েকে বিয়ে
করে তার কপাল খুলে গেল। ঢাকায় পাঁচটা বাড়ি করল, গাড়ি করল, সেগুলো ভাড়া দিয়েছে। তোমার
কী কী আছে বলোতো ?
অনেক টাকা তার
বেতন, বেতনের চেয়ে উপরি-ই বেশি। সে পুরো গ্রাম কিনতেছে । কিন্তু, তোমার কোনো উন্নতি
দেখি না কেনো ?
আমার মেয়ে-জামাই
আনন্দভ্রমণ করে, মাঝে মাঝে বিদেশেও যায়, সেখানেও তার বাড়ি আছে। তুমিও তো চাকরি করছ,
তোমার কী আছে?
পাদটীকা: জামাইয়ের
অর্থবিত্তের বড়বড় গল্প করে তৃপ্তির ঢেকুর প্রচার করা গ্রামের কিছু কিছু শ্বশুর-শ্বাশুড়ির
চিরায়ত অহংকার । এ-ছড়ায় সেই অবক্ষয়ের চিত্র অংকনের চেষ্টা করা হয়েছে ]
..................................... .............................................................................
হামাহেরে চ্যারমেন সাব
হামাহেরে এলাকার
চ্যারমেন সাব
সগলারি সাথে
তার
উঠবোস-ভাব ॥
ইলিপের মাল
নিয়া
নাই খাই খাই
তার মোদে পাবাও
না
ধানাই-পানাই
।
দ্যায়-ও না
তাক ক্যাও
বাজে পোস্তাব-
এই হোলো হামাহেরে
চ্যারমেন সাব
।
কারো তাঁই চাচা
হন
কারো নানা,
ভাই
দরকারি কাম
নিয়া
তার কাছে যাই
ঘুরায় না, প্যাঁচায়
না
খোঁজেও না নাভ
এই হোলো হামাহেরে
চ্যারমেন সাব।
ক্যাও যদি তাক
যায়া
জানায় নালিশ
পায় তাঁই ঠিকমতো
বিচার-শালিস
।
অন্যায় পালি
দ্যায়
উচিত জবাব-
এই হোলো হামাহেরে
চ্যারমেন সাব
।
ভাবার্থ:
এমন একজন চেয়ারম্যান সাহেবের কথা বলা হচ্ছে, তিনি সমানদৃষ্টিতে সবার সঙ্গে, নিরহংকারে
ওঠাবসা করেন। রিলিফের প্রতি তার কোনো লোভলালসা নেই । সৎ থাকার কারণে তাকে কেউ বাজে
প্রস্তাব দেয়ার সাহস পায় না। এলাকার কেউ কোনো দরকারে তার কাছে গিয়ে হয়রানি-পেরেশানির
স্বীকার হোন না। কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি ন্যায় বিচার করেন, অন্যায়ভাবে পক্ষপাতিত্ব
করেন না। তিনি এলাকার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ভালো চেয়ারম্যান।
..................................... .............................................................................
অল্পবইসা চোর
আসলাম প্রধান
কও কী বাহে
কও কী বাহে
এজ্জালা চ্যাংড়ায়
মদ-গাঁজা-ভাং
খায় !
পইসা কোঠে পায়
বাহে অঁই-
পইসা কোঠে পায়?
অর বাপে-যে
গরিব মানুষ
দিন আনে দিন
খায়-
ঠেকাঠেকির সংসারোত্
অঁই
পইসা কোঠে পায়?
চ্যাংড়াকোনা
ছুট্টিএনা
তার ওঠে নাই
মোছ
ভরটা দিন-ই
দিয়া বেড়ায়
দেওয়ানগিরির
পোছ !
আইত হোলে তাঁই
নিন পারে না
বাপ ও মায়ের
ধার ধারে না-
তামানবাড়ি ঘোরে,
ধাপ্পা মারে,
পকেটে কাটে,
ঘরোতো শিং খোঁড়ে,
বাহে-
ঘরোতো শিং খোঁড়ে
!
ভাবার্থ:
গ্রামের এজ্জালা-ছোট্ট
একটা ছেলে, অল্প বয়সেই সে মাদকসেবন করে ! তার বাবা খুব গরিব । অভাবের সংসারে কীভাবে
মাদক কেনার পয়সা পায় ? গ্রামের জনৈক মুরুব্বি ভাতিজা সম্পর্কের এক ছেলেকে এ-বিষয়ে জিজ্ঞেস
করে জানতে পারলেন, ঐ ছেলের দাড়ি-মোছ না গজালেও, ও সারাদিন খুব ফুংফাং করে ঘুরে বেড়ায়
এবং রাত হলে ধাঁন্দা করে ! পকেট মারে, মানুষের বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরি করে । বাবা-মা-'র
অবাধ্য ছেলেটা এভাবেই মাদকদ্রব্য কেনার পয়সা জোগাড় করে থাকে !]
..................................... .............................................................................
আম-দুধ
বেটি-জামাই
আসপে বাড়িত্
খব্র্যা গেছে
কয়া
বেলডুবি মুই
হাটোত গেনু,
হাটবেলা পার
হয়া !
আঁন্দারোতে
আম কিনি যে
কী-ঠকা ঠকিছোম-
সোগ ক'টা আম
পচা বাহে-
খালি ট্যাকাই
দিছোম।
দুধ কোনা, তাঁই
এক বলোকোত্
নৌটি গেইছে
তামান,
এশারকালে আসি
এলা
কী খাবে মোর
দামান?
ভাবার্থ:
মেয়ে-জামাই
বাড়িতে আসবে বলে জনৈক খবরি খবর দিয়ে গেছে। বেলা ডুবে গেলে, হাটবেলা শেষে শ্বশুর তাদের
জন্য বাজারসদাই করতে গেলেন। অন্ধকারে আম কিনেছেন, তার সবটাই পচা। শুধু টাকা খরচ করছেন,
লাভ হয়নি। এদিকে দুধ'ও জ্বাল করতে গিয়ে এক বলকেই সব নৌটে গেছে- নষ্ট হয়ে গেছে ! এশার
নামাজের সময় মেয়ে জামাই এলে কী খাওয়াবেন, অস্থিরভাবে তাই বলছেন !]
..................................... .............................................................................
জুয়া খেলার মাশুল
সোগকোনা ট্যাকা
অরা পুক করি নিয়া
শ্যাষকালে মোক
অরা দশ ট্যাকা দিয়া-
কলো, গুয়াপান
খাও,
খায়া বাড়িমোকে
যাও-
কাল ফির আসো
বাহে,
জমিন বেচিয়া।
তিন বিঘা ভিন
মুই জুয়াত হারেয়া,
বোউ-ছোল সংসার
সগ্গি ছাড়েয়া,
অ্যর-অর কাছে
যাম,
দু-একনা ট্যাকা
চাম-
এংকরি খাম,
ঠ্যাং-
নাড়েয়া-নাড়েয়া।
ভাবার্থ:
জুয়ার আসরে
সব টাকা খুইয়ে আসার সময় জুয়াড়িরা ওকে দশটা টাকা হাতে দিয়ে বলেছে, পানসুপারি খেয়ে বাড়ি
চলে যাও। জমি বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে আগামিকাল আবার খেলতে এসো ।
তিনবিঘা জমি
বিক্রিকরা টাকা সে জুয়া খেলে শেষ করেছে। স্ত্রী-পুত্র, সংসার ত্যাগ করে এখন পথে পথে
ঘোরে। হেঁটে হেঁটে এর-ওর কাছে দু'এক টাকা সাহায্য নিয়ে এখন দিনাতিপাত করে !
..................................... .............................................................................
নেংটি তোলা
শানা
তুমি বারোমাস
হামাকি দ্যাও
বাঁশ !
পাকা ধানোত
মই দিয়া যায়
উত্তুরপাড়ার
অরা-
সেই সোমে ক্যা
হাতপাও ছাড়ি
শুতি থাকো,
মরা ?
ঘুষি-মুটকি
খায়াও থাকো চুপ-
সেকনা তোমার
গায়োত নাগে না-গো !
তুমি খালি ন্যাংটা
হয়া হামার জা'গাত হাগো?
সে-জন্যে মুই
কম,
তুমি ব্যা-শরম
!
দুব্বলা যাঁই,
উক্ট্যা-উক্ট্যা
তারি ধরো ঘাড়
পরার ভিঁয়োত
জুলুম করি
ঘাটা বানাও,
ফার-
দেওয়ানগিরি-শানাগিরি
করো-
পানোত থেনে
চুন খসিলে হামার উপুর আগো ?
অরোক দেকলে
নেংটি থুয়া, মুত্তে মুত্তে ভাগো !
ভাবার্থ:
তুমি সারা বছর
আমাকেই বাঁশ দাও ! কিন্তু, উত্তরপাড়ার ওরা যখন তোমার পাকাধানে মই দিয়ে যায়, তখন তুমি
হাত-পা ছেড়ে মরার মতো শুয়ে থাকো । কিল-ঘুষি মেরে গেলেও টু-শব্দটি করার সাহস পাও না
। অথচ, আমার জায়গায় নির্লজ্জভাবে পায়খানা করে যাও ?
তুমি বে-শরম
! দুর্বলের ওপর ছড়ি ঘোরাও । অন্যের জমির ওপর নিজের স্বার্থে সোজা রাস্তা তৈরি করো
! পান থেকে চুন খসলে তুমি আমার ওপর রাগ দেখাও। কিন্তু , উত্তরপাড়ার ওদেরকে দেখলে লেজ
গুটিয়ে, পেসাব করতে করতে পালাও ! ]
..................................... .............................................................................
নাম বদল
কেডা বাহে বদল
কচ্চে
হামার ছোলের
নাম'টা?
তোমার বাড়িত্
কামোত্ গেছে ছৈল'টা
নামের মোদে
সমস্যা কী হৈল'টা ?
কওতো তুমি হুকসা
এনা
ক্যাংকা হোছে
কাম'টা ?
হাউস করি ছোলের
হামি
নাম থুছিলাম
সাইফুল-
ওই নামে তাক
পায়-না ক্যাওয়াই উটক্যা,
পাল্টে দিছে
কোন্ দ্যাওয়ানা, চুটক্যা?
আসল নামোত ক্যাও
ডাকো না,
সগলে ডাকো আব্দুল
!
ভাবার্থঃ
অভাব-অনটনের
কারণে বাবা-মা তাদের আদরের ছোট্ট ছেলেকে অন্যের বাসায় কাজের জন্য পাঠিয়েছে । সেখানে
ছেলের সাইফুল নাম'টা বাদ দিয়ে আব্দুল রাখা হয়েছে । বাবা-মা জানতে পেরেছে, সাইফুল নামে
ওখানে তাকে কেউ ডাকে না, ডাকে আব্দুল বলে !
আক্ষেপে তাই
মালিককে বলছে, কী সমস্যার কারণে, কে দেওয়ানগিরি-মাদবরি করে আমার ছেলের নাম এভাবে বিকৃত
করেছে বা বদলে ফেলেছে? ]
..................................... .............................................................................
মহামারির চিন্তা
ক্যাংকা ব্যারাম
আ'লো বাহে-
ক্যাংকা ব্যারাম
আ'লো-
কয় দিনোতি এক্কে
পুরা
দুনা-ই গিলা
খা'লো,
কোনঠে-বা যাম,
কী করি খাম
মাতা যে আউলালো
!
ঘরোত থাকি বারালে
মুই
চিন্তা করি
মরোম-
কার-বা গায়ের
ঘষা খায়া
কোন বিপদত পড়োম।
কাম না-করি
ভাঙি খালুম
হাতোর ট্যাকাকোনা
চিন্তাত আছোম,
কালক্যা কেডা
করবি দ্যাকাশোনা
!
ছোলকোনা মোর
ঢাকাত্ আছিল্
তাক্ দিছে খ্যাদেয়া
ফ্যাটকারি নাই,
বাড়িত আসি
তাঁই আছে বসেয়া
!
খবর শোনোম,
মত্তিছে সোগ
মহামারিত পড়ি-
কোনঠে গেলি
উকট্যা পামো
হামরা বাঁচার
বড়ি ?
ভাবার্থ:
প্রত্যন্ত অঞ্চলের
দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি বলছে, কী রোগ এলো, কয়দিনের মধ্যেই পুরো দুনিয়া ম্যাসাকার করে
ফলল !
এ-অবস্থায় তার
মাথা কাজ করছে না, সে কোথায় যাবে, কী করবে! ঘরের বাইরে বের হলেই তার চিন্তা, কার শরীরের
ঘষায় কখন বিপদে পড়ে !
হাতের জমানো
টাকা এতদিন সে ভেঙে খেয়েছে; কাল থেকে তাকে কে দেখাশোনা করবে? ছেলেটা ঢাকায় কাজ করত।
ফ্যাক্টরি উঠে গেছে । সে'ও বাড়িতে ফিরে বেকার বসে আছে ! খবর পাচ্ছে, মহামারিতে মানুষ
মারা যাচ্ছে ! কিন্তু , সে কোথায় পাবে বেঁচে থাকার ওষুধ !]
..................................... .............................................................................
নানা'র খবর
তুই
তো হামাক চিনবু-ন্যা বা
হয়া
গেছিস কানা
তোর
বাপে মোক আদর করি
ডাকত
নানা নানা ।
পিত্তি
বছর ঈদের সোমে
মোর-যে খবর নিছে
স্যামাই-চিনি, দুধের কাতি
তবন
কিনি দিছে ।
এবারকা
মোর ঠেকাঠেকিত
কেডা
খবর নিবে?
তোর
বাপও নাই, কোন নাতি
মোক
কাপড়া
কিনি দিবে?
ভাবার্থ:
(হতদরিদ্র
বৃদ্ধ বলছেন, তুই তো আমাকে
চিনতে পারবি না বাবা, তোর
আব্বা আমাকে আদর করে নানা
ডাকত । প্রতিবছর ঈদের
সময় আমার খবর নিত
। সেমাই-চিনি, দুধের কৌটা, লুঙ্গি কিনে দিত ।
এ-বছর আমার অভাব-অনটনে কে খবর নেবে!
তোর বাবা'ও নেই,
কোন নাতি আমাকে কাপড়
কিনে দেবে ?)
প্রানের
চেয়ে প্রিয়-
সামনে
এসে
ভালোবেসে
পেছনে
বাঁশ দিও !
২
আমায়
সালাম ক'রে -
মুখ
ঘুরিয়ে
দূরে
গিয়ে
বিদ্বেষে
যাও ম'রে !
৩
লেবাস
পরো দামি-
গল্প
করো,
কেটে
পড়ো
বাগিয়ে
সেলামি !
৪
আপন
ভেবে মিশি-
প্রেমের
ছলে
মধু
ব'লে
দাও
ভেনমের শিসি !
৫
বন্ধু,
তোমায় পেয়ে
যা-শিখেছি
তা-বিকেছি
বিরহগান
গেয়ে !
৬
মিথ্যে
কথা বলে-
বিপরীতে
ফায়দা
নিতে
আঁধারে
যাও চলে !
৭
কত্ত
অভিজ্ঞতা
এক এক ক'রে
বলব
পরে-
জমানো
সব কথা !
৮
কারো
কঠিন বাঁশে-
এই সমাজে
আজেবাজে
দুর্জনেরা
হাসে !
৯
দেখি,
অনেক লোকে-
সব হারিয়ে
গঙ্গা
গিয়ে
সাঁতার
কাটে, শোকে !
কেউ
ঘোরে বাজারে,
কেউ-বা আবার
পাগলাবাবার
মাজারে-মাজারে !
১০
বাদ
রয়েছি আমি-
ব্যথা
পেয়ে
ছ্যাঁকা
খেয়ে
করি
না পাগলামি!
১১
পারি
না চামচামি
প্রতি
বার-ই
খালি
হার-ই,
চলতে
গিয়ে থামি !
১২
শুধু
বাঁশ-ই দিলে
মহাশয়া,
একটু
দয়া
করো
নি ফাইলে !
১৩
সরলতার
দোষে-
খাইছি
ধরা,
কী আর করা
আছি
একা ব'সে !
দোয়া
করি, বন্ধু সুখে থেকো-
সবসময়ই
বাঁশ'টা কাছে রেখো
।
বর্ষাকাল
এসেই
গেল বর্ষাকাল
মেঘের
কালো-ফর্সাগাল !
চুলগুলো
ঠিক এ্যশকালার
উড়ছে
হাওয়ায় ভর সকাল !
মেঘ
ভেসে যায় ধীরবেগে
বৃষ্টি
পড়ে তীরবেগে
হাসনা
নানি ঘরকোণে
খাচ্ছে
মুড়ি- ক্ষীর মেখে !
.
মন্টুনানার
ষাঁড় দুটো-
খায়
না ওরা খড়-কুটো
!
এদিক-সেদিক চোখ পাকায়
মশার
জ্বালায় ছটফটায় !
আষাঢ়ে
গল্প নয়
পা দুটোকে ওপ্রে তুলে
হাত
রেখে মাটিতে
এক্কেবারে
উল্টো হয়ে
লাগল
সে হাঁটিতে!
নয় আষাঢ়ে গল্প নানু,
দেখেছি
নিজ চোখে-
আমার
মতো দেখছিল তা
আরো
অনেক লোকে !
সত্যি
কিনা, শোনো তোমার
বাবা
ও মা'র কাছে-
ভিন্নরকম
হাঁটাচলা
সব আছে সার্কাসে!
..................................... .............................................................................
আষাইঢ়া
দ্যাওয়া
.
আষাঢ়
মাসোত নাগছে দ্যাওয়া
এক্কে
আইতোত বান আইলো
বিলের
বাতাত্ নামাজমিন ফকফকা-
ট্যাপট্যাপা
থোর ধান খাইলো!
.
মজিদ
নানার পইত্যাতালোত্ ফুল আচ্চে
বানের
পানি ব্যাবাক গাছের গোড়োত্
তড়পা
টানে নানায় গোলের পোড়োত্
ক্যাংকরি
অঁই তালের চিন্তাত্ কুলাচ্চে ?
.
মাচার
ঘরোত্ ছ্যাঁচার ব্যাড়াত্ নাগছে উঁড়ি
চাপিলব্যাড়া
কচ্চে খায়া জরজরা-
পোকার
ঠ্যালাত্ নয়া পইও মড়মড়া,
উঁড়ির
পিটোত্ মন্টু হাঁকায় নাত্তি-গুড়ি ।
.
এন্দুরগুলা
আছিলো সোগ ভিঁয়োত্
পানির
তোড়োত্ ব্যাকটি আচ্চে ঘরোত্
আইতোত
বাহে পারব্যার দ্যায়না নিন'ও
ধানের
মাচাত্ বেড়ায় সড়োত্ সড়োত্ !
.
অর্থ
: আষাঢ় মাসে একরাতের বৃষ্টিতে
বিলের নীচুজমির থোর ধান ডুবে
গেছ ! মজিদ নানার ফুল
আসা মরিচক্ষেতে পানি ঢুকে গেছে,
অথচ সে নিশ্চিন্তে গোয়াল
ঘরে পোড়ের ধারে বসে তড়পা(
তামাক দিয়ে নিজে বানানো
বিড়িবিশেষ) টানছে ! মন্টুর ঘরে বাঁশের বেড়া
ও খুঁটিতে উইপোকা আক্রমণ করে ঝাঁজরা করে
ফেলেছে - তাই সে বেড়ায়
লাথি মেরে মেরে পোকাকে
শায়েস্তা করছে এবং বন্যার
পানির তোড়ে মাঠের ইঁদুর
ঘরে ঢুকে সড়োত্ সড়োত্
শব্দ করায় তার রাতের
ঘুম নষ্ট হচ্ছে!
..................................... .............................................................................
হুট্টিপ্যালা
চ্যাংড়াপ্যাংড়ারা
তিনজনে
খায় একনা বিড়ি
মজাক
ক'রি ক'রি
এংকোরি
যায় তামানবাড়ি
ওগ-জীবাণু ছ'ড়ি!
অরা
বেজায় হুট্টিপ্যালে,
চোপা
দিয়া সগ্গি ঠ্যালে
কারো
কতাই শোনে-না বা-
চ্যাংড়া'রা স্বাধীন
কয়,
হবা নয় হামাহেরে
কভিট
নাইনটিন ।
অরহেরে
যাঁই সজাগ হবার কয়
উল্টা
আরো তাকি দ্যাকায় ভয়
!
ভাবার্থ:
তিনজনে একটা বিড়ি শেয়ার
করে খায় ! এভাবেই একজনের মুখের জীবাণু আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করে ! ওরা গোঁয়ার্তুমি করে,
চাপাবাজী করে; কারো কথাই
আমলে নেয় না, স্বাধীন
। ওরা বলে, ওদের
নাকি কভিট-১৯ আক্রমণ
করবে না !
ওই গোঁয়ার ছেলেপেলেদের যে সতর্ক করতে
যায়, উল্টা তাকেই ওরা করোনার ভয়
দেখায়!]
ছোট্ট দুকনা কতা
বিসমিল্লাহ
বিসমিল্লাহ কয়া ন্যাকা কল্লেম
শুরু
সালাম
ও পেন্নাম কল্লেম- হামার যারা গুরু !
.
চ্যাংড়াপ্যাংড়া
ময়-মুরুব্বি, শোনেন সর্বজনা
ছোট্ট
একনা পুঁথি বাহে কত্তিছি বর্ণনা
!
.
তোমরা
যারা বৈদ্যাশ খাটো দ্যাশের মায়া
ছাড়ি
তোমাহেরে
কতা কয়খান খুব বেশি দরকারি
!
.
পত্তম
নম্বর কতা হৈল, তোমরা
যেঠেই যাও
সেঠি
যায়া মাইনষের সাথে কৈও দ্যাশের
আও !
.
তোমার
জেলাত কোনঠে কোনঠে দ্যাকার কী কী আছে
গপ্পে
গপ্পে কয়া দেইও অন্য
মাইনষের কাছে!
.
জ্ঞানীগুণীর
জ্ঞানের বাণী জানাইও সগলাকি
ভালো
খবর প্রচার কৈরো, মন্দগুলা ঢাকি !
.
দ্বিতীয়ত:
সবাকে মুঁই জানাচ্ছোম মিনতি
এমন
চিন্তা করবা না, যা
নিজ এলাকার ক্ষতি !
.
অল্পেএ্যানা
ভুলের জইন্যে বেজায় ক্ষতি হয়
কতাকোনা
দেলের মদ্যে থুইও মহাশয় !
.
দুনাত
হামরা বাঁচি থাকমো ক্যাডা কয়টা দিন-ই
সগলেরে
সগলাই যেনো বন্ধুর মতোন
চিনি ।
শব্দার্থঃ
ন্যাকা>লেখা, কল্লেম>করলাম, পেন্নাম >প্রণাম, হামার>আমার, চ্যাংড়াপ্যাংড়া>ছেলেপেল, একনা>একখানা, কত্তিছি>করছি, বৈদ্যাশ>বিদেশ, তোমাহেরে >তোমাদেরকে, কতা>কথা,পত্তম>প্রথম,
হৈল> হলো,যেঠেই>যেখানেই,
সেঠি>সেখানেই,কৈও>বলিও, আও>ভাষা,অল্পেএনা >অল্প
একটু, মদ্যে>মধ্যে, দুনাত> দুনিয়াতে, থাকমো>থাকব, সগলাই >সবাই ।
কাতিমাইসা বান
অসোমে
অঁই মরার দ্যাওয়া কোনঠে
থাকি আ'লো
নামাজমিন
খায়াখুয়া ভিটার নাগাল পা'লো !
সোগ
বেছনের কাছলা খায়া-
মুরি
দিকি দেকলো চায়া!
কাতিমাসোত্
ডবগা দিয়া ঠাকরি কালাই
খা'লো !
ভাবার্থঃ
কোত্থেকে
অসময়ে টানা বর্ষণ এসে
নীচুজমির ফসল ডুবিয়ে উঁচুজমিতে
হানা দিল, সমস্ত বীজতলা
নষ্ট করল ! অত:পর গরীব
কৃষকের সামান্য জমিটুকুর মাসকলইয়ের ক্ষেতটুকুও ডুবিয়ে দিল !
কার্তিক
মাসের অকাল বন্যায় আক্ষেপে
সে-কথাই বলছেন গরীব
কৃষক!
গাঁয়ের ছেলে
তোমরা
যারা আছ ওপরতলায়
নেই
এলাকার ভাষা ও সুর
গলায় ।
বদলে
গেছে জীবন চলার গতি
আকাশসমান
হয়েছে উন্নতি ।
নিত্য
নতুন লোকসমাজে মিশে
অতীত
স্মৃতি যাচ্ছ পিষে পিষে !
অনেক
দূরে এলে যাদের রেখে-
এড়িয়ে
যাও আজকে তাদের দেখে
!
তোমরা
কী আর আগের মতো
হবে
রাখাল
ছেলের সঙ্গে কথা ক'বে
?
আবার
গিয়ে সেই মাটিতে ফিরে
গাঁয়ের
ধুলো মাখবে সশরীরে ?
উচ্ছেদ অভিযান
পলিটিক্যাল
সাপোর্ট আমার
আছে
ষোলোআনাই
ভূমি
দখল করতে গেলে
কোনো
সমস্যা নাই !
অন্য
লোকের জমিতে যে'
সাইনবোর্ড'টা টানাই
আস্তে
আস্তে- স্বধীনভাবে
দালান-বাড়ি বানাই !
এই বাড়িটা আমার বাড়ি-
দেশবাসীকে
জানাই
মনের
সুখে কয়েক বছর
বাজিয়ে
যাই শানাই !
তারপরে
এক দুঃসময়ে
হয়ে
গেলাম কানা-ই
মাথাও
ভালো কাজ করে না,
করে
ধানাইপানাই !
বুলডোজারটা
'হঠাৎ' এলে
মুখে
আমার রা-নাই
থানা-পুলিশ দেখে- কাছে
চ্যালাচামুণ্ডা
নাই !
ঘন্টাখানেক
পরেই দেখি
সুখের
ঠিকানা নাই-
ভেঙেচুরে
গুঁড়িয়ে দেয়
পুরো
বাড়িখানাই !
বোনারপাড়ার স্মৃতি
বোনারপাড়া
স্টেশনে,
লোকোশেডের
চতুর্পাশে
আমার
পায়ের ধুলোমাটি
মিশে
আছে দুর্বাঘাসে!
রেলকলোনির
অলিগলি
ইটপাথুরে
দালানকোঠা
এই,
আমাকে মনে মনে
দিচ্ছে
তারা নানান খোঁটা!
লাইন
ভাঙা শব্দ করে
ট্রেনের
আওয়াজ কানে এলে
বাঁধনহারা
ছুটে যেতাম
কী সকালে- কী বিকেলে !
রাত
বিরাতে মঞ্চে-মাঠে
জারি-সারি যাত্রাপালা-
ডিস
এন্টেনার আগ্রাসনে
ওসবে
আজ ঝুলছে তালা!
ওভারব্রিজে,
বুকস্টলে
চা"র দোকানে আড্ডা
কত-
হারানো
সে দিনের কথা
ভেবে
ভেবে হই আহত!
অনেক
বছর দূর শহরে
মমতাহীন
এ তল্লাটে
যেমন
থাকি, এ মন হাঁটে
বোনারপাড়ার
রাস্তাঘাটে!
কোথায়
কাজি আজহার আলী-
হাইস্কুল
ও বাল্যবেলা
বন্ধু
যারা হঠাৎ করে
সেই
যে কবে ছাড়ল খেলা!
কতজনের
নাম ভুলেছি,
মনেও
তাদের গল্প নাই-
এমনি
করে যাচ্ছি ভুলে
অতীত
দিনের কল্পনাই !
ইসলামিক
ইয়া রাহমান
জনমব্যাপী
আমলনামায়
যে-সব গুনাহ জমা
তোমার
সকল নামের গুণে
সব করে দাও ক্ষমা
।
এই জবানে যে-কালেমা
পড়ছি
বারেবারে
সেই
কালেমার অসিলাতে
মাফ
করো আমারে ।
ছিটেফোঁটা
এবাদতের
সকল
ত্রুটি ক্ষমে
আঁধার
গোরে আলো দিও
কষ্ট
উপশমে ।
ইয়া
রাহমান, কবুল করো
আমার
এ-প্রার্থনা-
তুমি
ছাড়া গুনাহ্গারে
করবে
কে মার্জনা?
বস্তিবাসীর শোকর
আমরা
কিন্তু ভালোই আছি নানারকম জ্বালা
নিয়ে
ভেজাল
খাদ্য খাচ্ছি রোজ
টাটকা-বাসি'র নিই-না খোঁজ
যাচ্ছি
না কেউ দিনভিখিরি অন্য
দেশে থালা নিয়ে ।
আমরা
কিন্তু ভালোই আছি ময়লা-ধুলোর
গন্ধ সয়ে
দূষণভরা
বাওবাতাস
এরই
মাঝে নিচ্ছি শ্বাস
মরছি
না কেউ অক্সিজেনের অভাবে
দম বন্ধ হয়ে ।
আমরা
কিন্তু ভালোই আছি নোংড়াখালে গুসুল
করে
উল্টেপাল্টে
দেই সাঁতার
রোগজীবাণু
মানাই হার
বেঁচে
আছি আল্লা'তা-লার নিয়ামতকে
উসুল করে !
আমরা
কিন্তু ভালোই আছি জীবনযুদ্ধে ল'ড়ে ল'ড়ে,
নেই
আমাদের মৃত্যুভয়,
দুর্ঘটনা
নিত্য হয়-
মরছে
কতো কীটপতঙ্গ রাস্তাঘাটে প'ড়ে প'ড়ে !
..................................... .............................................................................
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্
সাহসীরা
ক্রমান্বয়ে
হচ্ছে
নিরুদ্দেশ
দুর্বলেরা
দেখছে চোখে
ভয়ের
পরিবেশ !
রুগ্ন-ক্লান্ত পথিকেরা
না-পায় পথের খোঁজ
বাঁচার
জন্য বুকে তাদের
বিনীত
আরজ !
মাথার
ওপর মৃত্যু ওড়ে-
ক্ষুধার্ত
শকুন
স্বপ্ন
কেটে গুঁড়ো করে
রোগজীবাণু-ঘুণ ।
গোরস্থানে
মড়া খোঁজে
পোকামাকড়-পাল ।
মাতালবনে
গভীর রাতে
লাশ
খোঁজে শেয়াল ।
শ্মশান-গোরে জোনাকিরা
ঘুমিয়ে
যায় কেউ
জমাট
বাঁধা অন্ধকারে
একলা
জাগে ফেউ ।
রাত্রি
শেষে সূর্য ওঠে
ঝাপসা
ঝাপসা, ম্লান
টেনশনে
কেউ আলো দ্যাখে
আঁধারি,
নিষ্প্রাণ- !
মুহূর্মুহু
কানে আসে
মরণের
আওয়াজ
হায়
কী হলো ! হায় কী হবে-
অশান্ত
সমাজ ।
অপক্ষেমান
পর্যুদস্ত-
রোগীরা
বলহীন
জানছে
না-যে ফিরবে কবে
আশার
আলো, দিন !
দু:সময়ে বিশ্বাসীদের
কণ্ঠে
শুনি গান
'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্'তে
মুস্কিলে
আসান ।
..................................... .............................................................................
ভয়ঙ্কর যাত্রা
সাহসহারা
সাহসিদের ক্রমে ক্রমে প্রস্থান
বাড়িয়ে
দিচ্ছে দুর্বলের হৃদস্পন্দন
যাবে
কোথায় দিশেহারা রুগ্ন-ক্লান্ত পথিক
চারপাশ
ঘিরে আছে ভয়ের পাহাড়
আকাশে
ঘুরপাক খায় ক্ষুধার্ত শকুন
জঙ্গলে
চুপিসারে হাঁটে লাশখেকো শেয়াল,
কবরস্থানে
পোকা-মাকড়ের মিছিলপ্রস্তুতি-
ধীরে
ধীরে চওড়া হচ্ছে নিরাশার
সমুদ্র !
দূরের
জোনাকিরা ঘুমিয়ে পড়ছে কেউ কেউ
জমাট
বেঁধে যাচ্ছে অন্ধকারের কালো সিমেন্ট
ধুসর-ঝাঁপসা-ম্নান প্রতিদিনের সূর্যোদয়
মুহুর্মুহু
কানে আসে শেষ নিশ্বাসের
পূর্বাভাস
ঘুম
কেড়ে নেয় শক্তিশালী উদ্যম-স্পধার নিদ্রা
আশায়
অপেক্ষমান পৃথিবীর বলহীন যাত্রী !
একটিমাত্র
বাক্য বিশ্বাসীদের মজবুত কাণ্ডারী-
পরম
করুণাময়ের করুনা, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
বাংলাদেশ পুলিশ
আইনশৃঙ্খলা
ঠিক রাখতে তোমার বিরামহীন অমানবিক ছুটোছুটি ।
সর্বসাধারণের
নিশ্চিন্ত নিদ্রা নিশ্চিতে ক্রিমিন্যাল দমনে নির্ঘুম রাত্রি
জাগরণ ।
গরিব-অসহায়দের মানবিক সাহায্যে অকৃপণ হাতের স্বর্ণালী পরশ ।
দিশেহারা
কৃষকের দরজায় বন্ধুসুলভ খোঁজখবর ।
রোগজীবাণু-থৈথৈ সাগরে তোমার
নির্ভয়-অবাধ বিচরণ ।
নিজের
জীবন বাজি রেখে সবাইকে
ঘরে রাখার প্রানান্ত চেষ্টা-
মানুষ
বাঁচানোর ভয়াবহ সংগ্রামে গৌরবময় শহীদি আত্নাহুতি ।
রাস্তায়
ফেলে যাওয়া অসুস্থ- রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানো ।
সন্তান-স্বজনের অনুপস্থিতিতে তোমার অ্যাম্বুলেন্সের ভূমিকা ।
বে-ওয়ারিশ লাশ সৎকারে ধর্মগুরুর
সাহসী প্রক্সি ।
দু:সময়ের নির্ভীক কাণ্ডারী তুমি ।
অকৃতজ্ঞ
পৃথিবী তোমাকে ভালোভাবে দ্যাখেনি কোনোদিন; দেখবেও না হয়ত ভবিষ্যতে
।
কিন্তু
অবাক বিস্ময়ে বাংলাদেশ দেখছে,
আমার
প্রিয় জন্মভূমি দেখছে ।
..................................... .............................................................................
সেরা যোদ্ধা
সৃষ্টি
থেকে রাগান্বিত
মৃত্যু
মহারাজ-
দুর্বলেরে
মেরে মেরে
ভরায়
জাহাজ
মানুষ
কী তার মতো
সেরা
যুদ্ধবাজ ?
অন্ধকার-অগোচরে
ফুরায়
হায়াৎ
মরণ
ঝড়ের বেগে
বাড়ায়
স্ব-হাত
নিরাপদ
স্বপ্নদুর্গ
ক্ষণিকে
ভূপাত !
বন্ধ
হয় পৃথিবীর
হাজারো
হিসাব
ভেস্তে
যায় স্বার্থচিন্তা
বিত্ত-লাভালাভ
জব্দ
হয় অহমিকা
ক্ষমতা-
প্রভাব ।
তার
সমকক্ষ যোদ্ধা
প্রানীকূলে
নাই
একবাক্যে
সকলে-যে
তারে-ই ডরাই
পরাজয়
জেনে করি
অসম
লড়াই !
পাক্কা আড়তদার
আমি
তো ভাই পাক্কা আড়তদার
ছক্কা
মারি বছরে বারবার
খাদ্যশস্য
মজুদ রেখে
দেশের
পরিস্থিতি দেখে
ঠিক
সময়ে টেক্কা'তে দেই মার
!
আমার
কিন্তু হিসেবে নেই ভুল
জা'গামতো ফুটিয়ে দেই হুল
ব্যথা
নিজেই তৈরি করি
পরে
বেচি ব্যথার বড়ি
অসময়ে
ব্যবসা করি, ফুল !
সিন্ডিকেটে
লম্বা আমার হাত
করতে
পারি বাজার কুপোকাত
একটিমাত্র
টেলিফোনে
মুক্তা
ফলাই উলুবনে
বছরে
না, দিনেই বাজিমাত!
আছে
আমার শক্তিশালী ভীত
ঝড়োহাওয়া
হলে উপস্থিত-
দেয়াল
দ্বারা ধাক্কা দিয়ে
ঝড় ব্যাটাকে দেই থামিয়ে,
ধমক
মেরে পাঠাই বিপরীত ।
যুদ্ধবাজের
হাত
যুদ্ধযুদ্ধ
চিন্তা বুঝি এ-মুহূর্তে
বাদ
গুটিয়েছে
দেশেদেশে যত মৃত্যুফাঁদ !
আক্রমণে
না-গিয়ে
যা-নিয়েছে বাগিয়ে
তা-নিয়ে কী ক্ষান্ত
হবে পাপিষ্ট-উন্মাদ ?
অত্যাচারীহাতে
আছে জীবাণু, স্ব-পাপ-
বারেবারে
বন্ধঘরে করে সে 'চেকাপ'
!
শঙ্কচিত্তে
তাকিয়ে-
নানা
যৌগ মাখিয়ে
উল্টেপাল্টে
ধুয়ে ধুয়ে হস্ত করে
সাফ !
ছড়িয়েছে
হস্তদুটো- বিশ্বজুড়ে ত্রাস,
শান্তিপ্রিয়
গোত্রেগোত্রে ভীতি-নাভিশ্বাস !
রাজ্যসীমা
মাড়িয়ে
সন্নিকটে
দাঁড়িয়ে
ক্রমে
ক্রমে যাচ্ছে ক'রে মনুষ্য
বিনাশ !
করোনাভাইরাস
'করোনা'
মানুষ সৃষ্টি করেছে গোপনে
সন্দেহ
প্রকাশ করে বিশ্বে নানাজনে
!
কে নির্মম, ছড়িয়েছে এ জীবাণু'টিকে
?
দিয়েছে
আতঙ্ক পুরো মানবজাতিকে !
মুহূর্তে
মূহূর্তে মৃত্যু- ভয় বিশ্বজুড়ে-
দিবারাত্র
সুখশান্তি খাচ্ছে কুঁড়ে কুঁড়ে!!
যে-দেশ, যে-জাতিগোষ্ঠী,
যার আবিষ্কার
এ ঘাতক জৈব; তার
হবে কী বিচার ?
'আল্লা'র গজব' যদি
বলো চিন্তাশীল-
কোথায়
রয়েছে তবে বাঁচার পাঁচিল
?
পালাবো
কি-ক'রে তার
রাজ্যসীমা ছাড়ি?
এ মহাবিপদে দেবো কোন গ্রহে
পাড়ি ?
শক্তিশালী,
রক্ষাকারী তিনি ছাড়া কে-সে?
বিপদে
আশ্রয় নেব যার পাদদেশে!
তোমার লোক
এখনো
তোমার লোক
হতে
পারি নাই
হে বন্ধু, আজো আমি
আশা
ছাড়ি নাই
তোমার
বুকের মাঝে
সুখের
ঠিকানা আছে
সেইখানে
পেতে চাই
এতটুকু
ঠাঁই ।
কানপড়া
সহজ
সরল সত্য
শোনে
না যে-কান
সে-কানে প্রবেশ করে
সজোরে
শোনান ।
যদি
সেই কান করে
না-শোনার ভান?
'কানপড়া'
দিতে পারে
তার
সমাধান?
ভাষাসৈনিক তালিকা
একুশ
এলে, ফাগুন এলে
আমরা
থাকি শোকে
বায়ান্নকে
স্মরণ করি
বাংলাভাষী
লোকে।
বিশ্ববাসী
মাতৃভাষা-
দিবস
পালন করে
ভাবাবেগে
আপ্লুত হই
অন্তরে
অন্তরে ।
প্রশ্ন
সবার কাছে-
ঠিক
কতজন শহীদ সেদিন
তালিকা
তার আছে?
একুশ
তারিখ, বাইশ তারিখ
কোথায়,
কখন, কে কে
পঙ্গু
হলো, জীবন দিল
জানবো
কোথা থেকে?
সালাম,
রফিক, বরকত, জব্বার,
শফিউলের
নাম শুনি সব্বার-
মুখে
মুখে, এ পাঁচজনের স্মৃতি-
চারণ
করি, ধারণ করি তাঁহাদের
উদ্ধৃতি !
আরো
যারা ভাষার জন্য
লড়েন
নানাভাবে
সবার
কথা সবার কানে
কদ্দিনে
পৌঁছাবে ?
আর কবে পৌঁছাবে ?
কানাই পাঠক
পকেট
খালি- পয়সা নাই
বইমেলাতে
যায় কানাই
হরেক
রকম গ্রন্থ দেখে
কী আনন্দ পায় কানাই !
নবীন-প্রবীণ সব লেখকের
বই দ্যাখে আর নাম পড়ে
সুযোগ
পেলে পৃষ্ঠা মেলে
কোন্টা
কেমন দাম, পড়ে-!
পাঠক
, লেখক-সমালোচক
মেলাতে
ভিড় করছে রোজ
কেউবা
কানাই- সমস্যা নাই
নামের
পড়া পড়ছে রোজ !
ভূতের
বই
বই মেলাতে যাচ্ছে পাওয়া
ভূতের
নামে বই-
এই খবরে ভূতসমাজে
পড়েছে
হই চই !
ভূতকে
নিয়ে ঠাট্টা করা !
গল্পছড়ায়
আড্ডা করা !!
তেলবেগুনে
জ্বলে ওঠে
রাজা
ভূতংঘই-
খবর
আছে যে লিখেছে
ভূতবিষয়ে
বই !
ভূত
কী কারো পাকা ধানে
মই দিয়েছে- মই ?
খেয়েছে
কী লুটেপুটে
কারো
হাঁড়ির দই ?
করেছে
কী দুনম্বরী
কোনো
ফাইল সই ?
তবে
কেনো গল্পছড়ায়
অমন
উপহাস ?
ভূতের
রাজা বলে, তাদের-
দেবে
এবার বাঁশ !
..................................... .............................................................................
অন্যলোকের খোঁজে
সাগরপারে
বনবাদাড়ে
পথিক-
একা বেড়াই
ঝুটঝামেলা
এড়াই!
(২)
সময়
পেলে
সঙ্গী
ফেলে
নির্জনে
যে দাঁড়াই-
কল্পলোকে
হারাই!
(৩)
মর্ম
থেকে
ছেঁকে
ছেঁকে
আবর্জনা
সরাই
মুক্ত
হাওয়া ভরাই !
.
শোনো
খবর-
আজ অবসর ।
স্কুল
ছুটি, বাসায় আছি
সকাল
থেকে সর্দিকাশি
মাঝে
মাঝে দিচ্ছি হাঁচি
খাচ্ছি
আদা চা'য়ের সাথে
তিন
বেলাতে ।
বলেন
দাদা, শীতের সময়
অনেকেরই
এমনটি হয় ।
খসখসে
ভাব হাতে পায়ে
গালে
ঠোঁটে- সারা গায়ে,
কারো
পায়ের গোড়া ফাটে
কষ্টে
হাঁটে ।
গরমজলে
যাও
গোসলে ।
হাড়কাঁপা
শীত লাগলে কারো
সূর্যালোকেও
বসতে পারো ।
ঠান্ডা
বাসি খেও না আর-
সবাই
খেও টাটকা খাবার ।
এলার্জিভাব
যে খাবারে
সেটা
খেলেই এটা বাড়ে,
বেছে
বেছে খাদ্য খাওয়াই
আসল
দাওয়াই ।
ধুলোবালি
ময়লা গন্ধ
সে-স্থানেও থাকা বন্ধ ।
বেশি
বেশি রাত জাগরণ
ক্ষতির
কারণ,
চিকিৎসক
ও দাদার বারণ ।
সব ঋতুতে এ শরীরে
যত প্রকার অসুস্থতা-
মূলে
নাকি তিনটি অভাব,
ওষুধ-
পথ্য- সতর্কতা!
নববর্ষের প্রার্থনা
এই বছরে হৃদয়ভরে
সবার
জন্যে আশীর্বাদ
বিপর্যয়ের
কবল থেকে
দেশবাসী
নিক হাসির স্বাদ।
অসুস্হ
যে- সুস্হ হয়ে
বাঁচার
আলো দেখতে পাক-
নতুন
সালে কষ্ট ভুলে
স্বপ্ন-সুখে দিন কাটাক
।
লোকসমাজে
দ্বন্দ্ব-বিবাদ
অতিদ্রুত
যাক মিটে
অশান্ত
যে- সুশান্ত হোক
বাস্তহারা
পাক ভিটে ।
মনবাগানে
আসুক ফিরে
স্নেহ-মায়া শ্রদ্ধাবোধ
পরস্পরের
ভালবাসায়
দূর
হয়ে যাক সব বিরোধ
।
জীবন
থেকে পালাক সকল
অবক্ষয়ের
ক্লান্তিভয়
বিনয়বশে
প্রার্থনা এই ,
জগতটা
হোক শান্তিময় ।
রাগী মাস্টার
টিফিন
সময়ে তিনি
বাজে
কাণ্ড ঘটাতেন
খেলাঘর
ভেঙে দিয়ে
বাচ্চাদেরকে
চটাতেন
ক্লাসে
তিনি অবিরাম
বেত্রটাকে
নাড়াতেন
শিশুদের
প্রশ্ন শুনে
রেগেমেগে
দাঁড়াতেন
কচিকাঁচা
ছেলেমেকে
সামান্যতে
পেটাতেন
চিল্লেচিল্লে
শাসাতেন ও
মেরে
তৃপ্তি মেটাতেন
ছোট্ট
সোনামনিদের
বিরুদ্ধে
যে দাঁড়ালেন
তাই
কী মাস্টারি তিনি
শেষ
পর্যন্ত হারালেন ?
শীতের রাতে
উত্তরেতে
শীতের জ্বালা
ঢাকার
জ্বালা ধুলো
দুই
জ্বালাতে বিড়ম্বনায়
পড়ছে
বুড়োগুলো !
মহাসড়ক
নদীপথে
যান
চলাচল কোনোমতে-
মাঝে
মাঝে অদৃশ্য হয়
পথের
দিশা, কূল'ও-
দৃষ্টিসীমায়
জটলা করে
নানারকম
ভুল'ও !
এই সাঘাটার জন্যে আমার
চিন্তা
কি কি, শোনো-
মাদকদ্রব্য
আমজনতা
চিনবেনা
কক্ষনো ।
নেশার
ঘোরে অন্ধকারে
যুব
সমাজ যাতে-
ধ্বংসে
না যায়, সর্বসময়
তাই
আসে চিন্তাতে ।
এই সাঘাটা মুক্ত হবে
মস্তানী-সন্ত্রাসী-
ক্রাইম
থেকে মুক্তি পেয়ে
ফুটবে
সবার হাসি ।
মূর্খতা-পাপ বিদায় নেবে
ঘুঁচবে
অন্ধকার
বেড়ে
যাবে এক শতভাগ
সাক্ষরতার
হার ।
নারী-শিশুর হক-অধিকার
সমুন্নত
রেখে
অনধিকার
চর্চা লোকে
তাড়াবে
দেশ থেকে ।
রুগ্ন-বৃদ্ধ নর-নারী
সর্বশান্ত
যারা
থাকবে
না বঞ্চিত-দুখি
নিঃস্ব
দিশেহারা ।
পূরণ
হবে সংখ্যালঘুর
ন্যায্য
চাওয়াগুলো
দেবে
না সেই পাওনাতে কেউ
অবিচারের
ধুলো !
উপজেলার
মানুষ হবে
অতি
পরিষ্কার
সকল
প্রকার অবক্ষয়ের
বিরুদ্ধে
সোচ্চার ।
জমি
দখল বাড়ি দখল
শঠতা-দস্যূতা-
থাকবে
নাকো এ অঞ্চলে
বৈরিতা
শত্রুতা !
সব অনাচার মুক্ত- নতুন
সাঘাটাকে
নিয়ে
গর্ব
করে চলবো আমি
দূর
শহরে গিয়ে !
স্বপ্নগুলো
ছিলো আমার
নিভৃত
এ প্রাণে-
এক এক করে পৌঁছে
দিলাম
সবার
কানে কানে ।
ছোটবাবু
কাল থেকে
নাক
ঝাড়ে টিসুতে
হামাগুড়ি
দিয়ে যায়
টয়লেটি
ইস্যুতে-
বড় মানুষের মতো
ভাব
অনেক কিছুতে!
গালেহাত-
শুয়ে থেকে
চোখ
রাখে পেপারে
মনে
হবে কাগজের
সব পড়া সে পারে
এ বয়সে এ রকম
ভঙ্গিমা
কে পারে!.
হাইস্কুলের বন্ধু
.
আমার
"কাজী আজহার আলী
হাইস্কুলের
" বন্ধু যারা-
মুখ
লুকিয়ে থাকিস না রে
জলদি
করে দে ইশারা!
এই যে অামি বিদ্যালয়ের
পূর্বদিকে,
আমতলাতে-
হারানো
দিন আসবে কবে,
বসে
আছি অপেক্ষাতে !
কাঁঠালচাঁপা,
কামিনী ফুল
গাছ
দুটোকে দেখি না আর
!
কোথায়
গেল জগ্রুদাদা-
নৈশকালীন
পাহারাদার!
সেই
অতীতের বন্ধু যারা-
কেউ
হাঁটে না সামনে দিয়ে!
আসে
না কেউ দুই-চার
আনার
বাদাম-বুটের ঠোঙা নিয়ে!
কোন্
আঁধারে ? কই হারালাম ?
ছাত্রজীবন,
বাল্যবেলা-
সঙ্গি-সাথী যে-যার
মতো
কখন-কবে ছাড়লো খেলা!
অনেক
সাথীর নাম ভুলে যে'
হাতরে
বেড়াই স্মৃতির মাঝে-
রাস্তাঘাটের
মোড়ে মোড়ে,
জীবনপাতার
ভাঁজে ভাঁজে!
মিষ্টভাষী
শিক্ষকেরা
কই যে গেছেন অভিমানে
!
সকল
গুরুর বিরহসুর
বেজে
ওঠে কানে কানে!
আয় রে তোরা, খুঁজে
দেখি,
কে,
কি, কবে হারিয়েছি-
কতটা
পথ পাড়ি দিয়ে
কোথায়
এসে দাঁড়িয়েছি !
রেলগাড়ি
.
রেলগাড়ি
রেলগাড়ি
যাও
তুমি কার বাড়ি-
সে বাড়িটা কদ্দুর ?
অর্ণব
ও অনীকের
নানাবাড়ি
যদ্দুর-
যাবে
নাকি তদ্দুর ?
.
রেলগাড়ি
রেলগাড়ি
মেলগাড়ি
মেলগাড়ি-
তুমি
করো লাইনে
লক্কর
ঝক্কর,
আমি
পড়ি প্লে'তে
অক্ষর
টক্ষর !
শনিবারে
ইশকুল চলবে-
তুমি
গিয়ে তাড়াতাড়ি
অর্ণব
ও অনীককে বলবে !
..................................... .............................................................................
মানবতার বন্ধু
.
হে পুরানো, গৌরবর্ণ
অট্টালিকা-
বাড়ি
পাহারাতে,
জড়সৈন্য-
রাজ্য-জমিদারি,
শত শত বর্ষব্যাপী-
সাক্ষী
আজো তারি !
থেকো
সাক্ষী-
আরো
বহুকাল
রেখো
ধরে
ইতিহাসের
হাল ।
আছি
লক্ষ-কোটি প্রজা
রাজা
থেকে দূরে-
ঠিকানা
কী ? অল্পস্বল্প
ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র কুঁড়ে
সর্বঘরে
সুখ-দু:খ,
স্বপ্ন
রাখা মুড়ে !
স্বপ্নগুলো
শক্ত-কঠিন, ইট-
দন্ত
ভাঙে
উই-পতঙ্গ, কীট !
ছদ্মবেশি-স্বার্থান্বেষী-
তদ্দ্বারা
শাসিত
কুশাসনে
অস্থিমজ্জা
সর্বদা
কম্পিত
শিরা-উপশিরা দ্রোহ-
রক্ত
প্রবাহিত !
সামর্থ্য
কার,
তুলে
একটি হাত !
বে-ইনসাফে
করবে
প্রতিবাদ!
বজ্রকণ্ঠে
মহাবীর
ভাষণ
দাগাল!
ঘুমন্ত
বাঙালি, ডেকে
জাগাল,
ওঠাল !
অনন্ত
বৈষম্য, দৈন্য
দুর্দশা
পাল্টাল !
কণ্ঠ'টি কার ?
নেতা
শেখ মুজিব-
মানবতার
সজন
সে, পার্থিব!
টমটম
কালবোশেখি
আকাশ দেখি
কলো মেঘে থমথমে
শহর'টা চাই
হাত-পা নাচাই
ছন্দতালে- ঝমঝমে ।
শপিংমলে
চা-স্টলে
ব্যবসা চলে রমরমে ।
তাক্ ধিনা ধিন্
যাই উদাসীন
সদরঘাটে, টমটমে ।
দুষ্ট যারা
দিচ্ছে ভাড়া
দু-তিন টাকা কমকমে ।
.....................................................................................
অন্ধকারের সেলফি
মিরপুরে এক পুকুরপাড়ে
সেলফি তোলা অন্ধকারে
ছবির মাঝে আছি আমি
ভেবে দেখো কী পাগলামি-
চিনতে পারে কে আমারে ?
পাশেই ছিল গাছগাছালি
বনের পশু পাখপাখালি
পাচ্ছো তা কি দেখতে তুমি?
কী অপরূপ বনভূমি !
পুরো ছবিই কালি কালি!
.....................................................................................
রমজান মাসের দান
রোজামাসে একটাকা দান
অনেক টাকার সমান
সুযোগ বুঝে আখেরাতের
মাল-সামানা জমান
দুনিয়াবি সব আজেবাজে
অপখরচ কমান
রঙ্গ করার নফ্স দানব
এই মাসেতে দমান !
আমলনামায় ইচ্ছেমত
নেকীর বোঝা বাড়ান-
মিথ্যে মায়া জিন্দেগিটার,
ছোটখাট বাস্তভিটার-
কখন হঠাত্ শ্বাস'টা ফেলে
সবকে ছেড়ে হারান
কবর দেশে একলা গিয়ে
শূন্যহাতে দাঁড়ান !!
২
একটা করে যাবে রোজা
হালকা হবে গুনার বোঝা
নেকির বোঝা বাড়বে-
ইবলিশেরা হারবে!
.....................................................................................
মহি নানার হাঁস
মহি নানার হাঁস-
লকডাউনে বের হয়েছে-
বাইরে খেতে ঘাস !
পুলিশ যদি টের পেয়ে যায়
একটা দেবে বাঁশ।
চৌদ্দ দিনের 'কোরিন্টিনি'
ফাইল করে পাস
খাঁচায় ভরে আদর করে
খাওয়াবে বাতাস !
.....................................................................................
চুনোপুঁটি
আমরা চুনোপুঁটি
ওহে বোয়াল, কেমন করে
ধরব তোমার টুটি!
শরীর যে দুর্বলা-
বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে
দূরে দূরে চলা !
.....................................................................................
মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন
ট্রেন চলেছে- ট্রেন চলেছে বনবনানী, গ্রাম ফুঁড়ে
দর্শনা পার হবে কত নদনদী-খাল পথ ঘুরে !
ট্রেন'টা যতই এগোচ্ছে
ততই গতিবেগ 'হচ্ছে' !
সন্ধ্যানাগাদ পৌঁছে যাব কোলকাতাতে- চিৎপুরে !
.....................................................................................
ভালো মানুষ
লোকটা খুবই ভালো-
মিষ্টি মিষ্টি ভাষাটা তার
গোছালো গোছালো !
আল্পস্বল্প গল্প করে
মিতালি পাতালো
পাশে বসে রম্যরসে
সবাইকে মাতালো !
যে বাচ্চাটা কাঁদতেছিল
ভাব করে হাসালো
দুষ্টু যারা- তাদেরও সে
কৌশলে শাসালো !
তিক্ত কথা মধু মেখে
সহজে গেলালো
ভিন্নমতি ছেলে-মে'কে
একত্রে মেলালো !
লোকটা খুবই ভালো-
সদালাপী কাকে বলে
আচারে বোঝালো !
.....................................................................................
লোকহীন লোকালয়
বায়ু বয় শনশন
খাঁ-খাঁ রোদ, গনগন,
লোকালয় লোকহীন-
রেলওয়ে জংশন!
পৃথিবীর চারদিক
করোনার বিস্তার
খোঁজে সব যার-যার
নিরাপদ-নিস্তার !
বিপদের সংশয়
অবিরাম ধাক্কায়-
জনগণ সাবধান,
ঘরে ঘুরপাক খায়!
.....................................................................................
রেলগাড়ি
রেলগাড়ি রেলগাড়ি
যাও তুমি কার বাড়ি?
সে বাড়িটা কদ্দুর?
অর্ণব ও অনিকের
নানাবাড়ি যদ্দুর?
যাবে নাকি তদ্দুর ?
.রেলগাড়ি রেলগাড়ি
মেল গাড়ি মেল গাড়ি
তুমি করো লাইনে লক্কর ঝক্কর
আমি পড়ি প্লে-তে অক্ষরটক্ষর
শনিবারে ইস্কুল চলবে-
তুমি গিয়ে তাড়াতাড়ি
অর্ণব ও অনিককে বলবে !
.....................................................................................
দুর্বল
পয়সাকড়ি নাই বলে
বস্তিবাসী, তাই বলে
ডাকে না কেউ ভাই বলে
মনে মনে
আচরণে
করে কেবল ঘৃণা
ঠিক কিনা- ঠিক কিনা !
ক্ষমতাহীন, তাই বলে
সকলে দুরছাই বলে
ওপরে লোক নাই বলে
এ দুর্গতি,
পদোন্নতি,
চাকুরি পাচ্ছি না
ঠিক কিনা- ঠিক কিনা?
জোর- বাহুবল নাই বলে
শান্তিপ্রিয়, তাই বলে
সম্মানে ভয় পাই বলে-
দস্যু দ্বারা
ভূমিহারা !
মামলাতে পারি না
ঠিক কিনা- ঠিক কিনা?
.....................................................................................
নবীন লেখক
খুদ-নগণ্য
খ্যাতির জন্য-
বেজায় 'ব্যস্ত' হইলাম
লিখার লাইগা
রাত্রি জাইগা
মশার কামড় সইলাম !
কি স্বাদ পাইয়া
কাম ফালাইয়া
এ কোন লাইনে আইলাম ?
সব হারাইয়া
বই ছাপাইয়া
কেমন ধাক্কা খাইলাম !
বিক্রি হয় না
কেউ তা লয় না-
খবর-টবর লইলাম
বাধ্য হইয়া
কিন্না লইয়া
নিজেই পাঠক হইলাম (?)
মনের শান্তি
কাটছে ভ্রান্তি
কাব্যচর্চা কইরা -
হইব নি:স্ব
ভুলবে বিশ্ব
যখন যাইব মইরা !
.....................................................................................
মহারাজ
হাঁটছি গাধা-
সামনে মুলো!
কেউবা দেখি
ভাঙা পুলও!
হারাচ্ছি কেউ
দুটি কূলও!
দৃষ্টি কারো
করছে ভুলও,
দুটো কানে
তালা-তুলো-
দিচ্ছি তবু
পরকে ধুলো!
হচ্ছি কারো
চক্ষুশূলও !
নড়ছিনা তাও
কেউ একচুলও!
যে-যেখানে বসে আছি আজ-
সবাই ভাবি, আমিই মহারাজ!
....................................................................................
নানাকাহিনী
ছেলে-মেয়ের দেইনি বিয়ে
এটা সবার জানা
তবুও সব দেখা পেলেই
ডাকে নানা নানা !
এই বিষয়ে কদিন থেকে
চিন্তিত একটানা
নিজে নিজে মনে মনে
হচ্ছি ফানা ফানা !
গিন্নিকে তাই চুপে চুপে
বললে ব্যাপারখানা-
ও বলে কী, তোমার এখন
চুলদাড়ি পাকা না ?
.....................................................................................
চোর তাড়ুয়া
রাতে হঠাৎ হঠাৎ
শব্দ শুনি খটাৎ খটাৎ !
কীসের আওয়াজ-কিসের আওয়াজ !
শয়ন থেকে উঠি-
আস্তে আস্তে বেড়ালপায়ে
বারান্দাতে ছুটি !
.ঝাপসা ঝাপসা অন্ধকারে
মনের ভয় ও সন্ধ বাড়ে !
দেখতে পেলাম পাশের বাসায়
চোর এসেছে দুটো-
চলছে তাদের তালা ভাঙা
দরজা কাটাকুটো !
.বুকে অনেক সাহস করে
ভীতগলায় জোরেশোরে
বলছি যখন, কে-রে তোরা-
কে-রে ? কে-রে? কে-রে?
অমনি দু'জন দৌড়ে পালায়
হাতুর-বাটাল ছেড়ে !
.....................................................................................
নাম সমাধান
নাতির কি নাম দেবেন নানা
চিন্তা করে না-পান
অভিধানেও নাম খোঁজেন, আর
মাঝে মাঝে চা খান!
যে-নাম হবে মিষ্টি-মধুর
লোক দেবে স্বীকৃতি
স্কুলে যে নামখানিতে
ঘটবে না বিকৃতি-
এমন একটা নাম পেতে চান তিনি
হবেও না যে নামটা বিকিকিনি!
যেমন ধরো, নামটা কারো 'বুলেট'
দুষ্ট যারা, পাল্টে দিল 'টু-লেট' !
সমস্যা এইখানে-
নামের ভেতর অনাম ঢুকে
হারায় নামের মানে !
নাতির নামটা দেবেন না তাই 'খোকা'ও-
মূর্খ যারা, ভাবতে পারে
বাচ্চা বোকাটোকাও ।
নানার এসব যুক্তি শুনে
নানি বলেন, থামো-
ছন্দমিলের দ্বন্দ্বে গেলে
পাবে না ঠিক নামও !
এই যে দ্যাখো
আমার নামটা 'আঁখি'
আঁখির সাথে পাখি মেলে
'রাখি' মেলে
মেলেও 'মাখামাখি ।
ছড়ায় ছড়ায় বলতে পারো
পাবদা পুঁটি-টাকি
ঝাঁকাঝাঁকি-ডাকাডাকি
কিংবা চাখাচাখি !
তোমার নামেও ছন্দ হবে-
আবুল বাকি- ফাঁকি
তাই বলে কি আমরা দুজন
নামছাড়া কেউ থাকি ?
আসল কথা নামেতে নয়-
মানুষ বড় গুণে
'লোকটি ভালো 'সবাই বলে
গুণের খবর শুনে ।
একটা ভালো অর্থ দেখে
নাম রেখে দাও নাতির
গুণ দিয়ে সে করবে সেবা
সমস্ত দেশ-জাতির ।
.....................................................................................
ছোট্ট দুকনা কতা
বিসমিল্লাহ বিসমিল্লাহ কয়া ন্যাকা কল্লেম শুরু
সালাম ও পেন্নাম কল্লেম- হামার যারা গুরু !
চ্যাংড়া প্যাংড়া ময়-মুরুব্বি, শোনেন সর্বজনা
ছোট্ট একনা পুঁথি বাহে কত্তিছি বর্ণনা !
তোমরা যারা বৈদ্যাশ খাটো দ্যাশের মায়া ছাড়ি
তোমাহেরে কতা কয়খান খুব বেশি দরকারি !
পত্তম নম্বর কতা হৈল, তোমরা যেঠেই যাও
সেঠি যায়া মাইনষের সাথে কৈও দ্যাশের আও !
তোমার জেলাত কোনঠে কোনঠে দ্যাকার কী কী আছে
গপ্পে গপ্পে কয়া দেইও অন্য মাইনষের কাছে!
জ্ঞানী গুণীর জ্ঞানের বাণী জানাইও সগলাকি
ভালো খবর প্রচার কৈরো, মন্দগুলা ঢাকি !
দ্বিতীয়ত: সবাকে মুঁই জানাচ্ছোম মিনতি
এমন চিন্তা করবা না, যা নিজ এলাকার ক্ষতি !
অল্পেএ্যানা ভুলের জইন্যে বেজায় ক্ষতি হয়
কতাকোনা দেলের মদ্যে থুইও মহাশয় !
দুনাত হামরা বাঁচি থাকমো ক্যাডা কয়টা দিন-ই
সগলেরে সগলাই যেনো বন্ধুর মতোন চিনি ।
.....................................................................................
উনিশ সালের বানোত্
ডুবলো বাহে আবাদশুবাদ
উনিশ সালের বানোত্
হাঁটুপানি ঝটকা দিয়া
উঠলো যে মোর -কানোত্ !
কাপড়াচোপরা সতোত্ ভাসি-
গাও হৈল মোর উদাম
ইলিপ দিবে ক্যাংকরি মোক ?
ডুবলো বুজি গুদাম!
গাইবান্ধাত্- ডিসি সাবের
ঘরের গোড়োত্ পানি-
দুকান-একান নাও গেলি সোগ
কচ্ছে টানাটানি!
কোনঠে কেডায় কি খাচ্চে, তার-
খবর কেড়ায় আখে-
কোলজ্যা কাঁপে ছৈলপোয়াতির
বানের পানির পাকে !
কাঁচা-পাকা সড়ক, বিরিজ-
চামছেলা-পাওভাঙা
মাইনসে এনা উকট্যা বেড়ায়
এললাইনের ডাঙা!
কতিছে ক্যাও,গজব বাহে!
আল্লাহ বেজার হোছে-
ক্যাও কতিছে, বান দিয়া তাঁই
জমিনগুলাক মোছে!
কেছো বছর চাষের পরে
দুব্বলা হয় মাটি
গোসল দিয়া, পলি দিয়া
মাটিক করে খাঁটি!
ম্যালা ম্যালা অত্যাচারোত্
ভিঁ-হয় অনুর্বরা-
বন্যা হলি, বিস্টি হলি
পাক হয়া যায় ধরা !
.....................................................................................
ফাঁকির বিয়া
পলের পালা বড় দেখি
বেটিক দিলা বিয়া
দেখলা না তো পাড়ার মোদে
এনা খবর নিয়া !
পলগুলা সোগ কেনা বাহে!
নক্ষট্যাকা দেনা বাহে!
আলস্যা ছ্যারা, বেটিছোলোক্
ভাত দিবে কী দিয়া !
চতুর্মুরা না-পুছা ক্যা
ছোলোক দিলা বিয়া?
ভরটা দিনই চ্যাংড়া খ্যালে তাস
জুয়া'তি তাঁই হোছে সব্বনাশ !
ভাবার্থ :
(চালাকি করে খড় কিনে এনে বড় পালা দিয়ে রেখেছে; যাতে কনের বাবা মনে করেন, ছেলের অনেক জমিজমা আছে ! কিন্তু জনৈক গ্রামবাসী ব্যাপারটা জানেন এবং মেয়ের বাবাকে বলে দেন; ছেলে বেকার, জমি নেই, উপরন্তু লক্ষ টাকা দেনা আছে! জুয়া খেলে সব শেষ করেছে! আশেপাশে জিজ্ঞেস না করে ওই অলস-অকর্মা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি।)
.....................................................................................
মোরগের ডিম
কে বলেছে, কার বাড়িতে-
মোরগ পাড়ে ডিম
সেই খবরে নানা'র গায়ে
রক্ত হলো হিম !
পুরুষ জাতি বাচ্চা দেবে
কী করে সম্ভব ?
এটা যারা রটিয়েছে-
ভন্ড , শালাসব !
খবরখানার আগাগোড়া
পুরোটা গুজব!
.....................................................................................
আইসো তুমি
চ্যাংড়া তোমার কচ্চে হামার
গাইবান্ধাত্ বিয়া
শোকোরবারে আইসো বাড়িত্
বৌমা'কোনাক্ নিয়া !
ভাত খিলামো তেলেনবিলের
ট্যাংরা-পুঁটি দিয়া
সগলে হামরা ঘুরমো বিলোত্
নায়োতো চড়িয়া-
আইসো তুমি -আইসো তুমি
বৌমা'কোনাক্ নিয়া।
তোমার ব্যাটাক্ দ্যাখোম্ না মুই
ম্যালা বছর হোলো
কেও দ্যাখেনি তোমাহেরে
হামারো ছোলপোলও-
নাতি-পুতিক না দেখি, মোর
বাপ-মা'ও যে মোলো !
উদিংক্যা মোক তোমার ভাবী
এল্যা কতাই কোলো-
আইসো তুমি -আইসো তুমি
দেখপে হামার ছোলও ।
ভাবার্থঃ
(তোমার ছেলে আমার গাইবান্ধায় বিয়ে করেছে । বৌমাকে নিয়ে শুক্রবারে বেড়াতে এসো । তেলিয়ান বিলের তাজা ট্যাংরা পুঁটি মাছ খাওয়াব, বিলে নৌকায় চড়ে বৌমাসহ সবাই ঘুরে বেড়াব।
তোমার ছেলেকে বহু বছর হলো দেখিনি, তাছাড়া আমার ছেলেপেলেও তোমাদের কাউকে দেখেনি! নাতি-পুতি না দেখে আমার বাবা-মা'ও মারা গেছেন! পরশু দিন তোমার ভাবী দু:খ করে এসব কথা বলেছে! তুমি এলে আমার ছেলেপেলেও দেখবে এবং পরিচিত হবে !)
.....................................................................................
শরতের ফ্রি অফার
বোনারপাড়া স্টেশনের
খুব নিকটে, দখিন পাশে-
দেখতে পাবে গোটাকয়েক
কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ আছে !
ভাদ্রমাসের গরমেতে
কারো কপাল ঘামলে
একনিমিষে স্বস্তি পাবে
সেইখানেতে থামলে!
বাতাস পাবে ঠাণ্ডা, ঝিরঝিরি-
সব পথিকের জন্য সেটা ফ্রি!
হাইস্কুলের সামনে আছে
একটা বড় পুকুর
পুকুরপারেও দেখবে ফ্রি
শরৎকালের দুপুর!
.....................................................................................
ট্রাফিক জ্যাম
ডানের গাড়ি বামে থামে
রাস্তা করে বন্ধ
বামের গাড়ি পেছন দিকে
হারায় গতি-ছন্দ !
যাত্রী থাকে আটকে-
এই কথাটা কানে কানে
বলব বড়লাটকে!
সিগন্যালে যে' হোঁচট খেয়ে
সব থাকে গালফুলে-
সবুজ বাতি ক'বার জ্বলে
ট্রাফিকে যায় ভুলে!
যাত্রী করে কষ্ট-
একইসাথে এ কথাটাও
বলব আমি পষ্ট!
....................................................................................
রাঘবপুরের ভূত
বোনারপাড়া কলেজ থেকে
অল্প দূরে
রাঘবপুরে
ফকির পাড়ার বাঁশবাগানে
ভূত ছিল যে কতো-
গভীর রাতে তাদের নাকি
রঙ-তামাশা হতো!
.
সে-জঙ্গলেই বাড়ি করেন
আজহার আলী চাচা
কী দু:সাহস অন্ধকারে
ভূতের সাথে বাঁচা !
সেখান থেকে মাইল খানেক
পশ্চিমে উত্তরে
কোন সাহসী কবে কখন
মেরেছে ভূত ধরে-
জায়গাটাকে
সব বল "ভূতমারা"-
সে-স্থানেও এখন অনেক
লোক বসতি, পাড়া !
বনবাগানে এক সমানে
হচ্ছে বসত ঘর
ভূতের সাথে বনের পশু-
পাখি দেশান্তর!
.....................................................................................
ছন্দপ্রলাপ
সেই ছেলে কই থাকে
কে তার খবর রাখে ?
ভালবেসে ছ্যাঁক খেলো
পথেঘাটে ঠ্যাক খেলো !
কত টকঝাল খেলো
কত জঞ্জাল পেলো !
কেউ বলে 'চাষা' সে
শেখে নাই ভাষা সে !
ফাঁক পেলে দোষ খোঁজে
'গুণ' দেখে চোখ বোজে !
কিছু লোক বলে, ভালো-
মনে তার জ্বলে আলো !
বিদ্রোহী কারো মতে
শত্রু যে- তারও মতে-
কারো কারো মতে এই,
আছে সোজা পথে সেই !
পাছে লোকে কে কী বলে
শুনে তার লাভ নেই
হ্নদয়ে বেদনা জমে
রাখার স্বভাব নেই !
''ছেলেটার লেখা ভালো''
অনেকেই বলে তাই
চাকুরির ফাঁকে ফাঁকে
কলমটা চলে তাই !
ছিটেফোঁটা জ্বালাতন
তাড়া করে সারাক্ষণ
তবু খুশি থাকে সে
মুখে হাসি রাখে সে !
মানুষের জন্য সে
সদা কর্মন্য সে-
কে তা মনে করে বলো ?
হিসেবে কে ধরে বলো ?
সেই ছেলে আমি এই-
যার কোনো দাম-ই নেই !
.....................................................................................
হাউসের বিয়া
হাউস করি ব্যাটাক তুমি
এলাই দিলা বিয়া
ক্যাংকরি অঁই হাঁটপে বাহে
জোয়াল ঘাড়োত নিয়া?
একনি ছ্যারার কমোর ব্যাঁকা
কোমলাবাঁশের যেংকা ঢ্যাকা !
পাবে কী অঁই বউ চলাবার
কামলাকিষাণ দিয়া?
হাউস করি ব্যাটাক তুমি
এলাই দিলা বিয়া ?
নগদ কেছো ডেমেন পায়া
খুশি হোছো ম্যালা
বিয়াই-বিয়ান একঠে হয়া
হাসিতি গ্যালগ্যালা !
দুদিন বাদে ছোল-পোয়াতি-
তারোক মনে হোবে হাতি !
কী খিলাবা, কী পেন্দাবা ?
বুজবা তখন ঠ্যালা-
নগদ কেছো ডেমেন পায়া
খুশিতি গ্যালগ্যালা!
পরার ট্যাকার বাজারসদাই
কবাটা দিন খাবা
জিবকোনা যেই খালি হোবে-
সেই সোমে পস্তাবা !
এন্নেহেনে ভ্যাগোত পোলে
মাঙনা আসি ক্যাডায় তোলে !
ঠ্যাকাঠেকিত ন্যাম্পো দিয়া
উটক্যা কাকো পাবা ?
ব্যাটা-বৌ'য়ের খরচপাতি
ক্যাংকরি চলাবা ?
.....................................................................................
ঈদের হাটে
নাতি রে- তোর যে-গরুটা বুড়ো
যতই খাওয়ায় তৃণ-ভুসি কুঁড়ো
লাভ হবে না, হবে শুধু ক্ষতি
দুধ দেবে না সামান্য একরতি !
টানবে নাকো একটুখানি হাল'ও-
তারচে ওটা বিক্রি করা ভালো!
ঈদের হাটে পয়সা দুটো পাবি
মরে গেলে পরে যে পস্তাবি !
২
হাল টানে না, দুধ আসে না
যাচ্ছে খাওয়াখরচ
এমন গরু ঠিক সময়ে
বিক্রি করা ফরজ-
এই কথাটা বোঝেনা যে সাথিরা
পাশেরবাড়ির অবুঝ সবুজ নাতিরা !
.....................................................................................
হাসির কথা
হাসি নিয়ে রোজ শুনি কত ধারাভাষ্য
ভাষ্যের ভেতরেও পাই নানা হাস্য !
কবিতায় চাঁদ হাসে পূর্ণিমা রাত্রে
এই কথা শুনে হাসে গণিতের ছাত্রে !
চাবুকের চড় দিলে হাসে নাকি ঘোড়ারা
জোয়ান আছাড় খেলে হাসে ছুঁড়ি ছোঁড়ারা !
মানুষ না দানবের হাসিটা বিরক্তি
হাসি দেখে থেমে যায় হাসবার শক্তি !
দমফাটা বমফাটা কাঠফাটা হার্টফাটা
মাঠফাটা হাসিতে
অনেকের হার্টবিট নিমিষেই বেড়ে যায়
একশত আশিতে !
নাটক বা সিনেমায় ভিলেনের হাসি তাই
সোনামনিদের কাছে দাম নেই আশি পাই !
কিছু কিছু লোক আছে অকারণে হাসি দেয়
হাসি চেপে রাখতেই কেউ ছোট কাশি দেয় !
দাঁতপড়া বুড়োদের হাসি খুব মজাদার
গালভরা খুশিভাব কী দারুণ রসাদার !
দাদাদাদী নানানানী সে হাসির রূপকার
নাতিপুতিদের মনে শালশার উপকার !
হা-হা,হি-হি,হো-হো করে হাবাগোবা হেসে যায়
কৌশলী হাসিতেও কেউ কেউ ফেঁসে যায় !
গম্ভীর মিশ্রিত মৃদু হাসি জ্ঞানীদের
সে রকম হাসি দেখি ধার্মিক-ধ্যানীদের !
শিশুদের হাসিতেই ভেজালের লেশ নেই-
কী মধুর নির্মল যা লেখার শেষ নেই !
সব চেয়ে দামী হাসি বাবা-মা'র মুখেতে
সে হাসি সুখ আনে ছেলে-মে'র বুকেতে
হাসি দিয়ে এইবার দেই পরামর্শ
সময় বুঝেই করো আনন্দ-হর্ষ !
.....................................................................................
দেওর-ননন
তোমার বাড়িত্ বেটিকছোলোক
দ্যা-পাটামো আর ?
দেকি আচ্চে দেওর-নন্দের
ক্যাংকা ব্যবহার ।
নননকোনা ডেমনি, ও-মাঁই
আওকোনা কী ঝাল
নয়-কতাতি ভাবী'র সাথে
নিত্তি পারে ফাল ।
দ্যাওরাকোনার দ্যামাক চড়া-
পিত্তিকতাত্ ভুল
বিনিদোষে পত্তি 'ছেঁড়ে'
পরার বেটির চুল!
তুমি থাকতে তোমার বউ'য়োক
ঝাঁটা দেখায় তাঁই
ওংকা ব্যাদোব চ্যাংড়া হামার
গুষ্টি দ্যাকে নাই।
ক্যাংকরি ছোল ওত্তি থাকে
চিন্তা করি কও ?
অত্যাচারের মোদে বেটিক
দ্যা-পাটাবার নঁও ।
.....................................................................................
বই মেলা শেষ
বইমেলা শেষ-বইমেলা শেষ
হিসেব মিলাও শিঘ্রি
কয়খানা বই গেছে অনুদান
কয়টা হয়েছে বিক্রি !
লাভ লোকসান কত পরিমান !
চিল নিয়ে গেছে কার কার কান !
বই ছেপে কার স্বপ্ন শ্মশান !
সাকসেস কার ফিকিরি !
এটাও মিলাও, কোন বই পেল
সেরা বিক্রির ডিগ্রি !
.....................................................................................
দুরাশা
ভেবেছিলাম, কবি আমি
অন্যতম সেরা-
লেখা পড়ে কমেন্ট করে
প্রিয় সুহৃদেরা ।
জ্ঞানীরা কেউ এড়িয়ে যান
লাইক মেরে বেড়িয়ে যান
আমার টাইম লাইন-
তদুপরি আশা করি
করব আমি শাইন !
বইমেলাতে ঘুরে বেড়াই
ব্যাগ ঝুলিয়ে কাঁধে
আটকে না কেউ আমার বইয়ের
ক্রেতাধরা ফাঁদে!
গান-কবিতা ছড়ার পাঠক ?
তারা তো প্রায় সবাই আটক
ফেসবুকে ফেসবুকে-
নেটের বদৌলতে ও-সব
সবার মুখে মুখে ।
প্রতিবছর স্বপ্ন দেখি
পদক বুঝি পেলাম
পাওয়ার আগেই গুরুজনের
চরণে দেই সেলাম !
কিন্তু না গো, বিধি যে বাম
তালিকাতে থাকে না নাম-
পদকটা যায় দূরে
হতাশ হয়ে পড়ে থাকি
চরকি ঘোরা ঘুরে !
বন্ধুরা কেউ সান্ত্বনা দেয়,
ধৈর্য হারাস না রে
পদক'টা নিক আপাতত
ওপরতলার স্যারে।
তারপরে তোর সম্মাননা
ছেলে-মেয়ে, আপনজনা
গ্রহণ করে, তোকে
দিয়ে দেবে গোরস্থানে-
শ্মশান , পরলোকে ।
.....................................................................................
টিকটিকির বিচার
যা শুনেছ, ঘটনা সব ঠিকই-
সিংহমামা মেরেছে টিকটিকি!
লালকালিতে করেছে হেডলাইন,
খবরপাড়ার যত্ত সাময়িকী !
.রাজাসনে বীরত্বে সে সেরা,
বলছে এটা অবুঝ বালকেরা!
খেতাব দেয়া উচিত কিনা, ভেবে-
কেতাব খুলে বসেছে ভাগ্নেরা !
মাকড়সা ভয়ে দিশেহারা
ঘাড়ে এসে কখন পড়ে পারা!
বিপদ থেকে কী-যে আরাম পেল-
হতচ্ছাড়া, হিংসুটে মশারা !
.....................................................................................
মামার গল্প
সবার মামাই ঢাকায় থাকেন
নিজের নিজের গাড়ি হাঁকেন!
রুমির মামা মস্ত গায়ক
পরিচিত মডেল নায়ক !
শিমুর মামা- সে ক্রিকেটার
ব্যাটিং যা-হোক, বোলিং বেটার ।
প্রভার মামা চাকরি করেন
আবার তিনি ল'তে পড়েন!
কী কী আছে শশীর মামার-
হাঁস-মুরগী-গরুর খামার!
রুমার মামা ভাবছো বেকার?
তিনি ভালো ঘড়ির মেকার,
তারও একটা গাড়ি আছে,
দেখলে আরো অবাক হবে
পুরাণ ঢাকার সূত্রাপুরে
পাঁচতলা যে বাড়ি আছে!
.....................................................................................
ফাঁকির বিয়া
পলের পালা বড় দেখি
বেটিক দিলা বিয়া
দেখলা-না তো গাঁও'ত আসি
এনা খবর নিয়া !
পলগুলা সোগ কেনা বাহে!
নক্ষট্যাকা দেনা বাহে!
আলস্যা ছ্যারা বেটিছোলোক্
ভাত দিবে কী দিয়া !
চতুর্মুরা না-পুছা ক্যা
ছোলোক দিলা বিয়া?
ভরটা দিনই ছ্যারায় খ্যালে তাস
জুয়া'তি তাঁই হোছে সব্বনাশ !
ভাবার্থ:
(ছেলের অনেক জমিজমা আছে ! খড়ের গাদা বড় দেখে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু গ্রামের লোক গোমর ফাঁস করে দেয় । খড়গুলো সব কিনে আনা ! অলস ছেলে জুয়া খেলে জমিজমা বিক্রি করে এখন লাখ টাকা দেনাদার হয়ে আছে । সে বউকে কীভাবে ভরণপোষণ দেবে ? চারপাশে জিজ্ঞাসাবাদ না করে এখানে মেয়ে বিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি ! এটা বুঝতে পেরে মেয়ের বাবা এখন পস্তায় ।
ছ্যাঁচড়া কাস্টমার (বুড়োতোষ ছড়া)
মোর কাছে অঁই বাকি সদাই নিয়া
একন হাঁটে আরেক ঘাটা দিয়া
এক্কে পুরা ছ্যাঁচড়া-
দেওয়ার সোমে বোজোম নাই অঁই,
এইংক্যা হোবে ঘ্যাঁচড়া !
অল্পেএনা তবিল নিয়া
ব্যবসা করোম মুই-
কও তো বাহে, নগদ ট্যাকাত মাল কিনিয়া
ক্যামনে বাকি থুই?
ট্যাকা না দেক, করেও না তাঁই দ্যাকা
ক্যাংকা করি জানমো ওমার ঠ্যাকা?
মিছা না-গ, সত্যি-
কোটে কোটে ধান্দাতে অঁই
সদাই কেনে পত্তি !
কেডাবান অর মিটা কতাত
নিত্তি বাকি দ্যায়-
চাটিত্ পড়ি দিয়া দিয়া শ্যাষে পুরা
তবিল-ই খিল্যায় !
ভাবকাহিনী:
ক্ষুদ্র দোকানি বলছে, তার এক খদ্দের বাকিতে সদাই নিয়ে এখন অন্যরাস্তা দিয়ে হাঁটে । বাকি দেয়ার সময় বুঝতে পারেনি, সে এমন ছ্যাঁচড়ামি করবে ! অল্পপুঁজির ব্যবসায়ী সে । নগদ টাকায় মাল কিনে বাকি দিয়ে দিনের পর দিন কীভাবে টাকা ফেলে রাখবে? কাস্টমার অন্তত দেখা করে তার সমস্যার কথা বলতে পারত ! কিন্তু তাও করে নি। অথচ, সে অন্য দোকান থেকে প্রায় দিন-ই বাজারসদাই করে। দোকানির সন্দেহ, হয়ত কেউ তার মতো মিষ্টিকথায় ভুলে বাকি দিয়ে দিয়ে ব্যবসার মূলধনই খোয়াচ্ছে ! ]
.....................................................................................
দেওর-ননন (বুড়োতোষ ছড়া)
তোমার বাড়িত্ বেটিকছোলোক
দ্যা-পাটামো আর ?
দেকি আচ্চে দেওর-নন্দের
ক্যাংকা ব্যবহার ।
নননকোনা ডেমনি, ও-মাঁই
আওকোনা কী ঝাল
নয়-কতাতি ভাবী'র সাথে
নিত্তি পারে ফাল ।
দ্যাওরাকোনার দ্যামাক চড়া-
পিত্তিকতাত্ ভুল
বিনিদোষে পত্তি 'ছেঁড়ে'
পরার বেটির চুল!
তুমি থাকতে তোমার বউ'য়োক
ঝাঁটা দেখায় তাঁই
ওংকা ব্যাদোব চ্যাংড়া হামার
গুষ্টি দ্যাকে নাই।
ক্যাংকরি ছোল ওত্তি থাকে
চিন্তা করি কও ?
অত্যাচারের মোদে বেটিক
দ্যা-পাটাবার নঁও ।
ভাবকাহিনী:
কষ্টভারাক্রান্ত হৃদয়ে মেয়ের বাবা-মা জামাতাকে বলছেন, তোমার বাড়িতে মেয়েকে আর পাঠাব না ! সে দেখে এসেছে, তার দেবর-ননদের কী-রকম দুর্ব্যবহার ! দুষ্ট ননদের কথার কী ঝাঁজ, সামান্যতেই সে ভাবীর ওপর হামলে পড়ে ! দেবরের মেজাজ'ও রুক্ষ-চড়া, প্রতিটি কথাই তার আক্রামনাত্নক । বিনা অপরাধে সে দেবর হয়ে প্রতিদিন পরের মেয়ের চুল 'ছেঁড়ে' ! তোমার সামনেই সে মেয়েকে ঝাঁটা দেখায়, অপমান করে ! ও-রকম বেয়াদব ছেলে আমার বংশে কেউ দেখেনি। তুমি-ই বলো, কীভাবে আমি মেয়েকে ঐ জ্বালাযন্ত্রণা'র মধ্যে পাঠাই ? ওখানে আর মেয়েকে পাঠানো সম্ভব নয় ।
পাদটীকা:
কবিতায়, গাঁওগেরামের বউ'দের ওপর চিরায়ত অমানবিক-বেদনাদায়ক অত্যাচারের চিত্র অংকন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ]
.....................................................................................
বজ্জাতের হাড্ডি
মানুষকোনার গিরাত্ গিরাত্
ব্যাহামি-বজ্জাতি
ক্ষতির তালোত্ বসি থাকে-
পিত্তিটা ঘাটাতি ।
উটক্যাপাটক্যা খালি বাজায় ন্যাটা
গাঁওলারা কয়, 'সেই মারানির ব্যাটা' !
অল্পেএনা ন্যাকাপড়া
থাকিল যদি অর-
ইউনিয়নের মানুষগুলার
আছিলো খবর !
মোকদ্দমা- ভ্যানক্যাসে ফ্যালেয়া !
হাড্ডিগুড্ডি খাইলহেনে চাবেয়া।
গাঁয়ের নোকোক্ পিতলাবে অঁই,
থুবে ভেষণ চাপে-
সে-জন্যে অক ন্যাকাপড়া
করায়-ও নাই বাপে !
বাপ ও মায়ে একনা ভালো কামে
শুতি আছে কবরোত্ আরামে!
ভাবার্থ:
সমাজের এক দুষ্টপ্রকৃতির অশিক্ষিত-মূর্খলোকের কথা বলা হচ্ছে । তার শরীরের প্রতিটি গিরায় গিরায় ব্যাহামি-বজ্জাতি লুকানো । সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে অন্যের ক্ষতির চিন্তা করে । এ-জন্যে সমাজের লোকেরা তাকে প্রচণ্ডরকম ঘৃণা করে, মনে মনে অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দেয় । তার যদি সামান্যকিছু লেখাপড়া থাকত, তবে শুধু নিজের গ্রাম কেন, পুরো ইউনিয়নবাসীর খবর করে দিত সে ! এর-ওর সাথে উল্টোপাল্টা মামলা-মোকদ্দমা লাগিয়ে দিয়ে হাড়হাড্ডি চিবিয়ে খেত !
গ্রামের মানুষকে সে অত্যাচার করবে, অশান্তিতে রাখবে, এটা তার বাবা-মা বোধহয় আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ! তাই কী তারা ছেলেকে লেখাপড়া না-শিখিয়ে ভালো কাজ করেছেন ! আর এই ভালো কাজটুকুর জন্যেই হয়ত তারা কবরেও শান্তিতে আছেন! ]
.....................................................................................
বুড়োবুড়ির গপ্পো (বুড়োতোষ ছড়া)
নকডাউনের খবর শুনি
পচ্চিনু ফাঁপরোত্
উদিনক্যা তাই ঘুরি আচ্চোম
বালাসি বন্দরোত্ ।
সেই সোমান্তে দিছি বাহে
বড়বেটির বিয়া
নাতিক নিয়া ঘুচ্চি হামরা
নদীর বাতা দিয়া ।
কাল গেছিলুম বারোকোনা
ছোটবেটির বাড়িত্
দুপ্রে খায়া ঘুন্নু যায়া
সাঘাটা কাচারিত্ ।
এটে-ওটে কত জাগা
ব্যাড়েয়া ব্যাড়েয়া
পরে আচ্চি অটোত্ চড়ি
হাওয়া খায়া খায়া ।
দোনো জাব্দে গপ্পেসপ্পে
টুকুর টুকুর হাঁটি
আজ এনা ব্যাড়াবার গেছি
বোনারপাড়া-বাটি ।
নকুশেডের কাছে যায়া ইতিউতি চাম-
কতো কি আছিলো বাহে, উটকিয়া না-পাম !
গায়েব হয়া গেইছি সোগি,
অ্যালকলোনী-বাবুপাড়ার ঠাট !
চতুর্মুরা দ্যাখোম খালি
মরামরা- ধুয়া ধুয়া মাঠ !
ভাবার্থ:
করোনায় লকডাউনখবরে এতদিন ঘরের মধ্যে বন্দি থেকে তারা খুব ফাঁপরে পড়েছিলেন। গত পরশুদিন তাই বালাসি নৌ-বন্দরে ঘুরতে গেছিলেন। সেখানে তাদের বড়মেয়ের শ্বশুর বাড়ি। নাতিকে নিয়ে যমুনা নদীর তীরে ঘুরে বেড়িয়েছেন ।
গতকাল গেছিলেন ছোটমেয়ের বাড়ি বারোকোনা গ্রামে। সেখানে দুপুরে খাবার খেয়ে সাঘাটা কাচারিসহ অনেক জায়গা ঘুরে দেখেছেন। আসার সময় তারা একটা অটো ভাড়া করে হাওয়া খেতে খেতে বাড়ি এসেছিলেন।
আজ বুড়োবুড়ি টুকটুক করে হেঁটে গপ্পেসপ্পে বোনারপাড়া ও বাটি নামক এলাকা ভ্রমণ করেছেন । কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছেন, বোনারপাড়া রেলওয়ে-লোকোশেড , রেলকলোনী-বাবুপাড়ার আশপাশটা দেখে । সেখানে ভ্রমণপিপাসুদের দেখার মতো দর্শনীয় কত কী ছিল, আজ সেখানে আগেকার স্থাপনার কিছুই নেই ! পুরো এলাকা যেন মৃতপুরী, ধুধু মাঠ ! এ-দৃশ্য দেখে তারা খুব ব্যথা পেয়েছেন, হতাশ হয়েছেন ! ]
কোন মন্তব্য নেই